Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

নভেলা গল্প হলেও সত্যি-তে রাজদীপ ভট্টাচার্য - ধারাবাহিক (রু)

maro news
নভেলা গল্প হলেও সত্যি-তে রাজদীপ ভট্টাচার্য - ধারাবাহিক (রু)

ষষ্ঠ পর্ব

৬. বিডিও অফিসের সামনে বাসটা নামালো যখন প্রায় দশটা পনের। সাধারণত পলাশের লেট হয় না কোনোদিন। আজ তাই অস্বস্তি হচ্ছিল ভিতরে ভিতরে। তবে কিছু কলিগ তো এটাকেই দিব্যি অভ্যেস করে নিয়েছে প্রতিদিনের।

একাউন্টসের প্রবীরদা বললেন — পলাশবাবুর দেরি হল যে? আপনি তো কখনো লেট করেন না!

— আসলে এক বন্ধুর বাড়িতে ছিলাম দুদিন। সেখান থেকে বাসে আসছি। তাই…

আজও দেরি হতো না। এর জন্য পুরোপুরি ইন্দ্রাণী দায়ী। সকাল সাতটার পরে ঘুম ভাঙলো। চকিতে মনে পড়ল গতকাল রাতের কথা। পাশে তাকিয়ে দেখল ফাঁকা। ইন্দ্রাণীর কোনো চিহ্ন নেই। জল খেয়ে বাথরুমে ঘুরে এসে নিচে গেল। রান্নাঘরে ছিলো ইন্দ্রাণী। ওকে দেখে বলল — আমি তো এখনই রতনদাকে পাঠাচ্ছিলাম ডাকতে। এসেছ ভালো হয়েছে। চা খেয়ে নাও।

চা খেয়ে উপরে এসে টয়লেটে গেল আবার। একেবারে স্নান করে বেরুবে। কমোডে বসে ভাবছিল রাতের কথা। ইন্দ্রাণীর চোখে মুখে অন্ধকারের সেইসব অশ্রুত বর্ণমালার কোনো ছাপ নেই। কথাবার্তাও অতি স্বাভাবিক। যাইহোক খুব দ্রুত সব সেরে ড্রেস করে ব্যাগ গুছিয়ে নামল পলাশ। আধঘন্টা অন্তর বাস পাওয়া যায় এখানে। সাড়ে আটটার বাস ধরে ফেলতে পারলে দশটার খানিক আগেই নেমে যাবে অফিসের সামনে। কিন্তু নিচে নামতেই জোর করে টেবিলে বসিয়ে দিল ইন্দ্রাণী। এক বাটি নুডলস। ধোঁয়া বেরুচ্ছে। তাকে ঠান্ডা করে পেটে পুরে তবে উঠতে পারল চেয়ার থেকে। অবশ্য রতনদা ততক্ষণে একটা ভ্যান ডেকে এনেছে। ফলে পরের বাস ধরে মাঠপুকুরে নামতে নামতে একটু দেরি হয়েই গেল।

বেরুবার সময় ইন্দ্রাণী বলল — ভয়ে এদিকে আসা বন্ধ করে দিও না যেন। রেমি ফিরলে আবার হুট করে চলে এসো।

— আসবো। বলে মৃদু হেসে ফেলল পলাশ।

— আমি সন্ধের পরে ফোন করব। সাবধানে যেও।

বিকেলে ঘরে ফিরতে না ফিরতে সুমি এসে হাজির। পলাশ কে জরিপ করে বলল — কোথায় গেছিলেন হঠাৎ করে?

সব খবরাখবর নিয়ে আধঘন্টা বকবক করে তবে উপরে গেল মেয়েটা। হাতমুখ ধুয়ে পোশাক পালটে বিছানায় পিঠ এলিয়ে দিল পলাশ। এই কদিন মায়ের সাথে ঠিকঠাক কথা বলা হয়নি। ফোন করে সব খবর নিল। সামনের শনিবার বাড়ি যেতেই হবে।

সাড়ে সাতটা নাগাদ ফোন করল ইন্দ্রাণী। জানতে চাইল — বাসে ফিরতে কোনো সমস্যা হয়নি তো?

— না না, একটু দেরি হয়েছিল শুধু।

— আর একটা দিন থেকে গেলেই পারতে। ভয়ে পালালে নাকি?

— ধ্যুৎ, কি যে বলো!

— কাল রাতের পেত্নীর উপর খুব রাগ করেছ?

— একদম না। তুমি আমাকে প্রথম এক্সপিরিয়েন্স দিলে। রাগ হবে কেন!

— আমি খুব অন্যায় করেছি। তোমাকে জোর করে। ক্ষমা করে দিও।

— দ্যাখো, আমরা দুজন অ্যাডাল্ট মানুষ। সিদ্ধান্ত আমাদের। আমি শুধু ভাবছি রেমির কথা। ও কোনোভাবে জানলে খুব কষ্ট পাবে।

— না, রেমির কষ্ট পাওয়ার কিছু নেই। ও ভীষণ ভালো ছেলে। আমাকে খুব খুব কেয়ার করে। কিন্তু এই ব্যাপারটায় ও খুবই অসহায়।

— মানে?

