Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে প্রদীপ গুপ্ত

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে প্রদীপ গুপ্ত

বাউল রাজা

দ্বিতীয় খন্ড (সপ্তত্রিংশ পর্ব)

বিস্ময় আর খানিকটা লজ্জা আমাকে পেয়ে বসলো। এরকম পূর্ণ উলঙ্গ মানুষ আমি জীবনে এই প্রথমবার দেখলাম। উলঙ্গ কথাটা মনে হতেই ফের মনে হলো বুঝি উলঙ্গ শরীরটাতে আবরণ ছিলো। ভস্মাচ্ছাদিত শরীর। আর ওই শেকল? এরকমটা যে হতে পারে --! --" এঁনাদের নাগা সন্নেসী বলে গো, পদীপদাদা। নাগা কতাটা যে কী অত্থে ব্যবহার হয় সেটা ঠিক বইলতে পারবো না। তবে আমার মনে লয় নাঙ্গার থে নাগা কতাটা এয়েচে। " --" কিন্তু --" --" তুমি আগে এনাদের সাক্কাত পাও নি, না? " --" না, কিন্তু --" -- " কতরকম ভাবেই যে মানুষ কিচ্ছসাদন কইরে তেনারে উপলব্দি কইরতে চায়, সে পতের কোনো ইয়ত্তা নেই গো। মানসিক, শারীরিক সবরকমভাবে নিজেরে কষ্ট দে, নিজের সমস্ত ইচ্চা অনিচ্চাকে বেঁদে ফেলে, ঈশ্বরমুকী মানুষ নিজেরে তাঁর চরণে সমপ্পিত কইরতে চায়। --" আর ওই কথাটা? " --" কোন কতা? " " ওই যে, যেটা দেখছো সেটা সত্যি নাও হতে পারে , আবার যেটা সত্যি সেটা নাও দেখতে পারো? " ---" সমস্ত গূঢ় কতাকেই যদি তুমি সাদারণ কইরে বাবো, তো সে অতি সাদারণ গো, সেটাকেই তলিয়ে বাবতে গেলে তল খুঁজে পাবে না।"
আমরা রাস্তা ধরে এগিয়ে চলেছি। রাস্তার বাঁদিকে শ্মশানে নামার যে পথ সে পথ ছেড়ে মুন্ডমালিনী তলার দিকে। আরও কিছুটা এগোলে কানাই বাউলের আখড়া। -- " তুমি শরীরটাকে দেইকতে পাও। সে সত্যি। কিন্তু সে সত্যি আসলে একটা আদার৷ একটা পাত্তর, একটা খাঁচা। শরীর সত্য, কিন্তু চিরসত্য না গো। ক্ষণিকের জন্য সে সত্য, কিন্তু ভেইবে দেকো, শরীরটা যারে আইগলে রেকেচে, সেটা তোমার চোকের আড়ালেই রয়ে গেলো তারে তুমি দেইকতে পেলে না, অতচ সেই আসল সত্যি, চিরকেলে, শাশ্বত। তুমি সন্নেসির দিকে অবাক হইয়ে তাইকে চিলে নাকি গো পদীপদাদা? "
আমি একমনে শুনে যাচ্ছিলাম বাউলের কথা। সত্যিই কতো সহজ করেই না জীবনদর্শন ধরা দেয় এই আটপৌরে মানুষটার কাছে। --" তোমার দিষ্টিতে লিচ্চয় কোনো পশ্ন চিলো গো। " দৃষ্টিতে প্রশ্ন! বাঃ, কি সুন্দর কথা! সত্যিই তো, আমাদের চাউনিতেও তো কতো রকমের অভিব্যক্তি লুকিয়ে থাকে। প্রতিটি অভিব্যক্তিই তো আসলে এক একটা প্রশ্নের জন্ম দেয়। --" একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো বাউলদা? " -- " এই দেকো দিকিনি, কি বিড়ম্বনাতেই না ফেলো মাজে মইদ্যে! আমি যে তোমায় কতো কতা বলি সে কি তোমায় জিজ্ঞেস কইরে বলি, বলো দিকিনি? " -- " দৃষ্টি আর অন্তর্দৃষ্টি এ দুয়ের ভেতর কি আদৌ কোনো পার্থক্য আছে? " কানাইদা হা হা করে হেসে উঠলেন। এই জায়গাটা হচ্ছে ঠিক সেই জায়গা, যেখানে নদী এসে পথের সাথে মিশেছে, যে গাছের নীচে বসে আমি নদীর সাথে বাউলনিকে নিয়ে কথা বলছিলাম। -- " ফের আমায় বিপদে ফেললে গো, আমার দিষ্টি থাইকলে তো আমি এ কতার উত্তর দেবো। যার দিষ্টিশক্তিই নেই সে কীভাবে বুইজবে বলো দিনি, দিষ্টি কারে বলে, আর অন্তর্দিষ্টিই বা কী জিনিস? "
ছি ছি, এ আমি কী বলে ফেলেছি। নিজের অজান্তেই কতবড় দুঃখ দিয়ে ফেলেছি অন্ধ বাউলকে। আমি আবার নিজেকে খুব বোদ্ধা, বিবেচক ভাবি! ছিঃ। আমি আমার নিজের মনের কাছে নিজেই বিদ্ধ হচ্ছি। আমার নির্বুদ্ধিতার জন্যই হয়তো... -- " এই দেকেচো কম্ম, ভেবেচিলাম এট্টু বাড়ি গে কিষ্ণভামার হাতে দু'কাপ চা খেয়ে এসে সোনাবাবার কাচে খ্যাটন খেতে পাত পাড়বো, তা না, নাগাবাবা স্মরণ কইরেচেন। চলো কেনে পদীপদাদা, তোমারে দেকার জইন্য তেনার মন উচাটন হইয়েচে গো... "
কী খেলায় যে আমি আটকে গেছি! নিজের মনে নিজেকেই ব্যাঙ্গ করে বলে উঠলাম, নে বোঝ, কাকে বলে অন্তর্দৃষ্টি! জীবনেও কি তোর শিক্ষা হবে না রে?

ক্রমশ...

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register