Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সম্পাদকীয়

maro news
সম্পাদকীয়

বৃষ্টিকথা

বৃষ্টির শব্দ কি শুধু টুপটাপ, ঝিরঝির, ঝমঝম? বৃষ্টিই যখন একাধিক রকম তখন তার শব্দ তো একেক রকম হবেই। ইলশেগুঁড়িকে বলা যেতে পারে নিঃশব্দ বৃষ্টি আবার শিলাবৃষ্টি সবচেয়ে বেশি চেঁচামেচি করে। আর যদি পায় টিনের চাল, তার আনন্দ দেখে কে। ঝমঝমে বৃষ্টি, ঝিরঝিরে বৃষ্টি পড়ে এদের মাঝে। আবার কখনো কখনো আকাশ ঢালে টুপটাপ বৃষ্টি। কখনো বড় ফোটার বৃষ্টি গাছের পাতায় তো আটকে যায় কিন্তু গাছের পাতা না থাকলে অত্যাচার চালায় মাটির ওপর। আর ক্ষুদ্র কণার বৃষ্টি গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে ঢুকে শিকড়ের মাটিতে আলতো চুম্বন করে। জলের ভৌত রূপ পরিবর্তনের এ খেলায় শিশিরকেও এক ধরনের বৃষ্টি বলা যেতেই পারে। আবার কুয়াশাও কিন্তু ঝরে পড়ে নীচের দিকেই। মনে আছে যখন শীতের রাতে টিউশন থেকে ফিরতাম, টুপির কিনারা দিয়ে জলকণা বরফকণা হয়ে ফুটে উঠতো। সেও তো সেই কুয়াশার অধঃক্ষেপের ফল। একটু পাহাড়ি অঞ্চলে গেলে দেখা যায় মেঘেরা গাল ছুঁয়ে যায়। আর গালে রেখে যায় স্নেহার্দ্রতা। ক্রিপ্টোমেরিয়া অরণ্য সবসময় ভিজে থাকে। অথচ বৃষ্টি নেই, শুধু মেঘেদের আনাগোনা। এও তো একধরনের বৃষ্টি। এরপর ল্যাটিটিউড বা অল্টিটিউড যত বাড়ে তত বৃদ্ধি পায় তুষারপাতের সম্ভাবনা। কোথাও পেঁজা তুলোর মত নিঃশব্দ স্নোফল, আবার কোথাও আইস ক্রিস্টাল পতনের শব্দ। এতো গেলো বিশুদ্ধ বৃষ্টি। কিন্তু এটা তো দূষণের যুগ। তাই অবধারিত ভাবে এসে যায় অম্লবৃষ্টির নাম। সালফিউরিক অ্যাসিড ও নাইট্রিক অ্যাসিডের বৃষ্টি অবশ্যই ভীষণ ক্ষতিকারক। এছাড়াও বাতাসে ভেসে থাকা এ্যারোসল (ধূলিকণা, পরাগরেণু, কয়লার গুঁড়ো বা ভলক্যানিক অ্যাশ) বৃষ্টি বাহিত হয়ে নেমে আসে পৃথিবীর বুকে। আচ্ছা এ তো গেলো ভেজা বৃষ্টির কথা। ভেজা বৃষ্টি বললাম কারণ এর বিপরীতটাকে তো আনতে হবে। কিন্তু ভেজার বিপরীত তো শুষ্ক। শুষ্কই যদি হয়, তাহলে তা বৃষ্টি হয় কেমন করে? হ্যাঁ হয়। যেমন ধুলোর বৃষ্টি বা বালির বৃষ্টি। আবার গ্রীষ্মকালে যখন মেঘের দেখা মেলেনা, তখন সূর্য রেগে গিয়ে অগ্নিবৃষ্টিও করে ফেলে। আবার কোন ভালো কাজকে বাহবা দিতে পুষ্প বৃষ্টিও হতে পারে। এ তো গেলো পরিচিত বৃষ্টি। এবার আসি পৃথিবীর কিছু রহস্যময় বৃষ্টি সাথে করে। মাছ বৃষ্টি... আকাশ থেকে জলকণার সাথে মাছ পড়ছে। কি অবাক কাণ্ড। জল না হয় সূর্য তাপে বাষ্পীভূত হয়ে আকাশে পৌঁছায়, কিন্তু মাছেরা কি করে পাড়ি দিচ্ছে এই জমিন আসমান পথ? নাকি মাছগুলো এলিয়েন? ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখা যায় টর্নেডো বা টাইফুন অধ্যুষিত অঞ্চলে এমন মাছ বৃষ্টি বেশি হয়। থাইল্যান্ড বা ইংল্যান্ড, সিডনি বা ফ্লোরিডা এসব অঞ্চলে দেখা গিয়েছে এমন বৃষ্টি। আসলে টর্নেডো যখন সমুদ্র বা জলাভূমির ওপর দিয়ে যায় তখন যে জলস্তম্ভ সৃষ্টি হয় সেই জলস্তম্ভে চড়ে পাড়ি দেয় ওরা। মাছেদের সাথে আরো ছোট ছোট জলজ প্রাণীকূল। তারপর বাতাসের বেগ না কমা পর্যন্ত ভেসে থাকে মেঘের সাথেই। আর তারপর বৃষ্টি ফোঁটার সাথে খেলতে খেলতে আবার নেমে আসে পৃথিবীতে। এবারে আসি শাওয়ার অব সালফারের