Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

অথ শ্রী উপন্যাস কথা-তে প্রদীপ গুপ্ত - ধারাবাহিক - সপ্তম পর্ব

maro news
অথ শ্রী উপন্যাস কথা-তে প্রদীপ গুপ্ত - ধারাবাহিক - সপ্তম পর্ব

পশমিনা

কাশ্মীর উপত্যকার দৈনন্দিন সমস্যা, রাজনৈতিক ঘাতপ্রতিঘাত ও প্রেমের এক অনুভূতিশীল জীবনালেখ্য।

" তুমি বরং সেই হিমবাহের শরীরে জন্ম নেওয়া বরফশীতল লিডার নদীকে দায়ী করতে পারো। যেখানে শুয়ে থাকা বরফে ঠিকরে যেতো মধ্যাহ্নের অর্কপ্রভ। আর সেই আলোর ছুরি আর শীতল বরফ মিলেমিশে যখন তোমাকে এনে দাঁড় করাতো আমার সামনে তখন আমি ঘায়েল হবো না কেন?

তোমার মনে আছে? তপোবনের মতো শান্ত ছিলো সে বরফে ঢাকা উপত্যকা। সকালের আলো যখন এক সরল শিশুর মতো গড়াতে গড়াতে বরফের কুঁচি শরীরে মেখে তোমার পায়ের পাতায় এসে লুটিয়ে পড়তো তখন কেন জানি না লিডারের বুক ফুলে উঠতো অভিমানে। আর সে তার বুকে জমে থাকা বরফ শীতল জলকে ছুটিয়ে নিয়ে যেতো দূরে -- আরও দূরে যেখানে পাইনগুলো জড়াজড়ি করে আকাশ ছুঁয়েছে।

তুমি বুঝতে নদীর মনের ব্যথা, মাথার স্কার্ফটাকে জড়িয়ে নিয়ে তুমি খুঁজে নিতে তোমার ছোট্ট রূপোলী স্কী জুতো। ছুটে যেতে ওর কাছে, লিডারের তীরে বসে ওর গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে ওকে শান্ত করতে। তোমাকে কখনও বলা হয়ে ওঠে নি, তখন তোমাকে যেন ঠিক সিন্ডারেলার মতো দেখাতো।

সেই লিডার আর তার চারদিকের হিমবাহ আমায় ডাকে। বলে শেষ রামধনু রঙের দিনগুলোকে নিয়ে, সেই হিমবাহের পথ ধরে এগিয়ে গিয়ে মেঘের বুকে ঘর বেঁধে নিতে।

শেষ আলোকময় পথ, আমায় ডাক পাঠিয়েছে। লিডার নদীর রূপোলী জল আমায় ডাক পাঠিয়েছে, বরফের নীচে শুয়ে আমি আমার শেষ স্বপ্নটা দেখবো। তখন আমায় বিরক্ত কোরো না -"

সবাই বৈশরণে গেছে, আমাকে ফেলে রেখে গেছে একা। না, ভুল বললাম, ঠিক একা নয়, আমার সাথে আছে সুন্দরী লিডার। গাড়ির চাকায় চাকায় শোনমার্গ থেকে পহেলগাঁওয়ে আসার পথে ওঁর সাথেই পথ চলেছি। সবাই বলছেন এবারকার মতো এতো বরফ নাকি ইদানিংকালে পড়েনি। চারিদিকে মৌনী পর্বতশৃঙ্গ ধ্যাননিমগ্ন। তাদের বুক চিরে বরফকুঁচি বুকে নিয়ে একেবেঁকে এগিয়ে চলেছেন স্বর্গীয় নর্তকী। সাথে নিয়ে আসা একটা পাতলা রবারের মাদুর বিছিয়ে, আর গাড়ির একটা কুশনে হাত এলিয়ে আধাশোয়া হয়ে মনে মনে সৌন্দর্যের সাধনা করছি, এমন সময় একজন যুবক সামনে এসে সালাম জানালো। --" বাবুজি, আপনি বুঝি বঙ্গাল সে আসছেন? " বলেই ধপাস করে আমার সামনেই বসে পড়লে। পড়নে পাঠানি জোব্বা। সৈয়দ মুজতবা আলির লেখায় এদের পড়নের এই জোব্বা সম্পর্কে পড়েছি। নতুন একটা জোব্বা বানাতে বেশ কয়েক মিটার কাপড় লাগে। আমাদের মহিলাদের শাড়ির থেকেও বেশী কাপড় দিয়ে তৈরী হয় এই পড়নের পোষাক। আমি মাথা নেড়ে সম্মতি জানালাম। আমায় দেখতে তো সেই ভেতো বাঙ্গালীদের মতোই লাগে। কাপড়চোপড় দেখলে অবশ্য সেটা বোঝা যাবেনা। এই যুবক যেরকম তার ট্রাডিশনাল পোষাককে ধরে রেখেছেন, আমরা তো সেসব পোষাক আশাক কবেই শরীর থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়েছি! -- নেহিতো, এরকমভাবে একেলা নদীকা বাজুমে আউর কে বসে থাকবেন বাবুজি! আপলোগ রবিন্দরনাথ টেগোরকো দেশ কি হো। বহত খুশ নসীববালে হো আপ। বলে ফের একবার কপালে হাত ছুঁইয়ে সালাম জানালো। ছেলেটিকে দেখে, ওর পোষাক আশাক আর মাথার কাপড় জড়ানো টুপি দেখে ওকে সাধারণ একজন বলেই ভেবেছিলাম। কিন্তু-- -- তুমি রবীন্দ্রনাথ পড়েছো বুঝি! -- থোড়া বহুত বাবুজি, হামি তো বেঙ্গলী ল্যাঙ্গুয়েজ জানে না, আংরেজী মে ট্রান্সলেট কুছকুছ -- আবারও চমক, কবিগুরুর ইংরাজি অনুবাদ! বলে কি? -- তুমি কোথায় পড়াশোনা করেছো? -- পহেলে তো এখানকার স্কুলে, বাদমে দেলহি কা জেএনইউ সে পোষ্ট গ্রাজুয়েশন কিয়া হ্যায় বাবুজি। মেরে সাবজেক্ট ল্যাঙ্গুয়েজ থা, হামারা কোর্স মে টেগোর থে।

আমি মনে মনে সমীহ করা শুরু করলাম। এরপর ওর সাথে কীভাবে এগোবো ভাবছি এমনসময় ও বলে উঠলো - -- তো চলতে হ্যায় বাবুজি, আপ বৈঠিয়ে আরাম কিজিয়ে। -- না, না, সেকি! তুমি বোসো, এই যে এদিকটায় বোসো। আখরোট খাও একটু - বলে ঝোলার দিকে হাত বাড়াতে যেতেই ও আমার হাত চেপে ধরলো। -- হমারা রোজা হ্যয় বাবুজি, হম তো কুছ নেহি খা পায়েঙ্গে --

-- ( চলবে)

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register