Tue 23 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সুদীপ ঘোষাল (পর্ব - ৫১)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সুদীপ ঘোষাল (পর্ব - ৫১)

সীমানা ছাড়িয়ে

পৌষ মাসভর পূজা করতে হয়। সংক্রান্তির দিন যে চারটি নাড়ু বেশি থাকবে তা নিয়ে ফুল দূর্বাসহ পুজো করে লক্ষীর হাঁড়িতে তুলে রাখা হয়। ক্ষীরের নাড়ু খেতে খেতে মন্ত্র পড়া হয়

তুঁষ তুঁষুল সুখে ভাসালি আখা জ্বলন্তি পাখা চলন্তি চন্দন কাঠে রন্ধন করে খাবার আগে তুঁষ পোড়ে খরকের আগে ভোজন করে প্রাণ সুখেতে নতুন বসতে কাল কাটাব আমি জন্ম এয়োতে।

চার বছর পর ব্রত উদ্ যাপন করতে হয়।কাকিমা বলে, কি হবে এসব করে? মা হাসতে হাসতে বলেন, বিশ্বাস থেকেই ভক্তি।

পৌষমাসের শুক্লাপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে এই ব্রত পালন করা হয়। এর ফলে পুত্র কন্যার অকাল মৃত্যু রোধ হয় বলে বিশ্বাস নারীমহলে। শোনো গল্প তাহলে,

নন্দী গ্রামে এক নারীর বৌমা ও ছেলে ছিলো। তার নাতিপুতি ছিলো না।

বৌমা খুব পেটুক। সে ঠাকুরের নৈবেদ্যের থালা থেকে কলাটা,সন্দেশটা নিয়ে খেয়ে নিত।

ফলে তার কোনো ছেলেপিলে হতো না।

মহিলা এক সাধুর পরামর্শে পাটাই ষষ্ঠীর ব্রত পালন করতে লাগলেন।

বাড়ির উঠোনে পুকুর কেটে বেণা ডালের পাটাই পুঁতে নৈবেদ্যের রেকাবি সাজিয়ে পুরুতকে দিয়ে পুজো করালেন।

বউএর নৈবেদ্য দেখে জিভে জল এলো।মহিলার শঙ্খধ্বনিতে তার চেতনা ফিরলো।

মহিলা বৌমাকে বললেন, পাটাই দেবীর কাছে ক্ষমা চেয়ে বর প্রার্থনা করো।

বৌমা তাই করলেন। এক বছর পরে তিনি গর্ভবতী হলেন। সংসারে ঘর আলো করে নাতনি এলো। মহিলা সুখে সংসার করতে লাগলেন।

চলিত আছে যে এই ব্রত করলে মৃতবৎসা প্রসূতির সন্তান হয় ও জীবিত থাকে।

কুমারী, সধবা,পুত্রবতী ও বিধবা সকলেই এই ব্রত পালন করতে পারেন।অষ্টচাল,অষ্টদূর্বা কলসপাত্রে ধুয়ে, শোন সবে ইতুর কথা ভক্তিযুক্ত হয়ে। এই ব্রত কার্তিক মাসের সংক্রান্তিতে আরম্ভ করতে হয় এবং অগ্রহায়ণ মাসের সংক্রান্তির দিন পুজো শেষ করে সেইদিন ইতুরসাধ দিয়ে সকলে প্রসাদ পায়।সন্দে, মন্ডা,মিঠাই ও সাধ্যমত ফলমূল দিয়ে নৈবেদ্যের রেকাবি সাজাতে হয়। পুজো হওয়ার পরে সকলে প্রসাদ পায়।

মা গোঠষষ্ঠী ব্রত ও অগ্রহায়ণ মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠীতে করতে হয়। ঘটে বটের ডাল,দধি,তৈল,হলুদবাটা, ফল,ফুল সবই দিতে হয়।পিঠুলির গোঠ গঠন করে দিয়ে বাঁশের পাতায় বারো মাসে তেরো ষাট দিতে হয়। রালদুর্গা ব্রত যে নারী করেন তার সকল দুঃখের শেষ হয়ে সুখের উদয় হয়।

