Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

গল্পেরা জোনাকি তে রীতা চক্রবর্তী (পর্ব - ১)

maro news
গল্পেরা জোনাকি তে রীতা চক্রবর্তী (পর্ব - ১)

নীল সবুজের লুকোচুরি

অপারেশন থিয়েটার থেকে বেরিয়ে সোজা নিজের কেবিনে ঢুকেই মিঠি মা'কে ফোন করল। প্রতিটা অপারেশনের পর এটাই ওর রুটিন।
মিঠি মানে আয়ুস্মিতা। ডাক্তার আয়ুস্মিতা একজন স্মার্ট, এট্রাক্টিভ, ড্যাশিং লেডি উইথ এ চার্মিং সফ্টহার্ট।
ওর মা ওর কাছে মাদুর্গা। দশভূজা জগৎজননীর মতো যে পৃথিবীর সব বিপরীত পরিস্থিতিতে নিজের সন্তানকে আগলে রাখে। যার কাছে সন্তানের মঙ্গলের থেকে বড় আর কিছুই নেই। তাই প্রতিটা মানত পূর্ণহলে মানুষ যেমন মায়েরপূজো দেয় মিঠিও তেমনি প্রতিটা পরীক্ষায় নিজেকে যোগ্যতার সাথে উত্তীর্ণ করে মাকে ফোন করে, মায়েরপূজো সম্পন্ন করে।
--"অপারেশন সাকসেসফুল মা। বাড়ি ফিরে তোমাকে ডিটেইলসটা বলবো।"
ডঃ আয়ুস্মিতা'কে অভিনন্দন জানাচ্ছে ওর টিমের সকলে। আজ ও নিজেও মনে মনে খুব খুশি। হার্ট স্পেশালিস্ট হয়ে অনেক হৃদয়ের কাটাছেঁড়া করতে হয়েছে ওকে এতদিন। কিন্তু আজ রিটায়ার্ড সুপার' ডক্টর আয়ান আনসারির হার্ট সার্জারিটা নিজের হাতে করতে পেরে একটা তৃপ্তির অনুভূতি হচ্ছে। ডাঃআনসারি চিকিৎসা জগতে এমন এক নাম যাকে লোকে ধন্বন্তরী বলে জানে। যাকে চোখের দেখা দেখতে পেলেই পেশেন্ট ভালো হয়ে যায়। এমন একজন স্বনামধন্য ডাক্তারের ওপেন হার্ট সার্জারি টিমের দায়িত্ব পালন করতে পেরে পরিতৃপ্ত ডঃআয়ুস্মিতা। এক স্বর্গীয় অনুভূতিতে মনটা ভরে আছে।

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ থেকে ট্রান্সফার হয়ে যেদিন প্রথম এখানে এসে জয়েন করেছিল সেদিন সুপারকে চমকে উঠেছিল মিঠি। এযেন নিজের চেহারার 'মেলভার্সান', তবে ওঁর ওয়ার্ম রিসেপশন মুগ্ধ করেছিল। মিঠিকে নিজের কেবিনে ডেকে নানান খুঁটিনাটি বিষয়ে কথাবার্তা বলেন। ফলে নতুন পরিবেশ সম্পর্কে মনের দুশ্চিন্তাগুলো কাটিয়ে উঠা সহজ হয়ে যায়। সুপারের অভাবনীয় আন্তরিকতায় মুগ্ধ মিঠি যেন পরম আপন কারোর ছোঁয়া পেয়েছিল। মনের ভেতর এতদিন ধরে যে ফাঁকা জায়গাটা ছিল সেই পিতৃস্নেহের পরশ বুঝি পেয়েছিল নিজের অজান্তেই।
অবাক হয়ে যাচ্ছিল এই ভেবে যে যাঁর ইনস্ট্রাকশনে একটা সুপারস্পেশালিটি হসপিটাল রোবটের মতো কাজ করে তিনি ব্যক্তিগতভাবে খোঁজ নিচ্ছেন ওর বাড়িতে কে কে আছেন,বাব-মা কে কি করেন, কোথায় থাকেন সবকিছু, কিন্তু কেন?
হাসি খুশি মিষ্টি মেয়েটা সব কথার উত্তরও দিয়েছিল। শুধু বাবার নাম বলতে গিয়ে একটু থেমে গিয়েছিল। আজ পর্যন্ত যে নাম ও নিজেও জানতে পারেনি বা সাহস করে জানতে চায়নি মার কাছে, সে নাম বলবে কি করে! তাই খুব স্মার্টলি বলেছিল "মা বলেছেন, বাবা ভগবান", তাই নাম নেওয়াটা বোধহয় ঠিক হবে না। এইবলে শুধু কপালে হাত ঠেকিয়ে প্রণাম করেছিল।

সুপারের স্নেহধন্যা ডঃ আয়ুস্মিতা বাড়িতে ফিরে মাকে জড়িয়ে ধরে আজকের এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনের গল্পই শোনাচ্ছিল। মা ডাক্তার সুমিতা মৈত্র কলকাতারই একটা হাসপাতালের গাইনোকোলজির HOD. দীর্ঘদিন উত্তরবঙ্গে কাজ করেছেন ডঃমৈত্র। মিঠি কলকাতায় চলে আসার পর নিজেও হোমট্রান্সফার নিয়ে কলকাতায় এসেছেন। সেই কতবছর আগে নীরব অভিমান বুকে নিয়ে এই শহর ছেড়ে, আত্মীয় পরিজন ছেড়ে চলে গিয়েছেন আর আসেননি।
আজ মেয়ের কাছে ডঃআনসারির কথা শুনতে শুনতে সুমিতা হারিয়ে যায় নিজের অতীতে। ফেলে আসা দিনগুলির স্মৃতি ভিড় করে আসে। মনে পড়ে যায় আয়ানের সাথে কাটানো দিনগুলির কথা।……..

আসছি আগামী পর্বে………

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register