Wed 24 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে উজ্জ্বল কুমার মল্লিক (পর্ব - ৮)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে উজ্জ্বল কুমার মল্লিক (পর্ব - ৮)

সাদা মিহি বালি

শিব-শংকরের ঠিকাদারি ব্যবসার গো- ডাউন, কারখানা থেকে বেশ দূরে;ফলে, ঠেলা- কাজের জন্য ও ভিতর থেকে মালপত্রও পাঁচিলের উপর দিয়ে বাইরে ছুড়ে ফেলার জন্য, লোক বেশি রাখতে হয়েছে। কারখানার কাছে গো- ডাউন হলে, লোক ও সময়, দুটোই বাঁচতো। অন্য গোষ্ঠীর নীলাদ্রি নারায়ণের আখড়ার সামনে, রাস্তার পুব- পাড়ে, উঁচু- ডাঙ্গার জঙ্গল পরিষ্কার করে একটা গো- ডাউন করার মতলব অনেকদিন ধরেই রয়েছে। আর, এ নিয়েই দু'জনের মধ্যে রয়েছে আকচা- আকচি। গো-ডাউনে, প্রায় সব সময়ই লোকজন আসা- যাওয়া করবে, তাহলে নীলাদ্রির তান্ত্রিক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত অন্যান্য আনুষঙ্গিক বস্তুর ধান্ধায় ব্যাঘাত ঘটবে। সেদিন, জঙ্গল পরিষ্কার করানোর সময় নীলাদ্রিনারায়ণ বাধা দিলে, সাময়িকভাবে কাজ বন্ধ হল: দু'জনের মধ্যেই তো রয়েছে সামন্ত- তান্ত্রিক মনোভাব----পূর্ব পুরুষরা, সব লেঠেল পাঠিয়ে, জমি, নারী ভোগ করেছে; সে ধারা তো প্রচ্ছন্নভাবে দু'জনের মধ্যেই রয়েছে। অন্য একদিন কারখানা বন্ধের সুযোগে, শিব-শংকর, তার ব্যবসার সমস্ত লোক নিয়ে এসে খুঁটি পুতে, তার দিয়ে ঘিরে, জায়গার দখল নিল;জায়গাটা, ওদের হলেও, কিছুটা পোর্ট- কমিশনের নদী-খাত বলেই বোধ হয়; স্থানীয় মিউনিসিপ্যালিটি, আর এ নিয়ে মাথা গলায়নি। নীলাদ্রির শুধু তড়পানিই সার। ওর লোকজন তো সব নদীর ওপারের; সবাই জমা হয় রাতে। অন্ধকার নামতেই আখড়ায় এসে গোপন মতলব সেরে ফেলে; ওরা তো সব দাগী আসামী; আবার কেউ, কেউ ফেরারও বটে। পরের অমাবস্যার কালীপুজোর রাতে, শিব- শংকরকে বলি দেবার পরিকল্পনা করে, যে যার ডেরায় ফিরে গেছে।

কালীপুজোর দিন সন্ধ্যা বেলায়, গো- ডাউনের কাজ মিটিয়ে, লোকজনদের দৈনন্দিন খোরাকির টাকা মিটিয়ে, শিব-শংকর ,বেশ খুশি মনেই মটর বাইকে বাড়ি ফিরছে। সতীমা'র শ্মশান- ঘাটের কাছে আসতেই কয়েকজন তার মটর সাইকেলের সামনে এসে পড়তেই, সে স্পীড একেবারে স্লো করেছে; প্রথমে, সে শ্মশান- বন্ধুদের মাতলামো ভেবেছে; পরে যখন, ওরা সবাই মিলে মুখ চেপে ধরে টানতে, টানতে আখড়ার দিকে নিয়ে যেতে শুরু করতেই, সে বুঝতে পেরে, 'বাঁচাও, বাঁচাও' বলে প্রাণপণ চীৎকার করেছে, কিন্তু, কেউই আসেনি। একেই তো রাতে, ওখানে মা, মা, চীৎকার হয়; তাতে আবার ঐদিন অমাবস্যা, কালীপুজো বলে, আশ-পাশের বাড়ির কেউই কোনো গুরুত্ব দেয়নি। আর সন্ধ্যা নামলে, ঐখানে তো লোকজনের আনাগোনা এমনিই হয় না বললেই চলে।

