Wed 24 September 2025
Cluster Coding Blog

ধারাবাহিক গল্পে আলিনূর চৌধুরী (পর্ব - ৮)

maro news
ধারাবাহিক গল্পে আলিনূর চৌধুরী (পর্ব - ৮)

তুলির অন্তর্ধান

তজুকে ডেকে পাঠালেন হাছেন শেখ। চারদিকে বন্যার পানি, মাঠ ঘাট তলিয়ে গেছে। গরু মহিষের ঘাসের বড় অভাব। শুকনা খড় আর কত খাওয়ানো যায়। খইল, গুরা পাওয়া যায় না। এ বছর আউশ ধান বানের পানিতে ডুবে যাওয়ায় অনেকের চাল কিনে খেতে হয়। গুড়াও হয়না। তাই হাছেন সিদ্ধান্ত নিয়েছে মহিষ দুটি বিক্রি করবে। টাকারও খুব দরকার, সংসার চালাতে গিয়ে টান পড়লো। ঝামেলাও কম নয়, তা থেকেও বাঁচা যাবে।

তজু এসেই বললো- আমাকে ডাকছেন বলে চাচা?

হ। ডাকছি, এক দরকারে।

কি দরকার! কও

মইষ দুইটা গাজিপুর হাটে নিমু বেচতে। আমার সাথে যাবি তুই। তৈয়ার হয়া আয়। বেলা তো কম অয়নায়। এট্টু পরেই বারইমু, দূরের পথ।

ঠিক আছে চাচা। তয় অহনি খায়া আইতেছি।

হাছেন বাড়ির ভিতরে গেলো। জয়গুন কে বললো- খাইতে দেও, হাটে যামু মইষ নিয়া।

হাত মুখ ধুইয়া বহো, ভাত দিতেছি।

দেরী করবা না,আমি কুয়াতলা হইতে আইতেছি।

হাতমুখ ধুইয়া এসে দেখে ভাত তৈয়ার। আলু ছানা ও মাসের ডাল দিয়ে খায়া নিলো। জয়গুন জর্দা দিয়া হাতে পান দিলো।পানটা মুখে নিয়ে বললো- ছাতা আর পান্টিটা দেও। ছাতা পান্টি নিয়া হাছেন

বাহিরে এলো। তজুও এসে পড়েছে।

তজু কে বললো- মইষের দড়ি খোল গোরা থাইকা। তজু গোরা থেকে মইষ নিয়ে আগে আগে চললো,হাছেন পিছেনে হাটছে।

প্রত্যেক মানুষ বাঁচে তার কিছু স্বপ্ন ও কিছু আশা নিয়ে। সেই স্বপ্ন আর আশা যদি মরীচিকার দাবানলে দগ্ধ হয়,ক্ষত হয় এবং বিষাদের ছায়া ফেলে তখন তার বেঁচে থাকার প্রেরণা ডুবে যায় গহীন অতলে ; হতাসার আগুন তাকে গিলে খায়। নতুন স্বপ্নের ইচ্ছে ও আশা কোনোটাই আর মনে জায়গা মিলেনা। ধরনীর এই মৃত্তিকা বাগান তখন নির্থক হয়ে উঠে।

হাছেন পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে সবার ছোট। তিন ভাই এক বোন তাদের এখন আর কেউ বেঁচে নেই। হাছেন পালের গোদা হয়ে আজও বে্ঁচে আছেন। দুই ছেলে দুই মেয়ে দেখে শুনে বিয়ে দিলেন ; সব কয়টি সমন্ধই ভালো হয়েছে বলা যায়।কোনো অশান্তির ছায়া পড়েনি তাদের উপর। তবে সেজো মেয়ে তুলির বিয়েটা তিনি বুঝে উঠতে পারেননি।কি করে কি হয়ে গেলো ; তাই মনে কষ্ট পোষণ করছেন।খারাপ জামাইয়ের হাতে পড়লো মেয়েটা, এটা ভাবতেই তার মনে পীড়া দেয় অহর্নিশি।

মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি বড়ই সংকিত। তুলির শ্বশুর খবর পাঠাইছে, তাদের বউ নিয়ে যেতে চায়।

মেয়ের আকুতি, চোখের জল তাকে বিহবল করে তোলে। মেয়ের যা মতিগতি তাতে তাকে জোর জবুরী করে পাঠালে যদি হিতে বিপরীত হয়; সেই ভাবনা তাকে কুরেকুরে খায়।

মহিষ বেঁচে হাছেন যখন বাড়ি ফিরলো, রাত তখন দশটা বাজে। দেরী না করে খেতে বসে, জয়গুনকে বললো- তুলি কী ঘুমাইছে?

হ। ঘুমাইছে। কিছু বলবা? ডাকমু ওকে?

না। থাইক। ডাইকো না। তুলির শ্বশুর খবর পাঠাইছে, ওকে নিয়া যাইতে চায়। বলোতো কি করা যায়! ওতো যাইতেই চায় না।

শ্বশুর বাড়ির কথা বললে তুলি কান্দে - জয়গুন জানায়।

হেইডাই তো ভাবনার বিষয়। জোর কইরা পাডাইতে সাহস পাইনা। তুমি কালকে আবার এট্টু বুজাইয়া কয়া দেহ, ওর মনোস্তাব কী?

তুলির মামা কে সাথে নিয়া বুজাইয়া কয়া দেহি।

ফরিদ আইছে? কহন আইছে?

দুপুর বেলা আইছে। কাচারী ঘরে ঘুমাইছে। বিয়ার দাওয়াত দিতে আইছে। বড় ছেলের বিয়া।

আইচ্ছা, ঘুমাইক। বিহান বেলা কথা কমুনি। আইত মেলা অইছে এহন ঘুইতে যাই।

পশ্চিম দুয়ারি ঘরে দরজার খিল আটকাইয়া, বিছায় গা এলিয়ে দিলো। অজানা দরজার ফাঁক গলে চিন্তার কীট এসে মস্তিস্কে ঘুরপাক খায়। নানা সাত পাচ ভাবতে ভাবতে অচেতন ঘুমের কোলে ঢলে পড়লো

চলবে

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register