ঘটনায়। বসন্ত কালে পাইন বনে এমনটা দেখা যায়। সালফার এখানে আক্ষরিক অর্থে ব্যবহৃত হয়নি। আসলে এই সময়টা পাইন গাছের পরাগ মিলনের সময়। তাই মেল কোণ থেকে পরাগ বেরিয়ে এসে বাতাসের ধূলিকণাকে আশ্রয় করে গন্ধকের বর্ণের ন্যায় রঙ ধারণ করে। এই ঘটনাকেই শাওয়ার অব সালফার বলে। শাওয়ার মানেও তো বৃষ্টি, তাই চট করে একটু শাওয়ার অব সালফারের সৌন্দর্য্যের অবতারণা করলাম। বৃষ্টির কি কোন রঙ হয়? বৃষ্টি তো জল, আর জল যেহেতু বর্ণহীন, তাই বৃষ্টিও বর্ণহীন। কিন্তু, রক্ত তো লাল... রক্তের কথা আসছে কি করে? আসছে করণ এবারে বলবো লালবৃষ্টির কথা। আমাদের দেশেই কেরলে এমন ঘটনা ঘটেছে। এর সাথে সাথে হলুদ, সবুজ ও কালো বৃষ্টিও দেখা গেছে। এই রক্ত বৃষ্টির কারণ হিসেবে কেউ বলেছেন উল্কা বিষ্ফোরণ এর কথা, কেউ বলেছেন বহির্বিশ্বের প্রাণের কথা আবার কেউ বলেছেন ট্রিন্টিপোহলিয়া নামক লাল শৈবালের উপস্থিতির কথা। রহস্যের সমাধান আমার কাজ নয়, তবে উল্কার কথা শুনে মনে পড়ে গেলো উল্কা বৃষ্টির কথা। আহারে, এমন উল্কাবৃষ্টির জেরেই তো ডাইনোসররা অবলুপ্ত হয়ে যায়। আমরা তো দেখছি আধুনিক পৃথিবীর বৃষ্টি, আদিম পৃথিবীতে যে আরও কত রকম বৃষ্টি ছিল। যাক সে কথা, অন্য গ্রহে কেমন বৃষ্টি হয় দেখে নেওয়া যাক। বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস ও নেপচুনে হীরক বৃষ্টি হয়। সাথে হয় নিয়ন বৃষ্টি। না না, নিয়ন বাতির আলোকবৃষ্টি নয়। তরলিকৃত নিয়ন বৃষ্টি আকারে ঝরে পড়ে। শনির উপগ্রহ টাইটানে মিথেন বৃষ্টি হয়। শুক্র গ্রহে হয় সালফিউরিক অ্যাসিড বৃষ্টি। সালফিউরিক অ্যাসিডের মেঘের কারণেই তা সূর্যের আলোকে উজ্জ্বল ভাবে প্রতিফলিত করে, তাই তো সে এত সপ্রতিভ ভোর ও সন্ধ্যাকাশে। আমাদের চাঁদে তো আবহমণ্ডল নেই, তবুও সেখানে অগ্নুৎপাতের পর লাভা বৃষ্টি হয়। সৌর জগতের বাইরে OGLE-TR-56b ও WASP-76b গ্রহে গলিত লোহা নেমে আসে বৃষ্টি রূপে। HD189733b গ্রহে কাঁচেরা ঝরে পড়ে ঝনঝন শব্দে। আবার আমাদের এত বসতি স্থাপনের ইচ্ছা, তবু মঙ্গলে কোন বৃষ্টিই নেই। কি অদ্ভুত দেখো, হীরে দামী না প্রাণ - প্রশ্নে যে কেউ বলবে হীরে, কারণ কত মানুষ হীরের জন্য প্রাণ হারিয়েছে। চাঁদের পাহাড় পড়লেই তো কত উদাহরণ মেলে। কিন্তু সত্যিই কি তাই? নেপচুনে যেখানে বৃষ্টির মত ঝরে হীরে, সেখানে প্রাণই নেই। তাই বলাই যায় প্রাণই বেশি দামী। তাই মহাজাগতিক বৃষ্টি সরিয়ে রেখে আমাদের সসাগরা পৃথিবীর জলীয় বৃষ্টিই অনেক দামী। এই বৃষ্টি প্রাণীর তৃষ্ণা মেটায় আর উদ্ভিদের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে। আমি এই বৃষ্টিই দেখতে ভালোবাসি জানালার ধারে বসে। তবে বৃষ্টির যে সব ভালো তা তো নয়, অতিবৃষ্টিতে বন্যায় ক্ষতিও হয় অনেক। আর একঘেয়ে বৃষ্টিও হানিকারক। এক ফোঁটা রোদ না পেয়ে আমার সাধের ভেনাস ফ্লাই ট্র্যাপ মরে গেলো। অনেকে বৃষ্টি-ভিজতে ভালোবাসে, রোম্যান্টিক সিচুয়েশন বা সাহিত্য সৃষ্টিতে বৃষ্টির ভূমিকা অনস্বীকার্য হলেও আমার বৃষ্টিতে ভিজতে একটুও ভালো লাগে না। আমার যা ভালো লাগে, তা হলো, টিনের চাল, ঝিরঝির টুপটাপ, আর খোলা জানালায় জলছাট।

সায়ন্তন ধর
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register