Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

গদ্যের পোডিয়ামে অয়ন ঘোষ

maro news
গদ্যের পোডিয়ামে অয়ন ঘোষ

অলৌকিক পাণ্ডুলিপি

কথা দিয়ে গল্প শুরু হলে, বুকের মধ্যে বিপরীত দৃশ্য হাপর টানতে শুরু করে। রাতবিরেতে শঙ্খ লাগে ফনিমনসার ঝোপের আড়ালে। ঘুম জড়ানো চোখে উঠে বসি ক্লান্ত বিছানা ছেড়ে। টাল খাওয়া পায়ে উঠে দাঁড়াই। কুঁজো থেকে এক গেলাস জল ঠাণ্ডা জল গলায় ঢেলে ধাতস্থ হই, খানিক। চলকে পড়া জলের আড়ে চাঁদ ডুবে যায়, রঙিন ডানা মুড়ে। সোহাগ মাঝ পথে থেমে যেতেই ছটফট করে ওঠে প্রতিপদের আকাশ। পাঁজি বলছে প্রতিপদে যাত্রা মানা। তবু থামে না মন, পথ, হাওয়া, আর জল। আলোও বিজ্ঞানের কথা মেনে দ্রুতগামী। শুধু থেমে আছে শরীর। আগলে রেখেছে মাটি, শিকড়ের জটিল গোলধাঁধায়।
এমন সব ভাবনার মাঝে আকাশগঙ্গায় ঝড়ে পড়ল, দু'একটি লাজুক লেবুফুল। ওরা ফলবতী না। গর্ভের ডাক কানে পৌঁছানোর আগেই ওরা আকাশগঙ্গায় গা ভাসালো। মৎসমুখী স্রোত বইছে অতৃপ্ত চেতনায়। খানিক দূরে দেবযানী। পাশাপাশি, তবু দূরত্ব মেটে না। বাকি রয়ে যায় মৃত-সঞ্জীবনী মন্ত্রের দীক্ষা। ভ্রূ মধ্যে বারবার ভুল পথ ডেকে যায়। চোখের ওপর প্রিয় হাতের আড়াল প্রয়োজন ছিল। সে হাত কবেই ফিরে গেছে অমরাবতী। অসুর দেশে এখন চাঁদ-ডোবা রাত। তারই গায়ে সাবধানী পা রাখছে অমাবস্যার ঘুটঘুটে রহস্য। এমন রাতে গাঁয়ের লোক ঘুমপাড়ানি মাসিপিসিদের ডেকে নেয়, যে যার ঘরে। যারা এর অন্যথা করে তাদের নাকি নিশিতে ধরে। আর একবার ধরলে আর রক্ষে নেই, ঘাড়ে চেপে থাকে জীবন ভোর। সেইসব রাতে শনশন করে হাওয়া টানে। আশশ্যাওড়া গাছের মগডালে মেঘের আস্তিন থেকে নেমে এলো টুকরো টুকরো আলোর মিছিল। শুরু হলো তেনাদের সময়। নাম করলে ভারী বিপদ। তখন আর বুকের মাঝে থাকা রাম লক্ষণও কিছু করতে পারবে না। তাই ভুলেও নাম নিই না - দিদার কথা অক্ষরে অক্ষরে মেনে।
ওই যা কথায় ধরতাইয়ের মাঝে কেমন করে যেন, আমার ছোটবেলাটা টুকি দিয়ে যায়। দিদার কথা মনে পড়ে, মনে নতুন পুকুরের শালুক জলে গা ডুবিয়েই এক লাফে পুব আকাশে থিতু হতো কুসুম রঙের সূর্য। আউশের মাঠ জুড়ে বিছিয়ে থাকত সাদা সরপড়া ভোর। নাবাল ক্ষেতের পোয়াতি জল পা টিপে টিপে বয়ে যেতো পশ্চিমের খালে। রেখে যেতো একবুক মন খারাপ আর রূপোলী ইশারা। যাই হোক, আজ আর ঘুম লেখেনি প্রবীণ লিপিকার। তবু চোখ বন্ধ করে রাখি যদি ভিতর ঘরে সাজে ঈপ্সিত দৃশ্য সকল। এমন কতো রাতেই চোখের দোরগোড়ায় ঘুম দাঁড় করিয়ে রেখেছি অসম্ভবকে দেখব বলে। প্রতিবার মনে হয়েছে এই বুঝি সে এলো,দারুচিনি দ্বীপের গন্ধ নিয়ে কিংবা বিদিশার অলৌকিক নিশার মতো। নেশারাত কেটে গিয়ে দিনের আলো ঝাপটা মেরেছে চোখে, সময় সুদ সমেত উশুল করে নিয়েছে তার কাছে বাকি থাকা ঋণের বোঝা।
শূন্যের ওপর শুন্য সাজিয়ে বোঝাই করেছি অঙ্কের খাতা। উত্তরমালা জুড়ে অহেতুক কৌতুক। ললাটলিপির পরতে পরতে মঞ্জুর না হওয়া প্রার্থনা। এরই প্রান্তে ছুটির ঘন্টা বাজছে পুরনো গীর্জা ঘরে। মোমের আলোয় জ্বলজ্বল করছে কাঁটার মুকুট ছুঁয়ে নেমে আসা শান্তির প্রতীক। রুটির টুকরো আর লাল মদে খিদে মিটিয়ে লিথি নদী পেরোচ্ছে নবীন শ্রমনের দল। মন প্রাণ আবিষ্ট বোধিরূপ পরমান্নের স্বাদে। ওদের কানে কানে অক্ষয় হয়ে উঠল চর্যাগান, নৈরঞ্জনার ঢেউয়ের মন্দাক্রান্তা ছন্দে। অমিত্রাক্ষর জীবন তখন পয়ারে লিখছে চিরকালের পাণ্ডুলিপির প্রথম চরণ।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register