Wed 24 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব - ১৮)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব - ১৮)

বাউল রাজা

তৃতীয় খণ্ড (অষ্টাদশ পর্ব)

তখন সারা আকাশ জুড়ে জুঁইফুলের মতো তারা ফুটেছে। কিছুক্ষণ আগে যখন পিটুলিতলায় শ্রীকৃষ্ণমিলনলীলা চলছিলো তখন আমি আকাশে চাঁদকে হাসতে দেখেছিলাম। কিন্তু চাঁদনি রাতে তো আকাশে এতো তারা ফোটে না! তাহলে কি এই দুতিনশো পা দূরত্বের ভেতরেই আকাশটাও পালটে গেলো! আমি চারিদিকে ঘাড় ঘুরিয়ে আকাশটাকে দেখছি, দেখছি কোথাও চাঁদ দেখা যায় কিনা, এমনসময় চুরির রিনঝিন শব্দের আওয়াজের মতো একটুকরো হাসি যেন নদীর জলে গড়াতে গড়াতে দূর থেকে দূরে দৌড়ে চলে গেলো। --- কী হলো গো ঠাকুর, সারাক্ষণ দাঁইড়েই থাকপে না কি এট্টুস বসপে বলো দেকি? আমি যে আর একা বসে থাকতে পারচি না গো! বসতে গিয়ে দেখি, সেই মাটির আসনের বুকে একটা চায়ের পিরিচের মতো সামান্য টোল খাওয়া জায়গা নদীর জলে টাবুটুবু করে ভরে আছে। আর কী আশ্চর্য, সেই জলটুকু যেন আমার দেখা তারাভরা আকাশটাকে ধরে রেখেছে। আমি আসনে বসামাত্র সামান্য একটু জল যেন বাতাসবাহিত হয়ে আমার বাঁ কাঁধ স্পর্শ করলো। -- কী গো ঠাকুর কাঁদে হাত রাকলাম বলে কী তুমি রাগ করে বসলে নাকি? কাঁধে জলস্পর্শের বিষয়টা এখন বোধগম্য হলো। তারমানে আমার ডানদিকে যে ছোট্ট টোলের মতো ভাঁজে নদীর জল ভরে আছে এ মূহুর্তে সেই আমার সই। বন্ধুর কাঁধে হাত দিয়ে গল্প করতে বসেছে। --- তুমি বনে যে চাঁদকে দেকেচো সেটা আদৌ বুল দেকোনি গো। আকাশে চাঁদ তো উটেচে। কিন্তু সে চাঁদের ছায়া একনও আমার বুকে এসে বাসা বাঁদেনি বলে তুমি তাকে দেকতে পাওনি। বুজেচো? এতক্ষণে বিষয়টা পরিষ্কার হলো। এ মায়ার জগত আমাকে যতোটুকু যা দেখাবে আমায় সেটুকুই দেখতে হবে। আমার সাধ্য কী যে আমি আমার খেয়ালখুশি মতো নিজের মতো করে সবকিছু দেখবো, বুঝবো, জানবো! --- দেকো ঠাকুর, সবসময় আমরা যেটা দেকি সেটা সত্যি দেকি না, যেটা শুনি সেটা সত্যি শুনি না, যেটা স্পস্য করি সেটাও সত্যি সত্যিই স্পস্য করিনেকো। যেমনটা দেকো, তুমি দেকতেচো একজন মা তার গভ্যযন্তন্নায় কষ্ট পাচ্চে, কিন্তু তুমি আদৌ জানোনা যে সে কষ্ট কতোটা আনন্দের! একজন ছেলে চাকরি পেয়ে মাকে ছেড়ে দূরে চলে যাচ্চে, মা আকুল হয়ে কাঁদচে। তুমি মায়ের কান্না শুনতেচো, কিন্তু সে কান্নায় মিশে তাকা গব্ব, অহংকার, বালোবাসার যে তবকগুলো মিশে আচে সেসব তোমার কানে যাচ্চে না। ঠাকুর, আমরা বাবি বটে যে আমরা সবজান্তা। কিন্তু এই বিশাল জ্ঞানের জগতে আমরা কতোটুকুই বা জানি বুজি বলো দিকিনি! আমি চুপ করে নদীর কথাগুলো শুনছিলাম। এখন যেন মনে হলো এ নদী আসলে অন্যকিছু নয়, আমারই অন্তরে বাস করা এমন একজন সচরাচর যার নাগাল আমরা পাইনা। হয়তো তারই সন্ধানে দিনরাত নিজের মনে নিজের চৌহদ্দির বাইরে নিজেকে খুঁজে বেড়াই।

ক্রমশ

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register