Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

কবিতায় স্বর্ণযুগে কেতকীপ্রসাদ রায় (গুচ্ছ কবিতা)

maro news
কবিতায় স্বর্ণযুগে কেতকীপ্রসাদ রায় (গুচ্ছ কবিতা)

স্বেচ্ছায় পরবাসী

নিজেকে স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি করে মৃদাঙ্গের তালে তালে অপ্সরাদের স্বর্গসুখ নিই জল চিকচিক জ্যোত্‍স্নায় নদীর বুকে ভেসে । দেওয়াল টিপলেই আলো-জল-বাতাস আসে ; টেবিলে বসলেই রকমফের মহাভোজ । চাইলেই স্নান ঘরে ঈষদ-উষ্ণ জলে গোলাপের পাপড়ি...এমন স্বেচ্ছায় বনবাসী হতে কার না ইচ্ছে করে ! অপূর্ণতার ভিতর থেকে উঠে আসা ইচ্ছে গুলো শীত ঘুমের মতো বরফে ঢাকা ছিলো এতদিন । শীত ঘুম ভেঙে সবুজ পাতাগুলো মেলে ধরেছে রঙিন গালিচা। অথচ দ্যাখো, এখনও দু'পায়ে জড়িয়ে রয়েছে এঁটেল মাটি । হাটুরের পায়ে লেগে রয়েছে প্রাত্যহিকী নিয়মাবলী । আরও দ্যাখো, ভূমিপুত্র বলে যেখানে দাবি করে এসেছি সাড়ম্বরে, সে সব ছেড়ে এখন পরবাসে কতো সাবলীল । ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্বের মতো বিচ্ছিন্ন যোগাযোগের মধ্যেও কষ্ট এখন সামলে নিয়েছি বিস্তর । স্বেচ্ছায় নির্বাসনে গৃহবন্দি থাকলে রামচন্দ্রের বনবাসও কখনও কখনও সুজাতার পায়েসের মতো মধুর লাগে । আর এখন ঐ সব সুখের মধ্যে থেকেও এই পরবাস আমার কপালে চাঁদের টিপ দিয়ে যায় ।

 মানচিত্র

প্রচীন ভারতের মানচিত্র আঁকতে আঁকতে থমকে গেছি সাগর সঙ্গমে ; সুন্দরবন এখানে দু'ভাগে ভাগ হয়ে গেছে ।

কুমির-ডাঙার মাঠে বাঘেদের আদমশুমারি বন্ধ রেখে- এক দল বাংলা ভাষার মুক্তির স্বাদ আদায় করে নিয়েছে ; হ্যাঁ...আমরি সে বাংলা ভাষা।

আর একটু গভীরে গিয়ে খুজে পাই- অনাহারে পড়ে আছে সারি সারি মৃতদেহ ; ইতিহাস ভুলে গেছে সে সব সৈনিকের নাম।

আমাদের দৃষ্টান্ত স্থাপন করা ভাঙা মানচিত্রে- লাল ঘাসে সবুজ ঘোড়া তরতরিয়ে ছুটছে ; আর সমগ্র মানচিত্র আলোকিত করেছে আমার মায়ের ভাষা।

 মাৎস্যন্যায়

সারাদিন জমানো আনন্দ খেয়ে চিৎসাঁতারে ভেসে থাকি নদীর বুকে । মৎস্যকন্যাদের সুবাসিত তৈল ঘ্রাণ মেখে তারিয়ে তারিয়ে সূর্যের আলোয় নিজস্ব উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে নিই । দেখি, লাল নীল সবুজ মাছেদের নকশা কাটা জলজ পত্রের উপর মৈথুন অঙ্গ-বিক্ষেপ । মাছেদের সঙ্গে সন্ধি করি, নাড়া বেঁধে প্রজন্মের ইতিহাস পড়ি। নাহ... মাছেদের আলো আঁধারি বর্ণছটায় মোড়া বাসর-শয্যা পাতা ঘর নেই ; আছে শুধু মাৎস্যন্যায়ে উৎস্বর্গিত প্রাণ । অথচ দ্যাখো, আমার ধার্মিক হওয়ার পরিবর্তে ধর্মের আফিন খেয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে দিই জারজ সন্তানের মুখে। আর টানটান করে বাসার-শয্যা পাতা ঘরে পূর্ণিমার চাঁদ প্রবেশ করলে মাৎস্যন্যায়ের কথা ভুলে খাদক হয়ে যাই ॥

 ঈশ্বর হয়ে উঠছি

নিবিড় সম্পর্কের বুনিয়াদ ভেঙে গেলে একা হয়ে যাই; আর তখন ধুলায় লুটিয়ে পড়ে ঐতিহ্যের সাজানো সৌধ। কে দোষী...এ সব অন্বেষণের দায়িত্ব ঐতিহাসিকদের। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চাপা পড়ে যায় মিথ্যা সৌধ । নিজেকে প্রশ্ন করি... এই যে আত্মীয় পরিজন, সকল রক্তের সম্পর্ক- এ সব তাহলে নকল রাজবেশ ! নিজেকে আরও প্রশ্নবানে ক্ষতবিক্ষত করি... আপনজন বলে কী কেউ কখনো ছিলো ! নাকি বিমূর্তের ছদ্মবেশে সব সরলতার মধ্যে দ্রবীভূত ছিলো অন্তর্ঘাত !

এখন সম্পদের প্রাচুর্য ছেড়ে বিচ্ছিন্ন বদ্বীপে বাস নিয়েছি ; আর বুদ্ধের অমোঘ বাণী প্রচারে দীক্ষা নিয়ে ধীরে ধীরে ঈশ্বর হয়ে উঠছি। আসলে ঈশ্বরতো চিরকাল একা আর অদ্বিতীয়।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register