Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব - ৩৪)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব - ৩৪)

সুন্দরী মাকড়সা

ধীরেধীরে জালটা ওপরের দিকে উঠছে। মাথার ওপরে তাকিয়ে স্নেহা দেখতে পেলো একটা নৌকো বাঁধার কাছির মতো দড়ি মাথার ওপর একটা প্রাচীন জামগাছের ডালে পাক খেয়ে বাড়ির চিলেকোঠার ছাদের দিকে গেছে। আর ছাদের থেকে দুজন মানুষ মুখে মাকড়সার মুখোশ পড়ে সর্বাঙ্গ কালো পাজামা পাঞ্জাবীতে নিজেদের আড়াল করে ঝুঁকে পড়ে জালের মাথায় বাধা দড়িটাকে ধরে প্রাণপণে সেটাকে টেনে ওপরে তুলছেন। ফের আরেকবার ওদের বুদ্ধির দৌর্বল্যের কথা টের পেলো স্নেহা। দড়িটাকে যেহেতু গাছের ডালে পাক খাইয়ে ওকে জালশুদ্ধু টেনে ওপরের দিকে তুলছে, কাজেই জালটা গাছের ডালে এসেই আটকে যাবে। ওটাকে কিছুতেই ওরা ওদের কাছে নিতে পারবে না। স্নেহা চট করে নীচের দিকে দেখে নিলো। নীচটা ঘন ঘাসে ভরা। একটু বাঁদিকে একটা ঝোপ, ভাঁটফুল গাছের। স্নেহা ঠিক এসময়টাতেই ঋষিকে গেট দিয়ে ঢুকতে দেখলো। ব্যাস, এবারে আর ভুল করলো না স্নেহা। ততক্ষণে গাছের ডালে এসে আটকে গেছে জালের অগ্রভাগ। ওরা দুজন প্রাণপণে দড়িটাকে টানছে। দুজনের একজন যে মহিলা সে লক্ষণ পোষাকের ওপর দিয়ে স্পষ্ট ভেসে উঠেছে। স্নেহা হঠাৎ করে চিৎকার করে উঠলো -- ঋষি -- এই যে আমি এদিকে। এই যে গাছের ডালে জাল... বলতে না বলতেই ওরা হাত থেকে দড়িটাকে ছেড়ে দিলো। আর ছাড়ার সময় জালবদ্ধ শরীরটা সামান্য দোল খেলো। উল্কার বেগে স্নেহা জালশুদ্ধু নীচে পড়ছে। প্রায় পঁচিশ তিরিশ ফুট ওপর থেকে স্নেহা সেই ভাঁটফুলের ঝোপটাতেই এসে পড়লো। ঘটনার আকস্মিকতায় ঋষি থ মেরে দাঁড়িয়ে ছিলো। ওর মাথায় আগেপাছে কিছুই ঢুকছিলো না। স্নেহা ঝোপের মধ্যে এসে পড়তেই ঋষি দৌড়ে এসে হাতে কাগজে মোড়ানো চপারটা দিয়ে জালের দড়ি কেটে স্নেহাকে বের করেই ওর দুকাঁধ ধরে টেনে তুললো। -- কোথায় লেগেছে? -- নাহ্, সেরকটা লাগেনি কোথাও। ওই ঝোপটা এ যাত্রায় বাঁচিয়ে দিয়েছে। -- এটা কীভাবে হলো। --- কথা পরে হবে, আগে চলো ওরা কোথায় গেলো দেখতে হবে। পালিয়ে যাওয়ার আগেই... -- ওরা! কারা ওরা? মানে কি? -- মানে পড়ে হবে। আগে চলো... বলেই স্নেহা ঋষির হাত ধরে টেনে বাড়ির ডানদিকটার দিকে পা চালালো। কাউকেই দেখতে পেলো না ওরা, একজায়গার ঘাসগুলো গভীরভাবে থেবড়ে গেছে। --- দোতলা থেকে একজন মহিলাও লাফ দিয়ে পালাতে পারে? স্ট্রেঞ্জ! --- কে মহিলা? কে এখান থেকে লাফ দিয়ে পালিয়েছে? তুমি ঘরের বাইরেই বা এলে কীভাবে? --- ঋষি এখন কথা বলার সময় না। আমাদের হাতে সম্ভবত খুব একটা সময় নেই। কথাগুলো বলে স্নেহা ফের ঋষিকে টেনে নীচের দরজা দিয়ে ঢুকে সিঁড়ি ভেঙে ওপরে উঠতে লাগলো। দোতলায় উঠেই স্নেহা আগে ঘরে ঢোকার দরজার পাশের দেওয়ালটার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। -- এটাতে হাত পড়েনি। ওরা আসলে আমাকে, হয়তোবা তোমাকেও আটকে রাখতে চেয়েছিলো। যাকগে তুমি কি চা খেয়ে এসেছো? -- আমি কি চা খেতে বেরিয়েছিলাম নাকি? বলে ঋষি ঘরের ভেতর ঢোকে। --- তুমি না হয় ততক্ষণ একটু বিশ্রাম করো, আমি চায়ের জলটা বসিয়ে আসছি। দুকাপ চা আর ট্রেতে গোটাকতক বিস্কুট নিয়ে স্নেহা ঘরে এসে দেখলো ওটুকু সময়ের মধ্যেই ঋষির নাক ডাকছে। সামান্য একটু চিন্তা করে ঋষিকে ঠেলা মারলো স্নেহা। ধরমর করে উঠে বসলো ঋষি। --- কে - কে - কি হয়েছে? স্নেহা সামান্য হেসে ঋষির মুখে হাত বুলিয়ে দিলো। -- নাও, চা খেয়ে চটপট স্নানটা করে এসো দেখি। দুজনে সবে কাপে ঠোঁট ছুইয়েছে, এমন সময় দুদ্দাড় করে সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে কে একজন নীচের দিকে নেমে গেলো। ক্রমশ
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register