Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

গদ্যের পোডিয়ামে পৌলমী মুখার্জী

maro news
গদ্যের পোডিয়ামে পৌলমী মুখার্জী

গ্ৰুপ

"ও দাদা!আরে ও দাদা!আপনার রুমালটা।"বলেই ঝপ করে রুমালটা জানলা গলিয়ে ফেলে দিল রুমি।স্বাগতা আর পিঙ্কি ততক্ষণে খিলখিলিয়ে হাসি জুড়েছে।"হু হু বাওয়া, নটা পনেরোর লোকাল, এখানে ওসব চলবে না।কোত্থেকে যে আসে মাওলাগুলো!"স্বভাবতই আপিসযাত্রী ভদ্রলোকটির মুখে একগাল মাছি।ওরা নির্বিকার শাশুড়ি, ননদ কূটকচালি জুড়েছে ততক্ষনে। "এই দেখ মালটা কেমন আড়চোখে দেখছে মাইরি।একটা চোখ মেরে দিলাম।",,,"হো হো হা হা!" ওদিকে তখন প্রচণ্ড ক্ষিপ্রতার সাথে তাসের বন্টন শুরু হয়ে গেছে।তার সঙ্গে চলছে মেসির মাসির ষষ্ঠীপুজো।কখনো কখনো মোদী আর দিদিও সে পুজোর ফুল পাচ্ছে বইকি। "কালামানিক!কালামানিক নেবে?"যে লোকটা কালামানিক নামে দাঁতের মাজন বেচছে তার গায়ের রঙ মিশমিশে কালো।আর তারসঙ্গে মানানসই ধবধবে সাদা দাঁতের বাহার। নুঙ্গি পেরোতে না পেরোতেই উঠে পড়বে অমিতদা ঝুনঝুন শব্দের সুরবাহারকে সঙ্গে নিয়ে। দুপাশের সিটের মাঝবরাবর সিলিংয়ে ঝোলা হাতলে লোহার আংটা ঝুলিয়ে দেবে।তখন যাতায়াতের পথে যতই ভ্রু কোঁচকাও না কেন কেউ পাত্তাই দেবে না।কেননা মেয়েমহলে তখন হার, চুড়ি, ক্লিপ কেনার হুল্লোড় লেগেছে।মানিকদা উঠবে ঠিক সন্তোষপুর থেকে যত রাজ্যের ছোট, হাকুষ্টির সস্তাদরের ফল নিয়ে।তাপ্পর, শেয়ালদা পৌঁছতে না পৌঁছতেই সব ফক্কা।তখন শুধু ফটাস জলের ফট ফট আওয়াজ। রোজ রোজ এসবই প্রাণভরে দেখে মিঠি। এই শহরে মাত্র একবছর হলো এসেছে ওরা।বাবার টাটা স্টিলে চাকরীর সুবাদে ও জামশেদপুরে বড় হয়েছে।ওখানকার আভিজাত্যপূর্ন কসমোপলিটান পরিবেশের সঙ্গে এখানকার কোলাহলময় পরিবেশের স্বর্গ-মর্ত্য প্রভেদ।এই সব হাঁ হাঁ করা পাতি মধ্যবিত্ত রুচির বাঙালী মেয়েগুলোর সঙ্গে কনভেন্টে পড়া মিঠি কিছুতেই নিজেকে মেলাতে পারে না।অগত্যা মাসের মধ্যে অর্ধেকদিনই একদম শেষ প্ল্যাটফর্ম থেকে উঠলেও ওকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই যেতে হয়।মেয়েদের গ্রূপগুলো এ লাইনে ভালোই মৌরুসী পাট্টা জমিয়ে বসেছে।মিঠি ওদের চোখে বহিরাগত।আজ মিঠি চলেছে WBCS Main পরীক্ষা দিতে।বাবা মার একমাত্র স্বপ্ন ওকে পূরণ করতেই হবে।শিয়ালদার কাছে একটি কলেজে সিট পড়েছে।সাড়ে এগারোটার মধ্যে ওকে হলে ঢুকতেই হবে।ব্রেসব্রিজের কাছে এসে হঠাৎই নটা পনেরোর লোকাল স্তব্ধ হয়ে গেল।ওভারহেড তার ছিঁড়ে গেছে।মিঠির মাথায় যেন বাজ পড়ল।স্টেশনের থেকে ট্রেন অনেকখানি দূর।নামার জায়গাও নেই।তাছাড়া এখানকার কিছুই ও চেনে না।প্রায় সকলেই কায়দা করে চাকার খাপে খাপে পা রেখে নামছে। মিঠিও খানিক চেষ্টাচরিত্র করে নামলো বটে কিন্তু খোঁচা লেগে ওর পায়ের বেশ খানিকটা কেটে গেল।হাজার হাজার লোক এই কাঠফাটা রোদ্দুরে লাইন ধরে এগোচ্ছে।কিছুদূর গিয়েই মিঠি জ্ঞান হারিয়ে রেললাইনে লুটিয়ে পড়লো। এর কিছুদিন পর দেখা গেল সেই নটা পনেরোর লোকালে মিঠি শিয়ালদা কোচিন ক্লাসে যাচ্ছে ওই মেয়েদের গ্রূপের সঙ্গে কলকল করতে করতে।এখন কালামানিককে দেখে মিঠিও খিলখিলিয়ে হাসে।আর অমিতদার কাছ থেকে কখনো কখনো কিনে নেয় সস্তার কানের দুল ওর মায়ের জন্য।মানিকদার কাছ থেকে ঝাল নুন মাখানো পেয়ারা কিনে দেয় ওর নতুন বন্ধুদের। যাদের জন্য ও সেদিন ওর গন্তব্যস্থলে সময়ের মধ্যেই পৌঁছতে পেরেছিল।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register