Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে নিলাম সামন্ত (পর্ব - ২৯)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে নিলাম সামন্ত (পর্ব - ২৯)

মহাভারতের মহানির্মাণ (অশ্বত্থামা)

বেশ কয়েকটি চরিত্র নিয়ে কাটা ছেঁড়া করার পর মহাভারতের প্রতি অদ্ভুত আসক্তি জন্মেছে। এর মধ্যেই টিভিতে নতুন মহাভারত সিরিয়ালটি দেখেছি, এছাড়াও মহাভারত সংক্রান্ত অনেক গল্প পড়েছি। নানান ধরনের ভিডিও দেখতে গিয়ে মহাভারতের অন্তর্নিহিত অর্থের ওপর প্রশ্ন জেগেছে। আমাদের দেশে মহাভারত গবেষকের অন্ত নেই। শুধু মহাভারত কেন যে সমস্ত পৌরাণিক গল্প কাহিনী রয়েছে তার সত্যতা অসত্যতা বিচারে নানান ধরনের বই লেখা হয়েছে। এমনকি অনেক লেখক ভিডিও করে তাদের বক্তব্য মানুষের কাছে তুলে ধরেছেন। কয়েকদিন আগে এরকমই এক ভিডিও দেখছি সেখানে বক্তা বলছেন সাত চিরঞ্জীবীর কথা। কোন কালেই এসব বিশ্বাস হয়নি সেদিনও যে হয়েছে তা নয়, কিন্তু চিরঞ্জীবী শুনে মনের মধ্যে অদ্ভুত অনুভূতি তৈরি হয়। বারবারই ভেবেছি সেই একটা মানুষ যুগ যুগ ধরে বেঁচে রয়েছে! এও কি সম্ভব? বিজ্ঞানের কোন যুক্তি এই সমস্ত কিছু মেনে নেয় না। তারপর নানান ধরনের ভিডিও দেখি বর্তমানে বেশ কিছু সিনেমা বাজার কাঁপাচ্ছে যেখানে এই চিরঞ্জীবীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অশ্বত্থামাকে কেন্দ্র করে গল্প তৈরি হয়েছে। শোনা যায় তাকে মাঝেমধ্যেই কেউ না কেউ দেখেছে। অশ্বত্থামা সম্পর্কে অল্প বিস্তার জানার পর একদিন নিজেই মনে মনে ভাবছি কোন এক জায়গায় কৃপাচার্য এবং অশ্বথামার দেখা হয়েছে, আর অশ্বথামা কৃপাচার্যকে বলছেন, "শুধু যে ভালো কাজ করে বা আশীর্বাদ হেতুই অমর হয়ে পৃথিবীতে টিকে থাকা যায় তা কিন্তু নয়, আমাকে দেখুন আমি অভিশাপে চিরঞ্জীবী কিন্ত বিখ্যাত আজও। মানুষ আপনার থেকে আমাকে নিয়ে বেশি কথা বলছে, যদি নাও বলত তাহলেও আমরা কিন্তু একই নৌকায়।" আমার এই কল্পনা যদি সত্যি হয় তাহলে কৃপাচার্য অশ্বথামা কে ঠিক কি উত্তর দিতেন? যদিও কৃপাচার্য আর অশ্বত্থামা দু'জনে বরাবরই একই নৌকায় থেকেছে, তা সে বাল্যকালই হোক বা কুরুক্ষেত্র যুদ্ধই হোক । মামা ভাগ্নে জুটি যে! পুরান বা গল্প কাহিনী বলছে কলি যুগ শেষের সময় কৃপাচার্য অশ্বথামা দুজনেই কল্কি অবতারের শক্তি বাড়ানোর জন্য চিরঞ্জীবী হয়ে রয়েছেন। যাদের হাত ধরে আবারও সত্যযুগের নির্মাণ হবে। অশ্বথামা কেন চিরঞ্জীবী তা অল্পবিস্তর আমরা সবাই জানি বিশেষ করে যারা মহাভারতের ন্যূনতম গল্পটুকু জানেন তাদের সবার কাছেই গোচর। এখন কথা হচ্ছে অশ্বথামা কেনই বা এতখানি ক্রোধী পুরুষ ছিলেন? যেখানে দ্রোণাচার্যের মত অস্ত্রশিক্ষাগুরু পুত্র এবং ঋষি ভরোদ্বাজের নাতি, কৃপাচার্যের ভাগ্নে, সেখানে অধিগুণ সম্পন্ন মানুষই কাম্য৷ অথচ ক্রোধ তাকে সর্ব ক্ষেত্রেই খানিকটা পিছিয়ে দিয়েছে৷ অংশাবতরণ পর্বে যেখানে মহাকবি সমস্ত চরিত্রের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তাদের পূর্বজন্ম সংক্রান্ত এক একটি দেবতাকে উল্লেখ করেছেন সেখানে অশ্বথামার বিষয়ে লিখেছেন শিব ও যমের বৈশিষ্ট্যে তৈরি অশ্বথামা। আমরা জানি যে গুরু দ্রোণাচার্য শিবকে সন্তুষ্ট করার জন্য কঠিন তপস্যা করেন এবং তারপরেই বর্তমানে উত্তরাখণ্ডের দেরাদুনে অবস্থিত তপকেশ্বর মহাদেব মন্দিরের অংশগত এক গুহায় তার জন্ম হয়। মহাদেব আমাদের কাছে যেমন দেবাদিদেব তেমনি এটা ভুলে গেলে চলবে না মহাদেবেরও রুদ্র রূপ রয়েছে, আবার পুরান মতে যম হল মৃত্যুর দেবতা যে মৃত্যুর পর মানুষের পাপ পূণ্যের বিচার করে শাস্তি নির্ধারণ করে।অশ্বথামা কিন্তু কোন কিছু রেয়াত না করেই দন্ড দেন। অশ্বথামার জন্ম বৃত্তান্তের কথা বলতে গিয়ে একটা কথা মনে পড়ল, এত নাম থাকতে কেন অশ্বথামা! আসলে জন্মানোর পরেই ঘোড়ার স্বরে চিৎকার করে কেঁদেছিল তাই অশ্বথামা। শিবের আশীর্বাদে জন্ম হয়েছিল বলে তার কপালে একটি মহামূল্যবান রত্ন ছিল। যা মানুষের নীচের সমস্ত জীবের ওপর ক্ষমতা দেয়, এছাড়াও ক্ষুধা তৃষ্ণা ক্লান্তি বার্ধক্য সমস্ত ধরনের রোগ অস্ত্র ও দেবতাদের থেকে রক্ষা দেয়। অর্থাৎ এই চিরঞ্জীবী জন্ম নিয়েছে অনেক অনেক শক্তি সাথে করে। নির্দ্বিধায় বলতে পারি সে শক্তিশালী সে বীর। তবুও সে চিরঞ্জীবী হয়েছে অভিশাপের কারণে। তার ভেতর আগ্নেয়গিরির লাভা স্রোতের মতো বইতে থাকা ক্রোধ কখনোই সেরার সেরা বীর হিসেবে মহাভারতে জায়গা দেয়নি। চলবে...
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register