Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

রন্ধনশালার ইতিহাসে পিয়াংকী (পর্ব - ৪)

maro news
রন্ধনশালার ইতিহাসে পিয়াংকী (পর্ব - ৪)

পাকপ্রণালী

মধ্যযুগীয় হেঁশেলে চৈতন্যমহাপ্রভুর প্রভাব এবং তাঁর প্রিয় দুধলাউ "পীত সুগন্ধী ঘৃতে অন্ন সিক্ত কৈল। চারিদিকে পাতে ঘৃত বাহিয়া চলিল।। কেয়াপত্র কলার খোলা ডোঙ্গা সারি সারি। চারিদিকে ধরিয়াছে নানা ব্যঞ্জন ভরি।। দশ প্রকার শাক নিম্ব সুকতার ঝোল। মরিচের ঝাল ছানাবড়া, বড়ী, ঘোল।। দুগ্ধতুম্বী, দুগ্ধকুষ্মাণ্ড, বেসারি লাফরা। মোচা ঘণ্ট , মোচা ভাজা বিবিধ শাকরা।। বৃদ্ধকুষ্মাণ্ডবড়ীর ব্যঞ্জন অপার। ফুলবড়ী ফলমূলে বিবিধ প্রকার।। নব-নিম্বপত্রসহ ভৃষ্ট বার্তাকী। ফুল বড়ী পটলভাজা কুষ্মাণ্ড মানচাকী।। ভৃষ্ট-মাষ, মুদগ সূপ অমৃতে নিন্দয়। মধূরাম্ল বড়াম্লাদি অম্ল পাঁচ ছয়।। মুদগবড়া মাষবড়া কলাবড়া মিষ্ট। ক্ষীরপুরী নারিকেলপুলী আর যত পিষ্ট।।" 'চৈতন্যচরিতামৃত'তে বর্ণিত এই রসময় আহারের বর্ণনা থেকেই প্রমাণ হয় নিরামিষ রন্ধনশৈলীও কতটা সমৃদ্ধ ছিল মধ্যযুগের বাংলায়। উপরের এই ছড়ায় বর্ণিত দুগ্ধতুম্বীই হল দুধলাউ। মহাপ্রভুর অতি প্রিয় তিনটি পদের মধ্যে দুধলাউ একটি পদ। পূর্ব উল্লিখিত চৈতন্যচরিতামৃততে বলা আছে সেই সময় মিষ্টান্ন ভাণ্ডার বলতে বাংলায় রসগোল্লা বা চমচম আসেনি। মুগবড়ার রস, পরমান্ন,ক্ষীর, কলাইডালের পুরি এসবই ছিল সেসময় মিষ্টান্ন'র রকমফের। ' চৈতন্যভাগবত ' অনুযায়ী মহাপ্রভু তার মায়ের হাতের এই রান্না দুধ-লকলকি ভীষণ ভালোবাসতেন। বৈষ্ণব ধর্মতে পুঁইশাক এবং মুসুরডালকে বলা হত আমিষ। কোনো ভোগ এ এই দুটি জিনিস তীব্রভাবে নিষেধ ছিল। নিহাররঞ্জন রায় 'বাঙালির ইতিহাস' বইয়ের আদি খণ্ডতে লিখেছেন,"ভাত সাধারণত খাওয়া হইত শাক ও অন্যান্য ব্যঞ্জন সহযোগে। দরিদ্র ও গ্রাম্য লোকেদের প্রধান উপাদানই ছিল বোধ হয় শাক এবং অন্যান্য সবজী তারকারি।ডাল খাওয়ার কোন উল্লেখই কোথাও দেখিতেছি না,উৎপন্ন দ্রব্যাদির সুদীর্ঘ তালিকায়ও ডাল বা কলাইয়ের উল্লেখ কোথাও যেন নাই" রান্না সম্পর্কিত এই ভাঙা ভাঙা চিহ্নের মধ্যে থেকে উঠে আসে একটা চিত্র। আজ যে পদটি রান্না করব,তার নাম দুধলাউ। উপকরণ --কচি লাউ, ঘন দুধ,বড়ি, তেল,পাঁচফোড়ন পদ্ধতি - অসম্ভব সোজা একটি রান্না,যে কেউ যখন ইচ্ছে তৈরি করে নিতে পারনে। একটা লম্বা কচি লাউ কেটে নিতে হবে কুচিয়ে। কড়াইতে অল্প পরিমাণে সর্ষের তেল দিয়ে তাতে একটি শুকনো লংকা এবং পাঁচফোড়ন দিয়ে, সুন্দর গন্ধ বেরিয়ে ভাজা হলে কেটে রাখা লাউ দিয়ে দিতে হবে,অল্প নুন দিয়ে নেড়ে ঢাকা দিতে হবে। কিছুক্ষণ পর পর ঢাকা খুলে দেখতে হবে কতটা সেদ্ধ হল। জল দেবার প্রয়োজন নেই, লাউ জলীয় একটি সব্জি। এরপর যখন বোঝা যাবে যে সত্তর শতাংশ সেদ্ধ হয়ে গেছে তখন আগে থেকে জ্বাল দেওয়া ঘন দুধ দিতে হবে। সাথে দিতে হবে একটি কাঁচালংকা এবং পরিমাণ মতো চিনি দিয়ে আরও রান্না হবার জন্য ছেড়ে দিতে হবে। এভাবে মিনিট পাঁচেক পর দেখা যাবে পুরো বিষয়টা অনেকটা মণ্ড মতো জমে আঠা আঠা ভাব হয়ে এসেছে। সেইসময় আগে থেকে ভেজে রাখা বড়ি দিয়ে মিশিয়ে নিলেই তৈরি দুধলাউ। খুব সহজ খুব সুস্বাদু এবং সহজপাচ্য এই রান্নাটি আজও ইতিহাসের পাতায় জায়গা নিয়ে বসে আছে মহাপ্রভুর দৌলতে ২৮ শে শ্রাবণ ১৪৩০ সোমবার সকাল ৭:৫৩
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register