Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

গল্পেরা জোনাকি তে রীতা চক্রবর্তী

maro news
গল্পেরা জোনাকি তে রীতা চক্রবর্তী

সুন্দরী পেলিং

হিমালয়ের পাদদেশে কাঞ্চনজঙ্ঘার কোলে পেলিং একটি ছোট্ট শহর। ৭২০০ ফুট উচ্চতায় ঘন সবুজে আল্পীয় অরণ্যে আবৃত ছবির মতো মনোরম স্নিগ্ধ ছায়াঢাকা এই জায়গাটি আপার পেলিং এবং লোয়ার পেলিং - এই দুই ভাগে বিভক্ত। তবে এর যেকোনো জায়গা থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘাকে দেখতে পাওয়া যায়। আকাশ মেঘমুক্ত থাকলে ভোরের সূর্যোদয়ের অপরূপ সৌন্দর্য হোটেলের রুম থেকে বা ছাদ থেকে দেখা যায়। এখানকার হোটেলগুলোতে একদিকে যেমন বাঙালি পর্যটকদের ভিড় তেমনি সাপোর্ট স্টাফ বেশিরভাগই বাঙালি। রাস্তার মোড়ের চায়ের দোকান থেকে নামিদামি হোটেলের যেখানেই যাও মাতৃভাষায় কথা বলার আনন্দটুকু ফ্রি পাওয়া যায়। এখানে কাঞ্চনজঙ্ঘা ফলসে যাবার পথে দেখা যায় রিম্বি ফলসের নয়নাভিরাম প্রপাতধারা। রিম্বি ফলস্ থেকে একটু এগিয়ে গেলে দেখা যাবে রিম্বি অরেঞ্জ গার্ডেন। এই বাগানের কমলালেবুর সমারোহ দেখে আমার মনে পড়ে গেল কিন্নরেরে আপেল বাগানের কথা। ওখানেও এইভাবেই প্রতিটি গাছের নিচে জমে আছে সদ্য গাছ থেকে পেড়ে নেয়া আপেল। সেগুলো আবার ঝুড়ি করে এনে এক জায়গায় স্তূপ করে রাখা হচ্ছে। সেখান থেকেই পেটিতে ভরা হবে। তারপর যাবে গুদামে। সেখান থেকে দেশ বিদেশে চলে যাবে সেগুলো ঠিক যেমন এখানে কমলালেবুগুলো রয়েছে। আর রয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে এলাচের চাষ। পেলিং এর এলাচের চাহিদা রয়েছে পৃথিবী জুড়ে। এখান থেকেই কাঞ্চনজঙ্ঘা ফলসে'র পথে এগিয়ে যেতে হয়। ভীষণ গর্জন করে ওপর থেকে একলাফে নেমে আসা ভীমাকার এই কাঞ্চনজঙ্ঘা জলপ্রপাত একটি অবশ্য দর্শনীয় জায়গা। এখানেই রয়েছে "জীপলাইন"এ কোমরে দড়ি বেঁধে নদীর একপাড় থেকে দড়িতে ঝুলে ঝুলে খরস্রোতা নদীর ওপর থেকে পাড় হয়ে অন্য পাড়ে পৌঁছানোর এডভেঞ্চারাস রাইড। এখানে রয়েছে এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম হাই অল্টিটুড ব্রীজ সিংসোর ব্রীজ। এটা সাসপেনশ ব্রীজ। অবিরাম দোদুল্যমান এই ব্রীজের ওপর থেকে ছোট গাড়ি চলাচল করতে পারে। সপ্তদশ শতকের বৌদ্ধ মঠ সাংগা চোলিং এখানেই রয়েছে। এখানে পাহাড়ের শীর্ষে রয়েছে গুরু রেনপোচের একটি সুন্দর মূর্তি। স্কাইওয়াকে বা কাঁচের পাটাতন দিয়ে হেঁটে এই পাহাড়ের ফুটহিলে পৌঁছে তারপর একশো ঊনসত্তরটি সিঁড়ি দিয়ে মঠের ভিতরে পৌঁছে যাওয়া যায়। প্রতিটি সিঁড়ির দুপাশে পদ্মচক্র বা "মণি" রয়েছে ক্রম অনুসারে। এখানে রয়েছে অষ্টাদশ শতকের অপর একটি বিখ্যাত মনাস্ট্রি, পেমায়াংছে মঠ। ১৭০৫ খ্রীষ্টাব্দের এই মঠে কাঠের ফলকে লেখা বৌদ্ধ পুঁথি সংরক্ষিত আছে। তিনতলা এই মঠে রেনপোচে সহ অন্যান্য গুরুর স্ট্যাচু রয়েছে। মঠের প্রার্থনা গৃহটি বিভিন্ন ট্র্যাডিশনাল পেন্টিং দিয়ে সাজানো রয়েছে। জানালা দরজাগুলো প্রথাগত তিব্বতীয় রীতির নিদর্শন। পরমপূজ্য বৌদ্ধগুরু দলাই লামা উৎসব অনুষ্ঠানে কখনো কখনো উপস্থিত থাকেন বলে শোনা যায়। এটি একটি পঠনপাঠন কেন্দ্র এবং সংগ্রহশালা। এখানে রয়েছে সিডং বার্ড পার্ক (Sidkeong Tui ku Bird Park)। এই পার্কের ভিতরেই রয়েছে Rabdentse Ruins. ১৬৭০ থেকে ১৮১৪ সাল পর্যন্ত এটি সিকিমের দ্বিতীয় রাজধানী ছিল। নাংগিয়াল বংশের রাজাদের এই দুর্গ রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ এবং ক্রমাগত নেপাল ও ভূটানের আক্রমণের ফলে Namgyal dynasty ধ্বংস হয়ে যায়। বর্তমানে এটি সিকিমের একটি হেরিটেজ সাইট রূপে সংরক্ষিত আছে। আরো অনেক কিছুর মধ্যে একটি হল প্যারা গ্লাইডিং এবং অপরটি হল রাফ্টিং। একটিতে আকাশে ডানা মেলে ওড়ার স্বপ্ন পূরণ হয়। অন্যটিতে জলের দূরন্ত ঢেউয়ের মাথায় নিজেকে ভাসিয়ে রাখতে হয়। কঠিন কৌশলে প্রাণ বাঁচানোর দূরন্ত চেষ্টা করে লড়াই জেতার মুহূর্তগুলোকে স্মৃতিপটে জমিয়ে রেখে মনের আনন্দে সেগুলো একটু একটু করে বিলিয়ে দিয়ে শান্তি পাওয়ার একটুখানি ছোট্ট প্রয়াস। চেষ্টা করে দেখলেও আনন্দ।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register