Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

গল্পেরা জোনাকি তে রীতা চক্রবর্তী

maro news
গল্পেরা জোনাকি তে রীতা চক্রবর্তী

শৈল শহর নামচি

নামচি হল সিকিমের একটা ছোট্ট শহর। পাহাড়ের কোলে বিভিন্ন ধরনের অর্কিডের সমারোহ পর্যটকদের মুগ্ধ করে। কত ধরনের ফুল নিজেদের রংরূপের বৈচিত্র্য নিয়ে পাহাড়ের গায়ে গায়ে ফুটে আছে। কেউ তাদের পরিচর্যা করে না। প্রকৃতির আপন খেয়ালে রোদ - জলের তোয়াক্কা না করে কত নাম না জানা ফুলের মেলা বসে এই পাহাড়ি শহরে তার ইয়াত্তা নেই। এই ফুলের শহরে ঢোকার আগেই বহু দুর থেকে দেখা যায় সামদ্রূপস্টে পাহাড়ের ওপর গুরু পদ্মসম্ভব-এর এক বিশাল বড় স্ট্যাচু। গুরু 'পদ্মসম্ভব' রিনপোচে নামেই সকলের কাছে সমধিক পরিচিত। যে তিনজন গুরু সিকিমের মানুষের কাছে প্রথম বুদ্ধের বাণী প্রচার করেন গুরু পদ্মসম্ভব তাঁদের মধ্যে অন্যতম প্রধান। ১৯০৭ সালের ২২ শে অক্টোবর মহান গুরু দালাই লামা সিকিমের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী শ্রীপবন চামলিং উপস্থিতিতে একটি উপাসনাগৃহের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং রেনপোচের তত্ত্বাবধানে এই নির্মাণ কাজ শুরু হয়। পরবর্তীকালে প্রধান তিনজন গুরুর প্রতিকৃতি এই মঠে পূজার আসনে স্থাপন করা হয় এবং রেনপোচে'র নামে এই মঠমন্দিরটি উৎসর্গ করা হয়। ২০০৪ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারি এই মন্দিরের দ্বার সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। সাত হাজার ফুট উঁচু সামদ্রূপস্টে পাহাড়ের শীর্ষভাগে তৈরি এই মঠে গুরু রিনপোচে'র এই স্বর্ণখচিত পঁয়তাল্লিস মিটার উঁচু স্ট্যাচু সদাসর্বদা নামচি শহরকে আশীর্বাদ প্রদান করে চলেছেন বলে স্থানীয় ভক্তরা মনে করেন। মঠের ভিতরে গুরু পদ্মসম্ভব সহ অন্য দুই গুরুর স্ট্যাচু রয়েছে। অখন্ড গুরুবাণী (ওঁম্ মণি পদ্মে হুঁম্) ছাড়া অন্য কোনও শব্দ নেই এখানে। পূজা দেয়ার পদ্ধতি হল, বড় বড় বাটিভর্তি ঘি দিয়ে প্রদীপ তৈরি করে এক জায়গায় জড়ো করে রাখা আছে। নির্দিষ্ট জায়গায় তিরিশ টাকা গুঁজে রেখে দিয়ে নিজের পছন্দ মত একটা প্রদীপ নিয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় জ্বালিয়ে দেওয়া। মঠের প্রবেশ দরজার দুপাশে দুটো বৃহদাকার ধর্মচক্র বা "মণি" রয়েছে। প্রসাদরূপে রয়েছে মন্দিরের বাইরে রাখা দুটো কন্টেনারের একটাতে খাবার জল আর অন্যটাতে গরম কফি। মঠের বাইরে দু'পাশে চারটে করে মোট আটটি স্বর্ণখচিত বৌদ্ধস্তূপে বুদ্ধদেবের অষ্টসিদ্ধির বিবরণলিপি উৎকীর্ণ করা রয়েছে। এখানে রয়েছে বাইচুং স্টেডিয়াম যেখানে ফুটবল লিগের খেলা হয়। এখানকার সোলোফোকো'তে গড়ে উঠেছে ভারত বিখ্যাত "চারধাম" মন্দির। এই হিন্দু মন্দিরটি সিদ্ধেশ্বর ধাম নামেও পরিচিত। এখানকার প্রধান আকর্ষণ হল সাতাশি ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট মহাদেবের মূর্তিটি। অনেক দুর থেকে এই বিশাল মূর্তি সবার আগে চোখে পড়বে। এখানে রয়েছে গুজরাতের দ্বারকাধীশ, পুরীর জগন্নাথ, উত্তরাখন্ডের বদ্রীনাথ, এবং তামিলনাড়ুর রামেশ্বরম্ মন্দিরের অনুকরণে চারটি বিশাল মন্দির। বিভিন্ন ধরনের ফুলের গাছ এই মন্দিরের শোভা বাড়িয়ে দিয়েছে। সবচেয়ে আকর্ষক ফুলটি হল ম্যাগনোলিয়া। সাদা এই ফুলের এক একটার সাইজ একটা থালার মতো। ফুলের কুঁড়িগুলো দেখতে ঠিক ছোট কলসীর মতো। এই মন্দিরের অপর আকর্ষণ হল দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অনুকরণে বারোটি শিব মন্দির। নামচির অপর আকর্ষণ হল বিশাল একটি সাঁই মন্দির। সাঁইবাবার শান্ত সমাহিত শুভ্র সমুজ্জ্বল মূর্তির সামনে দাঁড়ালে মন নিজে থেকেই শান্ত হয়ে চুপ করে যায়। এই মন্দিরের ফুলবাগিচাটি ভক্তের ভালোবাসা দিয়ে সাজানো। এখানে কেউ গাছে হাত দেয়না। আশেপাশে পথের ধারে নানা রঙের ধুতুরা ফুল দেখতে পাওয়া যায়। আর আছে রংবেরংয়ের গোলাপ। থোকায় থোকায় ফুটে রয়েছে গাছে গাছে। মন্দিরে প্রবেশ পথের ডানদিকে একটি বড় শিব মন্দিরে অনেক বড় একটি শিবলিঙ্গ রয়েছে। সাঁই মন্দিরের আশেপাশে বসতি এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলার সুযোগ হল। জানাগেল এখানকার একটি পরিবার যারা পিতৃপিতামহের আমল থেকে এখানকার মানুষ তাঁরা মন্দিরের জন্য এই মন্দিরের জমি দান করেছেন। পরিবারের মহিলাদের সাথে বেশ কিছুটা সময় কাটানোর পর মনের কোণে এক অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছিল। এঁদের সাথে কথা বলতে বলতে কেন জানিনা প্রাচীন বাংলার গ্রাম সংস্কৃতির কথা মনে পরে গেল। জানতে পারি এখানকার বহু মানুষ কলকাতায় উচ্চশিক্ষার জন্য আসেন। এককথায় পাহাড়ী শহর নামচি বাঙালির মনের খুব কাছের অতি পরিচিত এক শহর বলা চলে।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register