Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

গল্পেরা জোনাকি তে ঋতশ্রী মান্না

maro news
গল্পেরা জোনাকি তে ঋতশ্রী মান্না

অসমাপ্ত

রোদ পড়ে আসা একচিলতে দাওয়া--পড়ে আছে ধুলোমলিন, বিষণ্ণ একতারাটি---মোহন বৈরাগী ঘর ছেড়ে নিরুদ্দেশ হওয়ার আগের রাতে,শেষবার বেজেছিল সে।
মেঠোসুরের মত সহজ চলন নিয়ে,পুরনো চালে লতিয়ে উঠেছে মাধবীলতা---সরু পথ বেয়ে এগিয়ে গেলে বাঁশঝাড়,পুকুর--বাঁশের ছায়া ঝুঁকে রয়েছে জলে--নিশ্চল শ্যাওলা জমেছে ঘাটের ভাঙা সিঁড়িদের গায়ে...
দাওয়ার সামনে একফালি উঠোন...বিবর্ণ ঘাস। ওরা সবুজকথার যুগ পেরিয়ে এসেছে বহুকাল। এসব ঘাসের গায়ে,স্বপ্নের মত নরম বেগুনি ঘাসফুল ফুটেছিল, সেও কতকাল আগে। একটি জন্ম পার করে খসে গেছে তারা। এই পুষ্পহীন বাদামী নির্জনতায় সুরের আহরণ নেই--কিছুদূরে একটা কাঠগোলাপের গাছ,একটাও পাতা নেই তার---দূরে কেবল একটি কমলা গোধূলি ফুটে আছে। এমন অসহনীয় নগ্নতার সামনে দাঁড়ালে কেবলই শ্মশানচিত্র মনে পড়ে আমার। চিতাকাঠ,ঘি-মাখানো মৃতদেহের নগ্নতা ছুঁয়ে নেচে নেচে উঠছে তীব্র আগুনশিখা-- আসন্ন সূর্যাস্তের মত রং তার।
এমনই একটা কমলারঙা গোধূলিতে ফুলি স্বেচ্ছায় মরে গিয়েছিল... ফুলির তিনকূলে কেউ ছিলনা, সঙ্গত কারণেই তার মরে যাওয়া খুব বেশি রেখাপাত করেনি কারুর মনে। দু-তিনদিন আলোচনা,ফিসফাস-- জলে ঢিল পড়ার পর ক্ষণিক আলোড়ন--তারপর সব চুপচাপ। কেবল মোহন বৈরাগী কোনো এক অজ্ঞাত কারণে একতারা বাজানো ছেড়ে দিয়েছিল।
তার সাথে শেষ দেখার দিনে সে বলেছিল,মরে গেলে কেউ তারা হয়নিকো দাদাবাবু।ওসব মিথ্যে কথা।
আমি বলেছিলাম,তবে কী হয়?
সে বলেছিল,কী জানি। হয়ত অন্ধকার হয় বেবাক ফাঁকা একখানা। আলো না থাকার আঁধার,মানুষ না থাকার আঁধার...
আমি বলেছিলাম,বাজাও না,শুনিনি কতকাল।
সে দাওয়ায় বসে একতারা বাজিয়েছিল বহুক্ষণ,তারপর একতারাটি পাশে নামিয়ে রেখে বলেছিল,তুমি তো অনেক পড়ালেখা শিখেছ দাদাবাবু, বলো তো এ সুর আসলে কোথায় থাকে,একতারায়?
তারপর আপনমনেই হেসে উঠেছিল,না গো,শূন্য থেকে উঠে আসে সে,তারটিকে আশ্রয় করে বেজে ওঠে।তারপর আবার শূন্যেই মেলায়।
পরেরদিন থেকে মোহনবৈরাগীর আর কোনো খোঁজ পাওয়া গেলনা।
সন্ধে নামে,কাদের বাড়ির ছেলে দুলে দুলে সুর করে ছড়া পড়ে, বাজাতে বাজাতে চলল ঢুলি ঢুলি গেল সেই কমলাফুলি...
গূঢ় রহস্যের মত সন্ধে --- শাঁখ বাজে,কাঁসর ঘন্টা --তরল জ্যোৎস্না ফোঁটায় ফোঁটায় ঝরে পড়ে --- স্পর্শে কেঁপে ওঠে অস্তিত্বহীন মায়া-অন্ধকার-... বাজাতে বাজাতে চলল ঢুলি, ঢুলি গেল সেই কমলাফুলি-- এই জ্যোৎস্নায় ডুবসাঁতার দিয়ে, ঘাট ছেড়ে ভেসে যায় ফুলি,মোহন বৈরাগী ---ভাসতে থাকে,ভাসতেই থাকে-- অনন্ত সে যাত্রা--আবার কোন্ ঘাটে গিয়ে ভেসে উঠবে তারা, কোন্ গল্পের তীরে দেখা হবে তাদের,কে জানে!
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register