— রেমির কিছু ফিজিক্যাল লিমিটেশন আছে। তুমি বুঝবে না।

— ঠিক কি সেটা বল আমায়।

— আট-নয় বছর আগে ওর একটা কার্ডিয়াক অপারেশন হয়। একচুয়ালি ও ছোটো থেকেই ইস্কিমিয়ায় ভুগছে। বেচারার হার্ট সমান গতিতে চলে না সবসময়। অপারেশনের পরে এখন ওকে নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়। যা ওর ব্লাডপ্রেশারকে চব্বিশ ঘণ্টা নিয়ন্ত্রণে রাখে।

— এর সাথে ফিজিক্যাল লিমিটেশনের কী সম্পর্ক?

— জরুর আছে পলাশ বাবু। অনুভব করেছি তাই বলছি।

ছোটোবেলায় টিভিতে স্যানিটারি ন্যাপকিনের বিজ্ঞাপনে মেয়েটির বলা নকল করে কথাটা বলল ইন্দ্রাণী। শুনে মৃদু হেসে ফেলল পলাশ। তারপর নিজেকে কন্ট্রোল করে বলল — কী জানি! এসব বিষয় আমার জানার বাইরে।

— এই ধরনের ওষুধ রেমির ব্লাডপ্রেশার, হার্টবিট -এই সবকিছুকে কমিয়ে রাখে ফলে একটা সাইডএফেক্ট বলতে পার - একরকম ডেফিসিয়েন্সি।

— তাহলে?

— তাহলে আর কি! একজন ভালো মানুষ পেলে অনেক কিছু না পাওয়াও ভুলে থাকা যায়। তবে এর পরেও সমস্যা রয়েই যায়…

— সেটা কিরকম?

— নাগালের মধ্যে আরেকজন ভালো মানুষ চলে এলে কখনো কখনো ভুল হয়ে যায়। নিমেষের মধ্যে খিদে জেগে ওঠে। আর ওই সর্বগ্রাসী ক্ষুধা ভুলে থাকা তখন অসম্ভব হয়ে পড়ে।

— হুম।

— কিসের হুম! শুনি…

— অই সর্বগ্রাসী ক্ষুধা… মানে, অনুভব করেছি তাই বলছি!

— ভালো হবে না পলাশ…

৭. গত এক সপ্তাহ ঝড়ের মতো কেটে গেল। আর কয়েক মাস পরেই ভোট। তাই শেষ মুহূর্তের ভোটার লিস্ট সংশোধন চলছিল অফিসে। আর এই দায়িত্বের সবটাই পলাশের ঘাড়ে। ফলে নাওয়া খাওয়া ভুলে এই কদিন কাজ করতে হয়েছে। এরমধ্যে কোলকাতায় গেছিল গত শনিবার। বাবাকে ডাক্তার দেখানো হল। আপাতত মাস খানেক ওষুধপত্র চলবে। তারপর আরেকবার দেখে ডাক্তারবাবু অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেবেন। মায়ের সাথে বেরিয়ে পুজোর কেনাকাটা অনেকটাই করা হয়েছে। নিজের বোন বা দিদি না থাকলেও খুড়তুতো পিসতুতো দাদা - দিদিদের জন্য কিনতেই হয় প্রতিবার। এসবই ঠিক ছিল। কিন্তু মা এক নতুন ফ্যাকড়া জুড়েছে হঠাৎ।

প্রতি সপ্তাহে দিন দুয়েক সারদা আশ্রমে যাওয়া শুরু করেছিল মা। সেখানেই কোন বান্ধবীর মেয়েকে দেখে তার নাকি বেশ পছন্দ হয়েছে। তাই বাবাকে নিয়ে পলাশকে একদিন দেখতে যেতে হবে বলে একরকম বায়না ধরেছে। এই দফা কোনোপ্রকারে ম্যানেজ করে পালিয়ে এসেছে পলাশ কিন্তু বেশিদিন এভাবে যে চলবে না তা ভালোই বুঝেছে। অথচ আপাতত এই নতুন ঝামেলায় পড়ার কোনো ইচ্ছে ছিল না ওর।

এরমধ্যে রেমি ফোন করেছিল একদিন। ও ফিরে এসেছে বাড়িতে। খোয়াই-এর স্টুডিওতেও নিয়মিত যাচ্ছে দুজনেই। সেদিন ফোনে বলল — মেনি থ্যাংকস ব্রাদার। আমি বাইরে ছিলাম তখন বাইচান্স তুমি চলে আসায় খুব উপকার হয়েছে। ইন্দ্রাণী টানা অতদিন একা বোর ফিল করত। তোমার মতো গুড কোম্পানি তা হতে দেয়নি।

বিষয়টি নিয়ে একটু বাড়তি সচেতন ছিল পলাশ। ও বলেছে — তোমাদের বাড়িতে গিয়ে আমিও খুব আনন্দ পেয়েছি। অসাধারণ পরিবেশ। আর ওখানে প্রত্যেকেই খুব আন্তরিক।

— এবার আমি থাকাকালীন ফোন করে আসবে। একসাথে খুব মজা হবে তিনজনে।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register