Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে রীতা পাল (পর্ব - ১১)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে রীতা পাল (পর্ব - ১১)

যাও পাখি দূরে

পরীক্ষা শেষ। বৌদি সবসময় চাইছিল আপদ বিদায় কবে বিদেয় হবে। ভগবানও সেই সুযোগ করে দিলেন। তোকে এইসব বলতে পারিনি। আমার স্বামী আমার দাদার বন্ধু ছিলেন। অলোক হতে গিয়ে অলকের মা মারা যায়। বৌদি ওনাকে বোঝায়,‘এই দুধের শিশুকে কে দেখবে? আয়া দিয়ে কি সব হয়। আমার ননদকে বিয়ে করে নিন।’ উনি মানুষ হিসেবে খুব ভালো ছিলেন। অলোকের কথা ভেবেই উনি আমাকে বিয়ে করেছিলেন। অলোকের মনে যাতে কষ্ট না হয় তাই আমাদের কোন সন্তান হয়নি। অলোক আজও জানে আমিই ওর মা। সেই এক রত্তি বাচ্চাকে বুকে করে মানুষ করেছি। ও বুঝতে পারিনি আমি ওর সৎ মা। উনার চাকরি ছিল দিল্লিতে। তাই কলকাতা থেকে যাবার পর দিল্লিতেই থেকে যাই। অলোক খুব ভালো ছেলে। সত্যিই ও দোষী নয়। আর ওর শরীরে আমার রক্ত নেই রে। আর যাই করিস ওর মৃত মা-বাবাকে অভিসম্পাত করিস না।” সবিতার মুখটা কালো হয়ে যাচ্ছিল। একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে সন্ধ্যার দিকে। খোলা দরজা দিয়ে কখন অলোকে এসে সন্ধ্যার পিছনে দাঁড়িয়েছে তা সন্ধ্যা খেয়াল করেনি। অলোককে দেখেই সন্ধ্যার চোখে শ্রাবণের ধারা নামল। কোনরকমে বলল,“ পারলে আমায় ক্ষমা করিস অলক! এতদিন সত্যি কথাটা বলতে পারিনি যদি তুই আমার থেকে দূরে চলে যাস। আমি যে তোর গর্ভধারিনী মা নই। এটা আমি তোকে বলতে পারিনি।” অলোক পকেট থেকে রুমাল বের করে মায়ের চোখের জল মুছিয়ে দিল। “ কে বলল তুমি আমার গর্ভধারিনী মা নও? উনি তো দশ মাস আমাকে গর্ভে ধারণ করেছিলেন। তারপর আমায় ফাঁকি দিয়ে দূরে তারা হয়ে গেছেন। তুমিতো দু’হাত দিয়ে আগলে আমায় মানুষ করেছ। আমার জন্য নিজে কোনদিন গর্ভে সন্তান ধারণ করোনি। একি কম পাওয়া মা? কে বলেছে আমি কিছু জানি না? বাবা মারা যাওয়ার আগে আমায় সব বলে গেছেন। আমি সব জানি মা। বাড়ি চলো। সবিতা মাসি,আমার এক বন্ধু লালবাজার ক্রাইম ব্রাঞ্চে আছে। আমি তাকে পুরো ঘটনাটা বলেছি। ও বলেছে যতটা ওর পক্ষে সম্ভব করবে। চলো মা।” সন্ধ্যা অলকের হাতটা শক্ত করে ধরে আস্তে আস্তে বেরিয়ে যায়। সবিতা একেবারে বোবার মতো বসে থাকে। এই মুহূর্তে ড্রয়িং রুমে যে ঝড়টা বয়ে গেল,তাতে সব হারানো নাবিকের মতো তার অবস্থা। সন্ধ্যাকে এইভাবে বলাটা ঠিক হয়নি। দাদাও তো কোনদিন কিছু বলেনি। বিয়েও করল না। তাই সব দোষ সন্ধ্যার এই ভেবে মনের মধ্যে এত রাগ পুষে ছিল। আজ সবটা উগরে দিল। নিজের কাছে নিজেই ছোট হয়ে গেছে। কিন্তু কুমারী,তার কি হবে? ইচ্ছা করছে ওদের সব কথা বিশ্বাস করতে। আবার কোথাও যেন একটা সংশয় হচ্ছে। সুখেন বাবু সব দোর হাট করে খোলা দেখে ঘরে ঢুকেই সবিতাকে জিজ্ঞাসা করল,“ কি হয়েছে সবিতা? মেন গেট খোলা, কেউ এসেছিল? পুলিশ কি আবার এসেছে? সবিতা মাথা নাড়াল। বলল,“ সন্ধ্যা এসেছিল।” “ ও,তুমি কিছু বলনি তো?” সবিতা দেবী কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। তারপর বলল,“ আচ্ছা,আমরা যদি ওই মেয়েটার কাছে যাই। ওর বন্ধু,কি যেন নাম?যে কোলাঘাটে থাকে। তাহলে তো সব জানতে পারা যাবে।” “ হুম,কাল শনিবার হবে না রবিবার চলো।” সুখেন বাবু থানায় ফোন করে রঞ্জনার ঠিকানাটা নিয়ে নিলেন। রবিবার সকালে দু’জনে বেরিয়ে পড়লেন রঞ্জনাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে।

ক্রমশঃ

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register