কুলুই মঙ্গলবার ব্রত এই মাসে পালন করতে হয়। কুলের ডাল পুঁতে ঘটস্থাপন করতে হয়। একটি বড় কুলোতে পিঁটুলির আলপনায় ১৭টি ডিঙি অঙ্কিত করে ১৭টি কুল, ১৭টি কুলপাতা, জোড়া মূলা,জোড়া কড়াইশুঁটি , ১৭ভাগ নতুন চিঁড়ে,নতুন খইয়ের মুড়কি দিয়ে কুলোয় সাজাতে হয়। আতপ চালের নৈবেদ্য সাজাতে হয় রেকাবিতে ।

এছাড়া ক্ষেত্রব্রত, সেঁজুতিব্রত, নাটাইচন্ডী ব্রত, মুলোষষ্ঠীর ব্রত প্রভৃতি ব্রত আছে যেগুলি এই মাসেই পালন করতে হয়।

নাটাইচন্ডীর ব্রতে রবিবারে মায়ের কাছে বর চাওয়া হয়। ধন সম্পত্তি হারায় না কোনোদিন এই ব্রত পালন করলে। নাটাই চন্ডীর কাছে প্রার্থনা করতে হয়,মা নাটাই চন্ডী, আমরা যেনো হারানো ধন খুঁজে পাই।

নানা উপাচারে পূজা করা হয় নাটাই চন্ডীর। কাকিমা মায়ের কাছে ব্রতকথা শোনার পরে প্রণাম করেন। মাকেও একটা প্রণাম ঠুকে দেন। মা বলেন, করো কি বোন। কাকিমা বলেন, আপনার কাছে অনেক কিছু শিখলাম। মা বলেন, তোমাকে একদিন জয় মঙ্গলবারের ব্রতকথাও শোনাবো। দেখবে ভালো লাগবে। সুনীল দেখলো মা লাল পাড় সাদা শাড়ি পরে ঠাকুর ঘরে ঢুকলেন। মাকে এখন সারদা মায়ের মত লাগছে। এবার বাবা অফিসে যাবে। বন্ধুর বাড়ি যান সকালে উঠে। গল্পগুজব করে দশটায় বেড়িয়ে পরেন কাজে। বাবা বললো,সুনী, তোর মাকে বল,পিন্ডি বেড়ে দিতে। এখনি যাবো। সতীগিরি দেখাতে মানা কর। আমি সব জানি। শালা জালি মালটা আমার কপালেই জুটলো।

মা সুনীলকে পাঠিয়ে দেন গল্পদাদুর কাছে। সুনীল ভাবে, বাবা কেন মা কে জ্বালায়।মা তো খুব ভালো। ঠাকুর বাবাটা এরকম কেন? আমার বাবার উপর কি ভূত বা পেত্নী ভর করেছে। দাদু এরকম একটা গল্প বলেছিলেন। যাইহোক, মা বাইরে বাবার কথা বলতে বারণ করেছেন।কাউকে বলা যাবে না। এমনকি দাদুকেও না।

সুনীল জানে, মা মাঠের বাড়ির ফাঁকা জায়গায় গাছ লাগাতেন অবসর সময়ে। মায়ের সারাদিন শুধু কাজ আর কাজ। মায়ের বাবার অফিসের মত ছুটি নেই। বিশ্রাম নেই। বৈকালিক ভ্রমণ নেই। বাবা অফিস থেকে এসেই জলখাবার খান। মা রান্নাঘরে। তারপর রাতের রান্নার ফাঁকে আমাকে পড়ানো।

সুনীল দেখে আর ভাবে, মায়ের কেন ছুটি নেই। মুখে হাসি নেই। বাবা পান থেকে চূণ খসলেই ধমকের সুরে মাকে বকেন। মাঝে মাঝে গায়ে হাত তোলেন। বাবা বলেন, আমার পিঠে দুটো নয় তিনটে তেচোখা মাছের মত চোখ আছে। তুমি পাশের বাড়ি ভূতটার সঙ্গে প্রেম করো। আমি সব দেখতে পাই। সুনীল বাবার পিঠে চোখ দেখতে পায় না। মা ছাদে উঠলে ঘন একরাশ আলো মায়ের চোখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে। ছাদ থেকে প্রতিবেশির সঙ্গে কথা বলে।

আজকে সুনীলের বাবা একটা চিঠি এনেছে। বিয়ের চিঠি। কলকাতার কাকুর মেয়ের বিয়ে। ঠিক হলো সুনীল আর বাবা যাবে। মা যাবে না। কারণ বাড়ি ফাঁকা থাকলে চোর আসে। সব কিছু চুরি করে।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register