Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

গল্পেরা জোনাকি তে রীতা চক্রবর্তী

maro news
গল্পেরা জোনাকি তে রীতা চক্রবর্তী

সুখের চাবি

ডাক্তার সেনের সাজেশন মেনে নিয়ে মাত্র দুদিন হল শীলুরা ডালহৌসী এসেছে। এই দুটো দিন সবুজের মাঝে থেকে একটু স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে শাল্মলী। বহুদিন পর আজ মায়ের সঙ্গে কথা বলেছে। আসলে বাড়িতে সারাদিন একা থাকতে থাকতে শীলু কেমন হয়ে গেছে। বাবা মা সকালে যে যার মতো কাজে বেড়িয়ে যায়। যাবার সময় মা ওকে স্কুলের ক্যাবে তুলে দিয়ে যায়। স্কুল থেকে ফিরে লাঞ্চ বক্স খুলে খাবার খায়। তারপর হোমওয়ার্ক করে নেয়। আর মায়ের ফেরার অপেক্ষা করতে থাকে। আগে ফ্ল্যাটের সবাই একসাথে ক্যাম্পাসে খেলত। কিন্তু হঠাৎ একদিন কোনো এক অজানা কারণে বাচ্চাদের খেলা বন্ধ হয়ে গেল। বাবা মা সাথে থাকলে তবেই বাচ্চারা খেলতে পারবে। বাচ্চার দায়িত্ব কেয়ারটেকারের নয়। শীলুরতো বাবা মা কেউ থাকেই না সারাদিন। তাই শীলুর খেলাও বন্ধ হয়ে গেছে। যখন ছোট ছিল তখন স্কুলের সবথেকে চটপটে বাচ্চা ছিল। পড়ার সাথে সাথে খেলাধূলা, ড্রয়িংয়ে শীলুর ছিল খুব আগ্রহ। তখন ওরা ঠাকুরদার সাথে গ্রামের বাড়িতেই থাকত। ঠাকুর্দা মারা যাবার পর বাবা সেই বাড়ি বিক্রি করে দিয়ে কলকাতার এই ফ্ল্যাটটা নিয়েছে। বাবা প্রাইভেট কোম্পানির চাকরি করেন। তাই গ্রামে গিয়ে সম্পত্তি দেখাশোনা করার মতো সময় তাঁর নেই। হয়ত বা ইচ্ছেটাও ছিল না। তাই শীলুকে নিজের স্কুল, খেলার বন্ধুদের ছেড়ে চলে আসতে হয়েছে বাবার কাছে। শীলুর এখন মাত্র সতেরো বছর বয়স। হেসে খেলে বেড়ানোর বয়স এটা। আর পাঁচটা তরুণ তাজা উঠতি বয়সের ছেলে মেয়েদের মধ্যে যেমন হুল্লোরের একটা টেনডেন্সি থাকে শীলুর মধ্যে তেমন কোন আগ্রহ দেখা যায় না। ওকে দেখলে মনে হবে যেন অনেকটা বয়স ধরে নিজের সাথে নিজে লড়াই করে চলেছে। যেন পৃথিবীর তাবৎ পাওনাগন্ডা মিটিয়ে দিয়ে এখন বয়সের ভার নিয়ে বসে আছে একা। ছোটবেলায় শীলু বাড়ির উঠোনে ছোট ছোট গাছ লাগাত। কোথাও কোনো চারা পেলে এনে বসিয়ে দিত ওর বাগানে। অবশ্য অনেক চারাগাছ মা আবার তুলে দিত আগাছা বলে। তবে যেগুলো থাকতো সেগুলোতে যখন ফুল ফুটত তখন ওর মা ওকে ডেকে দেখাত। এখানে এসেও কম্পাউন্ডে দু'একটা গাছ লাগিয়েছিল। কিন্তু যত্ন করা যায়নি বলে সেগুলো বাঁচেনি। মাকে অনেকবার বলেছে টবে করে গাছ লাগানোর জন্য। কিন্তু ঘরদোর নোংরা হবে বলে সেটাও হয়নি। এখানে শীলুর নিজের মনের মতো বলতে কিছুই নেই। একঘেয়ে স্কুল আর বাড়ি আর একলা থাকতে থাকতে কেমন যেন হয়ে গেছে। স্কুলের রেজাল্ট ভালো হয়নি বলে মা খুব বকাবকি করেছে। তারপর নিরুত্তাপ শীলুকে নিয়ে গিয়েছিল ডাক্তার সেনের কাছে। ডালহৌসীতে এসে এই দুদিন কটেজের সামনের ফুলের গাছগুলোর কাছে চেয়ার নিয়ে বসে থেকেছে শুধু। বড় চিনারের গাছগুলোর ওপর হাত রেখে চুপ করে থেকেছে। যেন কতদিন পর প্রিয় বন্ধুর সাথে দেখা হল। কত কথা বলা হয়নি তাকে। তাইতো আলতো হাতের ছোঁয়ায় মনের ভালোলাগাটুকু জানিয়েছে ওদের। শীলুর আজ মায়ের সাথে ঘুরতে যাবার ইচ্ছে হয়েছে। ডাক্তার ওর মাকে এটাই সাজেস্ট করেছিল। বলেছিল - ওকে ছোটবেলার পরিবেশটা ফিরিয়ে দিন। দেখবেন ও একদম ঠিক হয়ে যাবে। আসলে চারাগাছ যেমন মাটি বদল হলে বেঁচে তো যায় কিন্তু ডালপালা ছাড়েনা, ফুল ফল ধরেনা, ভালো না লাগার অসুখটাও তাই। আমরা বড়রা নিজেদের মতো পৃথিবী তৈরি করি বাচ্চাদের কথা ভাবিনা। তাই অনেক সময় একা থাকতে থাকতে বাচ্চারা ডিপ্রেসনে চলে যায়। আর তার ফল হয় মারাত্মক। এইরকম বাচ্চারা কিন্তু আত্মহত্যার পথও বেছে নিতে পারে। নিজের সন্তানকে একটু সময় দিন। ওকে বুঝতে দিন যে ও হল আপনার সংসারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। আপনার ভালবাসাটা ওকে একটু বুঝতে দিন। একটু আদর ওর নিশ্চয়ই প্রাপ্য। ওর মতামতের গুরুত্ব দিন। এটুকুই ওর অসুখের ওষুধ। সংসারে ওরা ভালো থাকলে পৃথিবীতে সবাই ভালো থাকবে।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register