Mon 22 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে উজ্জ্বল কুমার মল্লিক (পর্ব - ১)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে উজ্জ্বল কুমার মল্লিক (পর্ব - ১)

সাদা মিহি বালি

প্রথম অধ্যায় (প্রথম পর্ব)

গঙ্গার একটা শাখা ভাগীরথী তথা হুগলী নদী নাম নিয়ে এই আধা- শহরের পুব দিক দিয়ে বহে চলেছে। শহরের প্রধান রাস্তাও নদীর পশ্চিম পাড়ে, উত্তর- দক্ষিণ মুখো; বাজার- দোকান, বসতি সব, সবই ঐ রাস্তার পশ্চিম দিকে; অবশ্য, পুব দিকে নদী ও রাস্তার মাঝে বেশ কয়েকটা উঁচু জায়গায় গড়ে উঠেছে দোকান পাট ও রয়েছে জেলেপাড়া। প্রধান রাস্তা থেকে বেশ কয়েকটা জায়গায় পুব দিকে গঙ্গায় নামার পাকা বাঁধানো ঘাট নেমে গেছে। এখন অবশ্য, ঘাটের শেষ সিঁড়ি থেকে বেশ কিছুটা হেঁটে গেলে, তবেই জলের স্পর্শ মেলে;বর্ষাকালে, অবশ্যই জলের স্ফীতি ঘটে, জলের রং তখন ঈষৎ লাল; নদী- খাত জলে টইটম্বুর, ঘাটেই তখন জলে পা ডোবানো যায়। নদী- খাত দেখলেই বোঝা যায়, এককালে নদীর নাব্যতা কেমন ছিল! বর্ষায়, জেলেপাড়া হয় বানভাসি; স্থানীয় স্কুলগুলোতে তখন ওরা আশ্রয় নেয়। বর্ষাকালে, নদী - খাতে বাঁধ দিয়ে তৈরি জলাধারের বাঁধ কেটে জল ধরা হয়। বর্ষা শেষে জল নেমে গেলে আবার বাঁধ দিয়ে চলে অপেক্ষা। জল শুকিয়ে, জমা পলি একটু শক্ত হলে, তা কেটে এক জায়গায় জড় করা হয়; চলে পক্- মিলে মাটির প্রস্তুতি। ঐ মাটি দিয়ে ডাইসে ফেলে চলে ইট তৈরি। চারদিকে নদীর সাদা বালির চাকচিক্য; ইটেতে রয়েছে বালির আস্তরন। সারি সারি ইট শুকোনো চলছে, চলছে ধপাধপ করে কাঁচা ইট তৈরি। শুকোনো ইট দিয়ে পাঁজা করাও হচ্ছে। এক একটা ইট- ভাটায় কয়েক শো, বিহার, ঝাড়খণ্ড ও উড়িষ্যার আদিবাসী শ্রমিক কাজ করে। গঙ্গার সাদা বালির আস্তরনের উপরই এ সব কর্ম-কাণ্ড;পরে ঐ সব শুকোনো ইট চলে যায় চুল্লীতে। ইট সাজানো, গুড়ো কয়লা দিয়ে চুল্লী জ্বালানোর জন্য দক্ষ শ্রমিকের দরকার। কে কেমন দক্ষ শ্রমিকদের আগাম দাদন দিয়ে নিজের খোলায় আনতে সক্ষম হবে,এর জন্য প্রত্যেক ইটখোলার মুনশিদের মধ্যে চলে অলিখিত প্রতিযোগিতা; ইট পোড়ানোর দক্ষতার উপরই নির্ভর করছে, উৎপাদনের উৎকর্ষ। তারপর চলে, পোড়ানো ইটের শ্রেণী বিভাজন, সে এক বিশাল কর্মকাণ্ডের ব্যাপার। সব ইট খোলার মালিকই এ অঞ্চলে বিহারী; আজ নয়, সেই বৃটিশ আমল থেকেই চলে আসছে। রাজনাথ সিং'র নাতি- পুতিরাই এ অঞ্চলের ইট- খোলার সঙ্গে সংস্পৃক্ত। কোনো বাঙ্গালী হিন্দুর কাছে মাটি পোড়ানো ছিল গর্হিত কাজ, তাই বাঙ্গালী হিন্দু এ ব্যবসায়ে নামেনি;ফলে, শহরের নদী-পাড় হয়েছে হাতছাড়া। ইদানীং, কিছু বাঙ্গালী সে কুসংস্কার কাটিয়ে এ ব্যবসায়ে নেমেছে; নামলে কী হবে, নদী- পাড় তো বে- হাত; মাঠে র মাটি কেটে, মাটি কিনে, মাঠেই হচ্ছে চুল্লি। মাঠের মাটির ইটের কোয়ালিটি, পক-মিলের পলির ইটের কাছে কিছুই নয়; তাছাড়াও রয়েছে কত বাধা, মাটির চড়া দাম, পুলিশি হুজ্জোত,লোকাল নেতাদের বায়না; এ সব মিটিয়েও টিকে আছে, কেবল চাহিদা আকাশ ছোঁয়া বলে। কিছু উদ্যোগী বাঙ্গালী, তাই এ ব্যবসায়ে নামতে পিছপা নয়।

চলবে

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register