Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

গল্পেরা জোনাকি তে রীতা চক্রবর্তী (পর্ব - ৫৩)

maro news
গল্পেরা জোনাকি তে রীতা চক্রবর্তী (পর্ব - ৫৩)

নীল সবুজের লুকোচুরি

মনটা খারাপ হয়ে রয়েছে মিঠির। চোখের পাতায় চিকচিক করছে জল। কেন এরকম হচ্ছে? অবুঝ মনকে কি করে শান্ত করবে মিঠি? কাকে বলবে ওর মন খারাপের কথা? চোখের জল মুছতে টেবিলের ওপর মুখ নামিয়ে চুপ করে থাকে। একটু দুরে অনেকের কথা কানে আসে। উঠে দাঁড়ায় মিঠি। নিজেকে নিজের মধ্যে গুছিয়ে নিয়ে বর্তমানের জন্য তৈরি হয়ে যায়।

দিন ফুরালে আসবেই যে আঁধার। জীবন মানে অকূল পারাবার। কথামালায় আঁধার আলো। জীবনেরই মন্দভালো। বাণীর কায়ায় বরণ ডালা। এই তো সবার জীবনপালা পেলে যা আজ অতীত হবে। পিছনে সব পরেই রবে। আমার আমির জগৎ শুধু সত্য দেখে এই ভবে। এই আছি এই ছিলাম যেন নয়তো কিছুই চিরন্তন। যে আছে তার হাত ধরে চল চিরদিনের বর্তমান।

বর্তমান যতই অজানা প্রশ্নপত্র দিয়ে কঠিন সময়ের মধ্যে ফেলে আমাদের পরীক্ষা করুকনা কেন, সে যে সত্যিই চিরসুন্দর। ক্ষণিকের এই মিলন মেলায় চিরন্তনকে বন্দী করে চলেছে বর্তমান। সব হারিয়ে যাওয়া সেই বর্তমানকে যতই অতীতের চাদরে ঢেকে রাখতে চাওনা কেন মনের গভীরে আলো জ্বেলে বসে আছে সেই চিরদিনের বর্তমান। মিঠির মনের গভীরে বর্তমানে লুকিয়ে থাকা ছবিগুলোর মতো। আজ বার বার মনে পরছে সেই সব কথা যেগুলো সেদিন বর্তমানের সমস্যায় ভারাক্রান্ত হয়ে তিক্ততার রোদেজলে ভিজেপুরে আজ মনের মধ্যে সোনা ফলিয়েছে। সেদিনের সেই অভিমানী মিঠি এখন জীবনযুদ্ধে একজন পরিনত যোদ্ধা। এখন সে বুঝতে পারে যে কর্তব্যের কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে গিয়ে অনেক সময় নিজের ভাললাগাকে সরিয়ে রাখতে হয়। এখন যেমন মিঠির মনে পরছে, সেই সন্ধ্যায় আরিয়ান যখন আখতার ম্যাডামকে নিয়ে চলে গেল তারপর আনসারি স্যারের নির্লিপ্ত মনোভাবে কিছুটা অবাক হয়েছিল। তবে পরে বুঝতে পেরেছে যে সেই মুহুর্তে আরিয়ানকে বাধা দেবার কোন উপায় স্যারের ছিল না। ছেলে তার মাকে খুব ভালো করে জানে বলেই পরিস্থিতিটা নিজের গতিপথ তৈরি করে নিয়েছে। স্যার সেদিন চুপ করে থেকে একটা অপ্রীতিকর পরিস্থিতি থেকে সবাইকে বাঁচিয়েছেন। নিরাপদ দূরত্বে থেকেও ভালোবাসাকে বাঁচিয়ে রাখা যায় এটা এখন বুঝতে পারে মিঠি। দুজন সমান দক্ষতার মানুষ খুব বেশিদিন বশ্যতা স্বীকার করতে পারেনা। সম্পর্কের মধ্যে দূরত্ব না থাকলে তার সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়। স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পারলে মনের খোরাক জুটবে কি করে? তাইতো আজকাল মিঠি মা'কে খুব ভালো করে বুঝতে পারে। মা কেন একা থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন? কেন নিজের অধিকার নিয়ে সন্তানের জন্মদাতার সাথে আইনের পথে যাননি - সেসব এখন বোঝে। আর তাইতো মা'কে যেন আজকাল বড্ড বেশি বেশি করে ভালবাসে। ইদানিং বাবার ওপরেও শ্রদ্ধা যেন অনেক বেড়ে গেছে। আর সেই অবুঝ শিশুর মত আরিয়ানকেও খুব ভালোবাসে মিঠি। নিজে মা' হয়ে বুঝেছে সন্তানকে কোলে তুলে নেবার সাথে সাথে সব মায়ের কাছে স্নেহ-প্রেম-ভালবাসা নিজেদের যথার্থতা নিয়ে সম্পর্কের মধ্যে ধরা দেয়।

আসছি পরের পর্বে

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register