Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

T3 || ষষ্ঠী স্মরণে || রীতা পাল

maro news
T3 || ষষ্ঠী স্মরণে || রীতা পাল

ফাগুন হাওয়া

খুব সন্তর্পণে পা ফেলে এগোচ্ছিল রাই। যত এগোচ্ছে ততই জঙ্গল ঘন হচ্ছে। চতুর্দিকে মায়াবী এক নিস্তব্ধতা। শুধু ঝরা পাতাদের মর্মর শব্দ। কিছুটা এগোতেই হঠাৎ করে চোখে পড়ল একটা খরস্রোতা নদী। নদীটা পেরোতেই আকাশ রাঙা হয়ে উঠলো। বাতাসে উড়ছে লাল-নীল-হলুদ-গোলাপি আবির। পরীদের মত সব মেয়েরা হাসতে হাসতে এ ওর ঘাড়ে লুটিয়ে পড়ছে। সবাই মিলে গোল করে কাকে যেন ঘিরে রেখেছে। রাই একটু একটু করে বৃত্তের দিকে এগিয়ে গেল। একটা রঙিন পুরুষ মেয়েদের মত শাড়ি পড়ে নাচার চেষ্টা করছে। সবাই বেশ মজা করছে। এক জনকে ডেকে জিজ্ঞাসা করল,“ উনি ওই ভাবে নাচছে কেন? এই জায়গাটার নাম কি?” মেয়েটি হাসতে হাসতে বলল,“ ওমা! তুমি তো কিছুই জানো না দেখছি! এটা একটা খেলা। আজকের দিনে শ্রীকৃষ্ণ নন্দ গাঁও থেকে এসেছিলেন শ্রী রাধিকার পিছু নিয়ে বৃন্দাবনের বরসানা গ্রামে। রাধিকা ও তার সখীদের উতক্ত করছিলেন। ফলে সখিরাও রেগে গিয়ে শ্রীকৃষ্ণকে লাঠি দিয়ে মারতে উদ্যত হয়। সেই মতো উৎসব এখানে আজও হয়। নন্দ গাঁও থেকে ধুতি-পাঞ্জাবি পড়ে কৃষ্ণের বেশ ধরে দলে দলে পুরুষেরা আসে এই গ্রামে। আর আমরা রাধা বেশে ঘাঘরা পড়ে সজ্জিত হই এবং একটা লাঠি নিয়ে স্বাগত জানাই। তারপরই শুরু হয় লাটমার হোলি। যার পিঠে ঐ ওই লাঠির ঘা পড়ে তাকে আমাদের সামনে নাচতে হয়।” বলেই মেয়েটা রং এর মাঝে হারিয়ে গেল। আর একদল ছেলে-মেয়ে মুঠো মুঠো রং নিয়ে রাইয়ের দিকে এগিয়ে এলো। রাই দৌড়াচ্ছে। তার সাদা শাড়িতে তো রং লাগাতে নেই। রাই হাঁপিয়ে উঠল। পথ আটকে যে দাঁড়ালো তার সারা অঙ্গে রঙের প্রলেপ। চুলটা ঝাঁকিয়ে মুখটা সামনে করতেই রাই চমকে উঠলো। এক্সিডেন্ট এর পর হাসপাতালে পড়ে থাকা স্বামী সৌরভের রক্তমাখা মুখটা ভেসে উঠল। ছ্যাঁক করে ঘুমটা ভেঙে গেল। তাড়াতাড়ি করে বিছানা ছেড়ে দরজা খুলে ঘরের বাইরে বেরিয়ে এলো। একটা সুন্দর বসন্তের হাওয়া ওর মেঘের মতো চুলে খেলা করে গেল। নিচে আমগাছটায় প্রচুর মুকুল এসেছে। গন্ধে ঝুল বারান্দাটা ম ম করছে। নিচে রাস্তার দিকে তাকাতেই দেখে একদল ছেলে- মেয়ে আবির নিয়ে প্রভাত ফেরিতে বেরিয়েছে। ধীর পায়ে সৌরভের ঘরটার দিকে এগিয়ে গেল। মাত্র তিন বছরের সংসার। তারপর একটা এক্সিডেন্টে সব শেষ। কেটে গেছে আরো পাঁচ পাঁচটা বছর। রংহীন জীবনে অভ্যস্ত হয়ে গেছে রাই । বাতাসে ভেসে আসছে প্রভাত ফেরির গান - - - "ওরে গৃহবাসী খোল দ্বার খোল লাগলো যে দোল। স্হলে জলে বনতলে লাগলো যে দোল দ্বার খোল দ্বার খোল।"

অনেকদিন পর রাই সবকটা জানলা খুলে দিল।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register