রাঘবেন্দ্রবাবুর কাকা, পশুপতি ঘোষাল মশাই, বয়সের ভারেই হউক বা আত্মগ্লানির মর্মপীড়াতেই হউক, প্রায় অথর্ব হয়ে পড়েছেন। এখন আর ব্যবসায়ে মাথা ঘামান না। দাদা মারা যাবার কিছুদিন পরেই, বৌদিও চলে গেছেন। রাঘবেন্দ্র তখন সাবালক হয়েছে; অন্য ভাইপোরা ছোট;বাড়িতে কোন মহিলা না থাকলে চলে না, তাই রাঘবেন্দ্রের বিয়ে দিয়েছেন।বৌমা রমণীকে, তিনিই পছন্দ করে নিয়ে এসেছেন। রমণীও, তাঁদের ঘোষাল পরিবারকে রমণীয় করে তুলেছে; ছোট ভাইপো, অমরেন্দ্র ও একমাত্র ভাইঝি, শিবানীকে, একরকম মাতৃস্নেহে মানুষ করেছে। বৌদি, যখন মারা যায়, ওদের বয়স তখন, কত আর হবে! বড় জোর, অমরের ছয়, আর শিবানী তো সবে মাত্র দাঁড়াতে শিখেছে। রমণীই ওদের বৌদি- মা হয়ে মানুষ করেছে। এখন সবাই প্রায় সাবালক। পশুপতি বাবু,নিশ্চিন্ত মনে রাঘবের ওপর দায়িত্ব দিয়ে অবসর জীবন-যাপন করছেন। এদিনও, ব্যবসার অফিস ঘরের সামনের রোয়াকে বসে পথচারী- কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলছিলেন;প্রতিদিনই, বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রোয়াকে বসে লোক- জনদের সঙ্গে কথা- বার্তা বলেন;বয়সও হয়েছে, দূরে, হেঁটে (হেঁটে ্তে্ত্তে্্তে্ত্তে্তে্ত্তে্্তে্ত্তে) যেতে পারেন না। ভাইপো- ভাইঝিরা খুবই শ্রদ্ধা করে, ওরাও তাঁর স্নেহ- পুত্তলি; ওদের মধ্যে, শিব-শংকর যেন ওনার প্রতি মূর্তি, ওর মধ্যে, তিনি, নিজেকে খুঁজে পান; ওর মতই ডাকাবুকো ছিলেন, তাই, ওর প্রতি টানটা একটু বেশি বোধ হয়। বালি চুরি ঠেকাতে, রাতে স্পীডবোট নিয়ে নদী পাহারা দিতেন; কতবার, বিহারি- ইটখোলার মালিকের( েেেেেেেেেেেে) লোকের সঙ্গে তাঁর লাঠালাঠি হয়েছে। বিহারি মালিকের লোকেরা, ভাটির টানে বালতি দিয়ে বালি তুলতো; পাহারা দেওয়ায়, আর লাঠির জোরে, বালি চুরি বন্ধ করেছেন। আজ অন্ধকার হয়ে এলো, শিব-শংকর এখনও ফিরলো না, তাঁর মনটা খুব উচাটন। অফিস- ঘরে গিয়ে বলতেই, রাঘবেন্দ্র বাবু একজন লোককে একটু এগিয়ে গিয়ে খোঁজ নিতে পাঠালেন। লোকটি সাইকেল নিয়ে কিছদূর যাবার পর দেখে, শ্মশান- ঘাটের কাছে শিব- শংকরের মটর সাইকেল পড়ে আছে; আর আখড়ার ভিতর থেকে "মা, মা" আওয়াজ আসছে। লোকটি পড়িমরি করে সাইকেল চালিয়ে এসে অফিসে খবর দেওয়া মাত্র, সবাই লাঠি, সড়কি, বন্দুক নিয়ে আখড়া ঘিরে ফেলেছে; স্থানীয় লোকজনও হাজির। নারায়ণের লোকজনও এসেছে; কয়েকজন নিঃশব্দে, পাঁচিল টপকিয়ে ভিতর থেকে গেট খুলে দেওয়া মাত্র, বন্দুকের ফায়ারিং করতে করতে হুড়মুড় করে সবাই ঢুকে দেখে, শিব- শংকরকে পিছমোড়া করে বেঁধে, আটচালায় পোঁতা হাড়িকাটে, ওর মাথাটা ঢোকানো হয়েছে; পাশে থাকা লোকেরা নেশায় চূড় হয়ে, " মা, মা" চীৎকার করছে। বন্দুকের আওয়াজে ওদের সম্বিৎ ফিরেছে বলে মনে হচ্ছে। ওদের মধ্যে কয়েক জন ফেরার, দাগী আসামী। পুলিশ এসে সব কটাকে হ্যান্ড ক্যাপ দিয়ে পিটুতে, পিটুতে প্রিজন- ভ্যানে তুললো। ছিন্নমস্তা মন্দিরের অসামাজিক ক্রিয়া- কলাপ বন্ধ হয়েছে। স্থানীয় লোকজন, পুজো- কমিটি করে ঐ স্থানের দখল নিয়েছে। জাঁকজমকে পুজো হচ্ছে। এলাকা এখন দৌরাত্ম্য মুক্ত।

চলবে
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register