Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে রীতা পাল (পর্ব - ১৩)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে রীতা পাল (পর্ব - ১৩)

যাও পাখি দূরে

ফেরার পথে কেউ কোনো কথা বলল না। বাড়িতে এসে দেখল আয়া দিদি কুমারীর বমি পরিষ্কার করছে। কুমারী বুকের কাছে রংচটা পুতুলটা নিয়ে বসে আছেন। সবিতা দেবীর মাথায় একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে,কেন সমরেশ বাবু মিথ্যা কথা বলল? রাতের সবিতা দেবী কুমারীর ঘরে ঢুকতেই দেখলো,কুমারী পুতুলটার দিকে তাকিয়ে বসে আছে। সবিতা দেবী মেয়ের মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বললেন,“ কি রে,ঘুম আসছে না? ছোটবেলার মতো গল্প শুনবি? কুমারী নদীর গল্প — “ সমুদ্রের বাগদত্তা কংসাবতীর কাছে কৃষ্ণ দামোদর নদ রূপে আলিঙ্গন করতে এলে কংসাবতী দ্রুত সমুদ্রে মিলিত হয়। সমুদ্রের বাগদত্তার ছোট বোন হল আমাদের কুমারী নদী। কুমারী অযোধ্যা পাহাড়ের পূর্ব ঢাল থেকে উৎপন্ন হয়ে মানভূমের উপর দিয়ে অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে শেষে কংসাবতীর সাথে মিলিত হয়।” চুপ করে যায় সবিতা দেবী। অপেক্ষা করে যদি ছোটবেলার মতন বলে ওঠে,“ মা,কুমারী মেয়েটার গল্প বলো।” মেয়ে চুপ। সবিতা দেবী নিজেই শুরু করলেন, “ এক মেয়ে তার দু’টি সাঁড়কে গোপনে জলপান করানোর জন্য একটা কূপের কাছে নিয়ে যেতে অভ্যস্ত ছিল। সেখানে অন্য কেউ গবাদিপশুর জল খাওয়াতে পারত না। কারণ জলের স্তর খুব কম ছিল। তবে মেয়েটি জামা খুলে প্রার্থনা করে জল বাড়াতে সক্ষম হয়েছিল। একদিন এক ব্যক্তি তার শক্তি সম্পর্কে কৌতুহলী হয়ে উঠলো এবং তাকে কূপ পর্যন্ত অনুসরণ করল। মেয়েটি যখন বুঝতে পারলো লোকটি তার নগ্নতা প্রত্যক্ষ করছে তখন সে লজ্জায় কূপে ঝাঁপ দিল। আর তারপরই স্রোতে রূপান্তরিত হয়ে প্রবাহিত হয়ে গেছিল। এই জন্যই ওর নাম কুমারী নদী।” মেয়ের দিকে তাকিয়ে দেখল পুতুল বুকে নিয়ে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে। সবিতা দেবী ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে দেখলেন কুমারী জানলার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সবিতা দেবীর আনন্দে মনটা ভরে উঠল। আজ ওর হুইলচেয়ার লাগেনি। আয়া দিদিকেও লাগেনি। কুমারী নিজে উঠে জানলা দিয়ে সূর্য ওঠা দেখছে। সবিতা দেবীর চোখের কোণ ভিজে গেল। “ কুমারী,কুমারী”,বলে ডেকে উঠলেন। কুমারী নির্বিকার। একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে পূর্ব দিগন্তের দিকে। সবিতা দেবী ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন সুখেন বাবুকে খবরটা দেওয়ার জন্য। সুখেন বাবু ডাক্তার বাবুকে ফোন করলেন। “ হ্যালো,বলুন সুখেন বাবু।” “ স্যার! আজ কুমারী নিজেই উঠে দাঁড়িয়েছে। একা একা হেঁটে জানলার ধারে গিয়েছে। ডাক্তারবাবু ও ঠিক হয়ে যাবে তো?” “ সুখেন বাবু,কুমারী একদম ঠিক হয়ে যাবে। আমি আর একবার গাইনোকোলজিস্টের সাথে কথা বলছি। দেখি কিছু করা যায় কিনা।” বলে ডাক্তার বাবু ফোন কেটে দিলেন।

সবিতা দেবী চা নিয়ে সুখেন বাবুকে দিলেন। সুখেন বাবু চা’টা নিয়ে মেয়ের ঘরের দিকে পা বাড়ালেন। দুপুরে সবিতা দেবী অলোককে একটা ফোন করেই বেরিয়ে গেলেন। যাবার সময় আয়া দিদিকে বললেন,কুমারীকে যেন সাবধানে রাখে।

লিলুয়া ট্রেন থেকে নেমে সবিতা দেবী একটা রিকশায় উঠলেন। রিকশাওয়ালাকে ঠিকানা দেখাতেই বকুলতলাতে নিয়ে গেল। সেখানে একটা একতলা বাড়ির সামনের রিক্সা থামল। রিক্সাওয়ালা বলল,“ দিদি,এটাই ২৩ নম্বর বাড়ি। আপনাকে এখানেই নামতে হবে।” সবিতা দেবী রিকশাভাড়া মিটিয়ে বাড়ির দরজায় ডোরবেল টিপলো। সবিতা দেবীর বয়সী এক ভদ্রমহিলা বেরিয়ে বললেন,“ কাকে চাই বলুন?” “ নমস্কার। আমি সবিতা রায়,কুমারী মা।

ক্রমশঃ

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register