Tue 23 September 2025
Cluster Coding Blog

ধারাবাহিক গল্পে আলিনূর চৌধুরী (পর্ব - ৫)

maro news
ধারাবাহিক গল্পে আলিনূর চৌধুরী (পর্ব - ৫)

তুলির অন্তর্ধান

বর্ষাকাল। চারিদিকে বন্যার পানি থৈথৈ করছে। মাঠ ঘাঠ তলিয়ে গেলো। তিল পরিমানও কোথাও জেগে নেই। রাস্তা সব পানির নীচে ; এ সব রাস্তাগুলোতে কোন যানবাহন চলে না। মাটির রাস্তা, মাঝে একটা নদী পড়ে এবং দুইটা ছোট খাল আছে। খরা মৌসুমে শুধু গরু মহিষের গাড়ী চলে।

ব্রিটিশ আমলে এই ব্রহ্মপুত্র নদ এতটাই প্রশস্ত ছিলো যে, নদী পাড়ি দিতে এক দূপুর লেগে যেতো। মেলান্দহ রেল স্টেশন হতে সেই শেরপুর শেরীঘাট, মাঝে শুধু জলরাশি আর জলরাশি। প্রবল স্রোত ছিলো, আর পূবালি বাতাস থাকলে তো কথাই নাই, মাথা সমান ঢেউ ভাঙ্গতো।বাতাস থাকলে মাঝিরা নদী পাড়ি দিতে সাহস পেতো না।

বাতাস না কমলে দুএক দিন অপেক্ষা ছাড়া কোনো উপায় ছিলো না।

আজ শনিবার জামালপুর হাট। হাছেন শেখ পাট বিক্রি করতে যাবেন হাটে। গ্রাম থেকে প্রতি হাট বারে তিন চারটি নৌকা যায় চাপাতলা ঘাটে, নৌকায় কোন ছৈ নাই। বৃষ্টি এলে ছাতি মাতাইল একমাত্র ভরসা। নৌকা চলে, লগি, দাঁড়ের বইটা ও পাল তুলে। হাছেন, কাসেমের নৌকায় পাট তুললো,পাঞ্জাবি গায়ে জড়িয়ে, ব্যাগটা হাতে নিয়ে, পান চিবাইতে চিবাইতে নৌকায় উঠে বসলো। যে মানুষ উঠেছে , তাতে আর তোলা যাবে না। নৌকার কানায় কানায় পানি ছুঁইছে। একজন মানুষও তুললে কাইত মারবে। নৌকা নদীতে ভাসালো, ভাটির টানে কলকল করে চলতে লাগলো। জিগাতলা খাল পার হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে পড়লো ।স্রোতের টানে নৌকা তরতর করে চলছে । দেখতে দেখতে জামতলা সরু নদীতে ডুকে গেলো নৌকা। এখানটায় স্রোতের বেগ খুব বেশি ; স্রোতের অনুকুলে অল্প সময়ে চাপাতলা ঘাটে নৌকা ভিড়লো। ঘাটে শতশত নৌকা। একটার পিছে আরেকটা বাঁধা, এভাবে জুড়ে জুড়ে কাজ সারতে হয়।

নৌকা ভিড়তেই সকল হাটুরে নেমে পড়লো। পাটের হাট নৌকা ঘাটেই, শুধু নৌকা থেকে নামালেই পাইকারগণ ছাইক্কা ধরে। হাছেন পাইকারের কাছে ছয় মন পাট বেচলেন। ঘাটতি ধরলো পাঁচ সের, মেনে নিতেই হলো তাকে।ফইরাদের এসব অতি বাড়াবাড়ি। মানুষ কে জিম্মি কটে ঘাটতি ধরে। কিছু করারও নাই।

কাসেম বললো- মিয়া ভাই পাট বেইচা কি করবা? জমাইবা, না কি বাজার করবা?

না রে! জমানোর কোনো জো আছে? পেটের কয়লা কিনতেই যে সব ফতুর হয়া যায়।

সেটা আবার কি? বুঝলাম না!

বুঝলি না?

না!

ধান কিনবো। পেতে দানা পানি দেয়ার জন্যি।বুঝলি তো এখন?

হ। এহন বুইজা ফালাইছি মিয়া ভাই।আর কওন লাগবে না।

হাছেন বাজার ব্যাগ ও ছালা নিয়ে হাটে ডুকলো। দশ টাকায় ঝিঙাশাইল ধান কিনলেন এক মন। তখনও দেশ স্বাধীন হয় নাই। পূর্ব পাকিস্তান। চালের কেজি বার আনা। ধান দশ টাকা মন। কিন্তু টাকার খুব অভাব ছিল। দশ টাকা হলেই অনেক খরচ কেনা যেতো।ধান নৌকায় রেখে আবার ডুকেন হাটে।

মাইজলা মেয়েটা, জামাই বাড়ি থেকে বাড়ি এলো, এক খান শাড়ি কাপড় দেয়া দরকার। হাছেন কাপড়ের দোকান হতে ফেরোজা রঙের একখান শাড়ি কিনলেন। বাজার শেষে এক পোয়া পাকিস্তানী বুট কালাই কিনলেন , এটা খাইতে অনেক মজা তাই এটা কেনাই চাই। সবার শেষে একটা চাঁদপুরের ইলশা মাছ কিনলো।যদি নরম হয় এজন্য পরে কেনা।

সবায় কেনাকাটা শেষে নৌকায় উঠলো। কিন্তু নৌকার মাঝি কাসেমের এখনো দেখা নাই।কই যে গেলো কইয়া গেলো না - হাছেন বললো। উজান টানে নাও যাইবো, বাতাস বা থাকলে তো বাদামে কাম অইবো না। দাঁড় টাইনা টাইনা নিতে অইবো। পানির যে হোত, নাও তো আগাবারই চায় না। উজান বেগ এত বেশী, নাও টানতে হিমসিম খাইতে অয়। কাসেম দেরী কল্লে তো রাইত অইবো। অস্থির হয়ে উঠলো সবায়। কাসেম এলো হেই আছরের পর।

তাছেন বললো- আর দেরি কইরো কাসেম। তারাতারি নাও ছাইরা দেও। দেরি করলে তো রাইত অইবো। বাতাস নাই, বাদামে বাতাস পাইবো না।

চলবে

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register