Wed 24 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব - ১৭)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব - ১৭)

বাউল রাজা

(তৃতীয় খণ্ড সপ্তদশ পর্ব)

নদীর কথার উত্তরে আমি কী বলি? আমি আমার মাথাটাকে দোলালাম।

-- কি গো ঠাকুর, কিছু কি বুজলে আজ? --- মানে? --- না, ওই আর কি। আচ্চা, কানাই বাউল তোমাকে হটাত করে সুবলসখা বলে ডাকলেন কেন গো?

কী মুশকিলেই না পড়েছি! কানাইদা যে আমায় সুবলসখা বলে ডেকেছেন সেটা তিনি জানেন আর কেন ডেকেছেন সেটা যেন জানেন না। ন্যাকা। --- আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম। কানাইদা বললেন যে মনে নিলো তাই। --- অ, তা মনে নিলো কেনে সেটা জিজ্ঞেস করো নি? --- করেছিলাম তো। তা উত্তরে তিনি বললেন, মনের খবর কী আর মন রাখে? ---- সত্যিই তো, মন যদি তাঁর সখার সাথে রমণে মেলে তালেপরে আর সে খপর মন কী করেই বা রাকপে বলো দিনি!

আমি চমকে উঠলাম। এ কি কথা শোনালো আমাকে নদী? কানাই বাউল আমার মনের সাথে তার মনের রতিতে মিলিত হয়েছিলেন? সে কারণেই বুঝি তাহলে?

--- চমকে উটলে মনে নিচ্চে, তোমার তো চমকে ওটার কিচু নি গো ঠাকুর। তুমি কি আর কিচু বুজপে? তাঁর সাতে মিলনে বাউল তোমাকে আধার করেচিলো গো। তুমিও তো তার মনের মানুষই গো ঠাকুর। এক মনের মানুষরে আধার করে তার ইষ্টদেবতার সাতে রতিতে মিলেচিলেন গো। মিলনকালে তার মুকের ভাব দেকোনি গো? তুমি তো ভাবলে বুজি শ্যামরাই যুগলে লীলায় মেতেচে। কিন্তু আসলে যে এ অন্য লীলা গো ঠাকুর। --- অন্য লীলা মানে? এতো কঠিন করে বোলোনা নদী, একটু বুঝিয়ে বলো প্লিজ। নদী বুঝি নিজের মনের কৌতুকে নিজেই খানিক হেসে নিলো। হাসির দমকে ফুলে ফুলে উঠলো ওর বুকের জল। -- এ বীষণ জটিল ক্রিয়া গো ঠাকুর। মনের মানুষের সাতে বাউল তো মাজেমদ্যেই মিলনে মাতে গো। আজ কিষ্ণরূপে তাঁর পিয় সুবলসখারে যুক্ত করে তিনি মিলনে মাতলেন গো। এটা তেনার পেয়জন হতো না গো ঠাকুর, আজ তিনি তার নিজের আধার ভামিনীকেও একইসাতে জইরে নিলেন গো। এ জন্যই না, দুজন দুজনারে বেষ্টন করে তরুলতার মতো ওপরে উটে গেলেন। গুরুশিষ্য দুজনাই আজ নিজের নিজের সাতে আত্মরতি সারলেন গো, আর সেটার আধার হয়েচিলে তুমি। এবারে বুজেচো তো!

আমি কী বলবো? আমি মনে মনে তখন এ প্লাস বি হোল স্কোয়ারের ফর্মূলা মনে করছি। কানাইদা হলেন এ, আর বাউলনি হলো বি। দুজনেই নিজের নিজের সাথে মিললেন হলো গে এ আর বি এর স্কোয়ার। দুজনেই দুজনকে অবলম্বন করলেন। নদী যাকে বললো তরুলতা। তাহলে তৈরী হলো টু এ বি। কিন্তু এরভেতরে আমি কই? নদী ফের খিলখিল করে হেসে উঠলো --- নিজেরে খুঁজতেচো বুজি? তুমি হলে গিয়ে ব্রাকেট গো ঠাকুর। যতই দুজন দুজনরে জইড়ে থাকুক, কিন্তু তোমারে ছাড়া ওরা নিজেদের স্কোয়ার তৈরী করতে পারতো না গো। ওই ব্রাকেটটাই হলে গে তুমি। বুজেচো? আমি চমকে উঠলাম। কিন্তু পরমুহূর্তেই বুঝলাম যে চমকে ওঠার এখনও ঢের বাকী। -- আজ তোমার পিয়ার শরীরের ঘেরাণ শুঁকেচো? একটা মিষ্টি গন্দ পাওনি? আমি যেন ঘোরের মধ্যেই মাথা নাড়লাম। মনে পড়লো সেই সুগন্ধের কথা, যেটা সারাটা রাস্তা একসাথে অন্তরঙ্গ ভাবে হেঁটেও পাইনি। --- ওই গন্দটা হলো গে রমণের গন্দ। তার মনের মানুষের দেকা পেলে যেরকমভাবে চোকেমুকে একটা সুন্দর আলো জ্বইলে ওটে, তেমনি মনের মানুষের সাতে মিশলে সারা শরীর দে বেলজুঁইচন্দনের মিষ্টি সুবাস বেরোয় গো। সে সুগন্দ সবাই পায় না গো, একমাত্তর তাঁর পিয় মানুষটির মনের আমোদে সে সুগন্দ মিশে যায়। হঠাৎ করেই নদী গান ধরলো -- সে সাধনায় মিশিয়া যায় ফুলের গন্ধ, ওগো সে সাধনায় মিলিয়া যায় কবির ছন্দ, তুমি জানো না, ঢেকে রেখেছি তোমার নাম, রঙিন ছায়ার আচ্ছাদনে, আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ সুরের সাধনে...

বাহ্, নদীর গলায় আর কি কোনোদিনও গান শুনেছি? না বোধহয়। কিন্তু ছোটোবড়ো বিভিন্ন ধরণের উপলখণ্ডকে বুকে নিয়ে যখন নদী বয়ে যায়, তখনই তো কান পাতলে নদীর গান শোনা যায়। -- ঠাকুর, একটা কতা কইবো? -- কোন কথাটা বলতে তুমি বাকী রেখেছো বলো দেখি? নদী যেন একটু কপট হলো। -- থাকগে যাও, আমি তো বেশী কতাই বলি। আমি তো আর তোমার মনে ভাগ বসাই নি, আমারে তো তোমার অসহ্য লাগবেই। শুনতে হপে না থাক, বলপো না। --- এই দ্যাখো দেখি? বাচ্চা মেয়ের মতো আবার ঠোঁট ফোলাতে শিখেছে। বলো দেখি তাড়াতাড়ি, নইলে তো আবার পেট ফুলে যাবে। --- তালেপরে আমার পাশে একটু বোসো, বসলে পর বলপো। তাকিয়ে দেখি এটা সেই ফুল গাছের নীচে মাটি কেটে বানানো আসনের পাশে দাঁড়িয়ে আছি।

( ক্রমশ)

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register