Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

গল্পেরা জোনাকিতে রীতা চক্রবর্তী

maro news
গল্পেরা জোনাকিতে রীতা চক্রবর্তী

যদি জানতাম

আজ যে কার মুখ দেখে সকাল হয়েছে কে জানে! সারাটা দিন অযথা ঝামেলায় কেটে গেল। ছেলেটাকে কত করে বোঝাই যে মাঠে খেলতে যাবার দরকার নেই, কিন্তু কে শোনে কার কথা! স্কুল থেকে ফিরেই কোনোমতে একটু খেয়ে দে দৌড় মাঠে। এখানে আসার পর থেকেই আমার মনটা ভয়ে কুঁকড়িয়ে থাকে। চারদিকে বড় বড় ফ্লেক্স লাগানো আর তাতে উর্দুতে কত কিছু লেখা। কিন্তু কিছুই পড়তে পারি না। ওতে কি আছে সেটা যদি পড়তে পারতাম তবে এতটা ভয় লাগতনা। আমরা তো ছোটবেলা থেকে বাংলা পড়েছি, সাথে ইংরেজি। ক্লাস ফাইভ সিক্স হিন্দি আর সেভেন এইট সংস্কৃত। স্কুলে প্রথম থেকেই যদি এই ভাষাটাও শেখানো হতো তবে এই ভাষার সাথে অপরিচয়ের দূরত্ব থাকতনা। নিজের জানাশোনা সবাই যেমন আপন হয়েযায় এও ঠিক সেভাবেই আপন হয়ে যেত। এখানে এসে থেকে এই অপরিচয়ের কাঁটায় ক্ষতবিক্ষত হচ্ছি প্রতিদিন। আসলে আমার কর্তার চাকরির সুবাদে দু'তিন বছর পর পরই বদলি হয় বলে আমরা বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে ভাড়ার বাসায় থাকি। এখানেও সেই ব্যবস্থাই হয়েছে। ছেলেটাকে একটা ইংলিশ মিডিয়ামে ভর্তি করেছি। এই এলাকাটা সংখ্যালঘু অধ্যুষিত। তবে আমরা যে বাড়িতে থাকি সেটা জনৈক হরিরাম মহাজনের তবে বাড়িওয়ালি দয়াবন্তী ভোজপুরী ব্রাহ্মণের মেয়ে। যদিও এত ফিরিস্তি দেবার বিশেষ কোনো দরকার নেই। তবে ঘটনাটা ঠিক কি ভাবে বোঝাবো বুঝতে পারছি না বলেই বললাম। আজ সকালে ছেলেকে পাঠিয়েছিলাম পাড়ার দোকান থেকে জিনিস কিনতে। সেখান থেকেই গন্ডগোল শুরু। দোকানের দরজায় কোনো একটা কাপড় ঝোলানো ছিল। ছেলে ওটাতে হাত দিয়েছে। ব্যস, আর যায় কোথায়! ছেলের কান ধরে হিড় হিড় করে টানতে টানতে বাড়ির দরজায় হাজির হয়েছে দোকানদার একেবারে দলবল নিয়ে। ওটাতে নাকি পবিত্র কুরআনের বাণী লেখা রয়েছে। সে যাইহোক, একহাজার টাকা গ্যাঁটগচ্ছা দিয়ে তবে রক্ষা পেলাম। এরকম আরো একবার হয়েছিল। সেবার ধরমশালা বেড়াতে গেছি । ছেলেটা তখন ছোট। 'ভাসকু' দেখে আমরা আরো ওপরে যাচ্ছি প্যাগোডা দেখব বলে। কিছুটা উঠতেই খুব হাঁপিয়ে গিয়ে এক জায়গায় রাস্তার পাশে বেঞ্চ লাগানো দেখে বসে পরেছি। দেখছি একটা লম্বা লাইন করে কিছু লোক খচ্চরের পিঠে মাল বোঝাই করে চলেছে অনেক ওপরে। দুর থেকে রংবেরংয়ের কাপড়ের ওপর কিছু লেখা উড়তে দেখছি। এখানে একটা চায়ের দোকান রয়েছে আর সামনেই খুব সুন্দর করে সাজানো বেশ কয়েকটা শো'পিসের দোকান রয়েছে। ওই দোকানের জিনিসপত্রের ওপরের লেখাগুলো ঠিক ওই পতাকার মতো। ছেলেটা কখন যে দোকানের ভেতর চলে গেছে খেয়াল করিনি। হঠাৎই দোকানদারের হৈ হৈ শুনে তাকিয়ে দেখি আমার ছেলেটাকে টেবিলের ওপর দাঁড় করিয়ে রেখেছে। আমরা দুজনেই ছুটে গেলাম। কি হয়েছে জিজ্ঞেস করতেই দু'জন মহিলা ভাঙা ভাঙা হিন্দিতে বললেন," টুমারা বেটা লাফিং বুড্ডাকা পিস টোর ডিয়া। উসকা পয়সা দো। " তখনই হাজার টাকা ওদের হাতে গুঁজে দিতে হয়েছে। প্যাগোডা রইলো নিজের জায়গায় আমরা ছেলেকে নিয়ে চলে এলাম হোটেলে। পরে যখন' নরমালিঙ্গা" প্যাগোডাতে গেছি দেখি ওই একই রকম লেখা রয়েছে প্যাগোডার সব জায়গায়। ওখানকার ভিক্ষুণীকে জিজ্ঞেস করে জেনেছি ওটা চীনাভাষা। তখনও এরকমই মনে হয়েছিল যে," আমি যদি এই ভাষাটা জানতাম!"

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register