Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে রীতা পাল (পর্ব - ৪)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে রীতা পাল (পর্ব - ৪)

যাও পাখি দূরে

জিজ্ঞাসা করলেন,“ কোন বইটা দেবো বলো? আমি নামিয়ে দিচ্ছি।” কুমারী সেই একইভাবে বইয়ের তাকের দিকে তাকিয়ে রইল। পলক পরছে না। সামনে একটা সঞ্চয়িতা ছিল। বইটি এনে কুমারীর বালিশের পাশে রাখল। হেসে বলল,“ তুমি দেখো,আমি খাবার গুছিয়ে আনি।” যেতে যেতে আড়চোখে দেখল কুমারী বইটা নিচ্ছে কিনা। কিন্তু না,কুমারী সেই একইভাবে বইয়ের তাকের দিকে তাকিয়ে রইল। আজও কুমারী খেতে পারল না। ওয়াক তুলতেই সবিতা দেবী বললেন,“ ওর যেটা ভালো লাগে সেটা দাও।” আয়া দিদি ঘাড় নাড়লেন। সবিতা দেবী ঘর থেকে বেরিয়ে যাবার সময় সঞ্চয়িতাটা চোখে পড়ল। চৌকাঠ থেকে ফিরে আসলেন। বইটা আঁচল দিয়ে মুছে যত্ন করে তাকে তুলে রাখলেন।

বিকালে অলকের মা,সন্ধ্যা এলেন। কুমারীর জন্য আনা ফল আয়া দিদির হাতে দিলেন। কুমারীকে জিজ্ঞাসা করলেন,“ কিরে এখন একটু ভালো লাগছে? তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে ওঠ দেখি। আগের মত আমরা সবাই একসাথে ঘুরতে যাব।” কুমারী নির্বাক। আয়া দিদি,“ আপনাকে দিদি ডাকছেন।” উনি যেতে-যেতে কুমারীকে আর একবার দেখলেন। কাচের টেবিলে দু’কাপ চা আর একটা প্লেটে কয়েকটা বিস্কুট। সবিতা দেবী চায়ের কাপ আর বিস্কুট এর প্লেটটা এগিয়ে দিয়ে সোফায় বসলেন। সন্ধ্যা আগে জিজ্ঞাসা করলেন,“ হ্যাঁ রে,ও কী বাড়ি ফিরেও কথা বলছে না। “ না,কথা তো বলছে না তার উপরে____” “ তার উপরে কি?” “ আমি অলককে বিশ্বাস করেছিলাম। ও এমন করবে ভাবতে পারিনি। অ্যাক্সিডেন্টের আগে কুমারী তো অলকের সাথেই মেলামেশা করত। আমরাও ছেড়ে দিয়েছিলাম যাতে ওরা দু’জন দু’জনকে জেনে বুঝে নিতে পারে। কিন্তু ওরা এ কি করলো!” “ হেঁয়ালি ছাড়। কি করেছে আমার অলক? সেটা তো বল।” “ কুমারী প্রেগনেন্ট।” “ কি বলছিস তুই?” “ ঠিকই বলছি। আজকে হাতে রিপোর্ট পেয়েছি।” “ কিন্তু ও তো তিন মাস হাসপাতালে!” “ চোদ্দ সপ্তাহ চলছে। তারমানে অ্যাক্সিডেন্টের আগে।” “ দেখ,ওরা দুটো প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে মেয়ে। যদি এমন ভুল করে তবে আমরা কি করব বল। আমি বাড়ি ফিরে অলককে সব জিজ্ঞাসা করছি। তুই ভাবিস না। আমি তোকে সব রকম সাহায্য করবো। আমার ছেলে বলে ওকে ক্ষমা করব না।” বলেই বেরিয়ে গেলেন। সবিতা দেবী কুমারীর ঘরের দিকে তাকাতেই আয়া দিদির চোখে চোখ পড়ল। সবিতা দেবী তাড়াতাড়ি আয়া দিদির কাছে গিয়ে বললেন,“ তোমার কাছে হাত জোড় করছি। তুমি তো সবই শুনেছো। তুমি বাইরে কাউকে কিছু বলো না। তাহলে মেয়েটাকে আর বাঁচাতে পারবো না। ওর বাবা আসুক। আমার মাথা কিছু কাজ করছে না।” “ অমন করো না দিদি। ওর মতো তো আমারও একটা মেয়ে আছে। মায়ের কষ্ট আমি বুঝি। একটা না একটা ব্যবস্থা ঠিক হয়ে যাবে। ডাক্তার সোম ভগবানের মতো। উনি ঠিক একটা ব্যবস্থা করে দেবেন। আমি যাই।”

রাতে দু’জনের কেউই খেতে পারলেন না। দু’জনেই কুমারীর ঘরে ঢুকলেন। কুমারী অঘোরে ঘুমাচ্ছে। মেয়ের মাথার কাছে বসলেন সুখেন বাবু। মাথায় হাতটা দিতে গিয়েও সরিয়ে নিলেন। সবিতা দেবী চাদরটা মেয়ের গায়ে টেনে দিয়ে বললেন,“ যাও,তুমি শুয়ে পড়ো। আমি আছি।” সুখেন বাবু আস্তে আস্তে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।

ঠিক সকাল সাড়ে ন'টা। সুখেন বাবু ইস্কুলে বেরাবেন এমন সময়ে একটা পুলিশের গাড়ি এসে বাড়ির সামনে থামল। সুখেন বাবুর ডোর বেলটা বেজে উঠলো। সুখেন বাবু দরজা খুলতেই সাব-ইন্সপেক্টর হালদার বললেন,“ এটা কী সুখেন রায়ের বাড়ি?”

ক্রমশঃ

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register