Thu 25 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব - ১৯)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব - ১৯)

বাউল রাজা

তৃতীয় খন্ড (উনবিংশ পর্ব)

আজকের সন্ধ্যা আমার জীবনে আমাকে এমন কতগুলো ঘটনার সাক্ষী করে রাখলো, যে গুলো শুধুমাত্র অনুভূতির আশ্চর্যজনক অভিজ্ঞতা হয়েই থেকে যাবে। এ কথাগুলো আমি কোনোদিনই কাউকে বলে বোঝাতে পারবো না যে আত্মরতির অবলম্বন হতে কেমন লেগেছিলো আমার। সাধক জীবনে এরাই আমায় পরিষ্কার করে দিয়েছিলেন যে এদের সমাজে নারীপুরুষ পরস্পর পারস্পরিক শারীরিক মিলনে মিলিত হন না। এঁরা মনের মানুষের সাথে মিলনাকাঙখায় অধীর থাকেন বটে কিন্তু সে মনের মানুষের বসত প্রকৃতপক্ষে তাঁদের নিজেদের মনেই। সেই মনের মানুষের সন্ধানেই এনাদের যাবতীয় সাধনা। সে সাধনা তন্ত্রসিদ্ধ নয়, প্রেমসিদ্ধ। কেবলমাত্র প্রেম সাধনাতেও এনারা সিদ্ধিলাভ করেন। আর সে সাধনার কেন্দ্রভূমিতে যিনি যাপন করছেন, তাকে যে কোনো প্রতিষ্ঠিত দেবতা হতেই হবে তার কোনো মানে নেই, সমস্ত প্রথাসিদ্ধ দেবদেবীর মতো এঁদের দেবতাও পূজকের সম্পূর্ণ মনের অধিকার পাওয়ার আকাঙ্ক্ষায় উদগ্রীব। তবে সে পথ অত্যন্ত গূঢ়পথ। আর সেই পথেই এঁরা অন্তরের দেবতার সাথে মিলনে মাতেন। মনঃসংযোগের কোন চূড়ান্ত স্তরে পৌঁছুলে আত্মরতি সম্ভব সেটা একমাত্র প্রেমিক বাউলেরাই বলতে পারবেন।

--" সময় গেলে সাধন হবে না দিন থাকিতে তিনের সাধন কেন করলে না ---" একটা গানের সুর যেন বাঁধানো সাঁকোটার ওপার হতে ভেসে আসছে। গানটা কি বাউলনি গাইছে! কিন্তু বাউলনির গলা তো এরকমটা নয়, এ তো তাঁর থেকেও মিহি আর রিনরিনে। --" জানো না মন খালে বিলে থাকে না মীন জল শুকালে কী হবে আর বাঁধাল দিলে মোহনা শুকনা। " গানের কথাগুলো আমার অপরিচিত। গায়িকা এখন অনেকটাই এগিয়ে এসেছেন, কিন্তু এখনও পরিদৃশ্যমানা নন। --" অসময়ে কৃষি করে মিছামিছি খেটে মরে গাছ যদিও হয় বীজের জোরে ফল ধরে না। অমাবস্যায় পূর্ণিমা হয় মহাযোগ সেই দিনে উদয় লালন বলে তাহার সময় দন্ড রহে না।" গানটা যেন নদীর বুকে সাঁতার কাটতে কাটতে এসে আমার ডানপাশের সেই পিরিচাকৃতির মাটির মালসার মতো ধরে রাখা নদীর জলে এসে স্থির হলো। তাহলে বাউলনি নন, নদী গাইলো গানটা! ততোক্ষণে চাঁদ এসে উঁকি দিয়েছে নদীর বুকে, সেই পিরিচ যেন চাঁদের আলোয় টাবুটুবু। তাহলে আমি যে ভাবছিলাম যে আমারই অন্তরে বাস করা এমন একজন সচরাচর যার নাগাল আমরা পাই না, সেই অধরা মনই হচ্ছে নদী, তাহলে তো সেটা আমার ভুল ভাবনা ছিলো। এই নদীর তাহলে আলাদা সত্তা আছে! অনেকক্ষণ দুজনেই চুপচাপ পাশাপাশি বসে আছি, একেই বোধহয় পিনপড়া নিস্তব্ধতা বলে।

--- ঠাকুর -- --- উঁ -- তুমি বাবছিলে বুজি এ গানটা আমি গাইলাম! ফের একটা হাসির লহরি। তুমিও বুল বাবনায় মরো? এ গানটা কেউ আগে কোনোদিন আমার বুকে বাসিয়ে দিয়ে গেচিলো। সেটা নদীর এপান্ত থেকে ওপান্ত পয্যন্ত বেসে বেড়ায়।

ফের কিছু নিস্তব্ধ মুহূর্ত। --" একটা কতা কইবো ঠাকুর? --- " হুঁ, বলো " -- গানটা এসময়টাতেই বেসে এলো কেন? যে বাউলনি গানটাকে গেয়েচিলো, সে কি জানতো তুমি মনে কী বাবচিলে? -- কেন? নইলে তোমার বাবনার সাতে এ বাবনার এতোটাই মিল কেনো? তুমি যে বাবচিলে বাউলদের মিলনের গূঢ়ার্ত নিয়ে, এ গানের কতাতেও কিন্তু তার হদিস আচে গো --

আমি চমকে উঠলাম, কী বলে কি ও? আমার ভাবনার সাথে এ গানের মিল আছে?

ক্রমশ...

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register