Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব - ৩৩)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব - ৩৩)

সুন্দরী মাকড়সা

স্নেহা যে ঠিক পথেই এগোচ্ছে, সেটা সম্পর্কে ওর ধারণা আরও দৃঢ় হলো। যদিও স্নেহা জানতো যে এখন আর জানালায় গিয়ে কাউকে দেখা যাবেনা, তবুও স্রেফ কৌতুহল মেটাতেই জানালার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো স্নেহা। ওর অনুমানের যথার্থতা দেখে ও মনে মনে খুশীই হলো। ফিরে আসতে গিয়েই থমকে দাঁড়ালো স্নেহা। একটা ছায়া! ঘরের দেওয়ালের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা কারো একজনের। সকালের সূর্যের আলো কার্ণিশের নীচে লুকিয়ে থাকা শরীরটার ওপর পড়ে পূব-পশ্চিমে একটা দীর্ঘ ছায়ার জন্ম দিয়েছে। যেটা আর কার্ণিশের নীচে লুকিয়ে রাখতে পারেনি নিজেকে। --- কার্ণিশের আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে রেখে লাভ নেই, যেখানে দাঁড়িয়ে আছো সেখানেই লক্ষ্মীটির মতো দাঁড়িয়ে থাকো, নইলে মাথার খুলি উড়িয়ে দেবো। এতোটুকুও পালানোর চেষ্টা করবে না। স্নেহা নিজের কণ্ঠস্বরকে নিজেই চিনতে পারলো না। ওর গলা থেকে যে এতোটাই দৃঢ় আর কর্কশ কণ্ঠস্বর বেরোতে পারে সেটা সম্পর্কে স্নেহার কোনো ধারণাই ছিলো না। কথাগুলো বলে ফেলেই স্নেহা ভাবতে লাগলো এখন সে কী করবে? চিৎকার করে লোক জড়ো করবে? কিন্তু সেটা করতে গেলেই লোকটা ওর ফাঁকা আওয়াজ টের পেয়ে যাবে। তাহলে? ও কি পা টিপে টিপে সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে মানুষটাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করবে? ধুস, যতসব ভুলভাল ভাবনা। কিন্তু কী যে করবে এখন সেটা কিছুতেই ঠিক করে উঠতে পারছে না স্নেহা। বেশীক্ষণ ধরে তো মানুষটাকে এভাবে এক জায়গায় দাঁড় করিয়েও রাখতে পারবে না ও। তাহলে? ছায়াটা খানিকটা ডানদিকে সরে গেলো। কিন্তু ওদিকে গিয়ে মানুষটার কোনো লাভ নেই, ওদিক দিয়ে পালাতে গেলে ওকে ঝোপেঝাড়ের ভেতর দিয়ে গিয়ে পাঁচিলের ওপারে যেতে হবে। আর বাঁদিকে গেলে বাড়িতে ঢোকার মুল দরজা পার করলেই বাড়ির পেছন দিকের আড়ালে চলে যেতে পারবে। তাহলেও লোকটা নিজেকে বাঁদিকে না নিয়ে গিয়ে ডানদিকে নিতে চাইছে কেন? তাহলে স্নেহা যে ধারণা করেছিলো নীচের তলার কেউ --- ওদিকে স্টোভের ওপর চাপিয়ে রাখা সসপ্যানের বুক এতোক্ষণে নিশ্চয়ই শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। স্টোভটাকে নিবিয়ে আসতে কতোটুকু সময়ই বা লাগবে? বড়জোর মিনিটখানিকের মতোই লাগুক, মানুষটা যখন এতোক্ষণ ধরে আড়াল থেকে বের হয়নি, তখন নিশ্চয়ই এক মিনিটের জন্যও বের হবে না। এখানেই ভুলটা করে ফেললো স্নেহা। ঘর থেকে দৌড়ে রান্নাঘর গিয়ে স্টোভ থেকে সসপ্যান নামিয়ে রাখতে গিয়ে বেখেয়ালে ঠং করে একটা আওয়াজ হয়ে গেলো। তাছাড়াও দৌড়ে এঘর থেকে রান্নাঘরের দিকে যেতে গিয়েও নিশ্চয়ই দৌড়ে যাওয়ার শব্দ লোকটাকে সচেতন করে দিয়েছিলো। মোদ্দাকথা, স্নেহা যখন ফের জানালায় এসে দাঁড়ালো তখন আর কোনো ছায়া দেওয়ালের সাথে লেপ্টে নেই। ঠিক এরকম সময়েই একটু দূরে ঋষিকে রাস্তা দিয়ে হনহন করে হেঁটে আসতে দেখা গেলো। হাতে খবরের কাগজ দিয়ে মোড়ানো কিছু একটা। এতোক্ষণ ধরে ধৈর্য ধরেও সামান্য একটু ভুলের জন্য হেরে গিয়ে স্নেহা দুহাত দিয়ে কপালের ওপরকার চুলগুলোকে খিমচে ধরলো স্নেহা। দোতলার ঘর থেকে নীচে নেমে এসে যেখান থেকে মানুষটা পালিয়েছে সেদিকটায় দ্রুতপায়ে এগিয়ে গেলো। নাহ্, সামনের ঝোপেঝাড়েও কোনোরকম চিহ্ন নেই। কী মনে হতে তাড়াতাড়ি বাঁদিকের দিকে এগিয়ে গেলো সে। এদিকটা বাড়ির পেছনকার দিক। সেদিকে কিছুটা এগোতেই হঠাৎ মাকড়সার জালের মতোই শক্ত একটা জাল ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেললো। ঘটনাটার আকস্মিকতায় স্নেহা চিৎকার করতেও ভুলে গেলো।

ক্রমশ

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register