Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে রীতা পাল (পর্ব - ৯)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে রীতা পাল (পর্ব - ৯) যাও পাখি দূরে

যার কপাল খারাপ হয় তার হয়তো বেশিদিন কোন সুখ সহ্য হয় না। সন্ধ্যা আর নিলয়ের মধ্যে একটা সুন্দর কেমিস্ট্রি তৈরি হয়েছিল। খুব সন্তর্পনে দু’জনে এগোচ্ছিল। এসে গেল ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা। সবিতা,সন্ধ্যা দু’জনেই ব্যস্ত হয়ে পড়ল পড়াশোনা নিয়ে। পরীক্ষার শেষদিন সবিতা কিছুতেই সন্ধ্যাকে ছাড়লো না। জোর করে বাড়িতে নিয়ে এল। অনেকদিন পর গানের আসর বসলো। নিলয় তবলা বাজাতে বাজাতে একদৃষ্টে সন্ধ্যার দিকে চেয়ে আছে সেটা সবিতা বেশ কয়েকবার লক্ষ্য করলো। শেষে নিলয় সুখবরটা দিল,“ বনু,আমার চাকরিটা হয়ে গেছে।” সবিতা চিৎকার করে উঠলো,“ দাদাভাই! কবে খাওয়াবি বল? অনেক কিপ্টেমি করেছিস। আমাদের সবাইকে খাওয়াতে হবে।” “ আচ্ছা,শোন আমার প্রথম পোস্টিং উড়িষ্যায়। কাল বা পরশু কলকাতার অফিসে যেতে হবে। সামনের সপ্তাহে তোদের সবাইকে খাওয়াবো। ঠিক আছে?” সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে বলল,“ আপনিও আসবেন। পরীক্ষা তো শেষ।” সন্ধ্যা মাথা নিচু করে রইল। সবিতা সন্ধ্যাকে জড়িয়ে ধরে বলল,“ কিরে,সামনের সপ্তাহে আসবি তো?” সন্ধ্যা,ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানালো। রেস্টুরেন্টে সবাই পৌঁছে গেল কিন্তু সন্ধ্যা তখনো এলো না। সবিতা আসার সময় সন্ধ্যার ল্যান্ডফোনে ফোন করেছিল কিন্তু কেউ ফোন ধরেনি। ভাই-বোনেরা সবাই এসে গেছে। নিলয় বারবার ফোন দেখছে। কিন্তু সন্ধ্যা আর এলো না। সবিতা বুঝতে পারছিল দাদাভাইয়ের মনটা খারাপ হয়ে গেছে। কাল সকালে ট্রেন ধরে চলে যাবে উড়িষ্যায়। আর দেখা হবে না। সবিতা নিলয় কে বলল,“ দাদাভাই! অত চিন্তা করিস না। হয়তো কোন সমস্যা হয়েছে। বাড়ি গিয়ে ফোন করবো।” ভাই-বোনেরা সবাই মিলে খুব হইচই করে রেস্টুরেন্ট থেকে খেয়ে বেরোলো। শুধু সবিতা খেয়াল করলো দাদাভাইয়ের মুখে একখণ্ড মেঘ জমেছে। বাড়িতে ফিরেই সবিতা সন্ধ্যাকে ল্যান্ড ফোনে ফোন করলো। ওপাশ থেকে একটা কান্না ভেজা গলা ভেসে এলো,“ বল। ” “ তুই এলি না কেন?” “ আমি আর কোনোদিন তোদের বাড়ি যাব না।” “সে কি রে! কেন?” “ দাদা-বৌদি আমার বিয়ে ঠিক করেছে।” “ কি বলছিস? এই তো পরীক্ষা শেষ হল! দাদা জানে এইসব?” “ না রে,ওকে বলে কি হবে? সবে বেচারা চাকরি পেয়েছে। এখন যদি বিয়ের জন্য ঘ্যানঘ্যান করি ভবিষ্যতে সম্পর্কটা কি ঠিক থাকবে? তাছাড়া তোর বাড়ির লোকজনই বা কি বলবে? না রে,তোকে ও তোর দাদাকে সবার কাছে ছোট করতে পারবো না। সবাই ভাববে এই জন্যই আমি তোদের বাড়ি যেতাম। ও অনেক উন্নতি করুক আমি চাই।” - বলেই ফোনটা কেটে দিলো। পরেরদিন নিলয় ফ্লাইটে করে উড়িষ্যা চলে গেল। একটা জোরালো আলো চোখে পড়তেই দু’জনেই স্মৃতির পাতা থেকে বাস্তবে ফিরল। অলক গাড়ি থেকে নেমে ছাতা খুলতে খুলতে সন্ধ্যার দিকে এগিয়ে এলো। গাড়িতে যেতে যেতে সন্ধ্যাই সবিতার সাথে আলাপ করিয়ে দিল। ওড়িশি ডান্সের সাজে কুমারীকে খুব সুন্দর লাগছিল। অলোক বারবার লুকিং গ্লাস দিয়ে কুমারীকে দেখছিল। সেটা কুমারীর চোখ এড়ালো না। সেদিন আর বিশেষ কোনো কথা হয়নি,কুমারী মিটমিট করে হাসছিল। সবিতাদের কালিতলা পার্কে নামিয়ে দিয়ে অলোকরা বাড়ি ফিরেছিল।

আঙ্গুলে সিগারেটের ছ্যাকা লাগতেই অলোকের সামনে থেকে পুরনো ছবিগুলো সরে গেল। ঝুল বারান্দা দিয়ে বাগানে সিগারেটটা ছুঁড়ে ফেলে দিল। আকাশের দিকে তাকাতেই দেখল একটা তারা খসে পড়ছে। অলোকের চোখ পর্যবেক্ষণ করছিল তারা নিভে যাওয়া। এদিকে গাইনোকোলজিস্ট সাফ জানিয়ে দিল এই অবস্থায় abortion করা যাবে না।

ক্রমশঃ

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register