Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

কবিতায় স্বর্ণযুগে সন্দীপ রায় (গুচ্ছ)

maro news
কবিতায় স্বর্ণযুগে সন্দীপ রায় (গুচ্ছ)

চাঁদের গায়ে অবাণিজ্যিক দাগ

তুমি সরিয়ে নিও না ফেসবুকের আলোভর্তি মুখ -- আমিও যাবতীয় আয়োজন মিথ্যে করে একবুক স্বচ্ছ জলে দাঁড়িয়ে বলবো - আমারও তো শেষ কথা বলারও বাকি ছিল। এত সহজেই সাগরের কিনারে এসে দাঁড়ালে ? এ তো প্রতীক্ষার শেষ বেলা - অপরাহ্ণের শেষ মায়াবী আঁধারী সংবাদ : আমি তো এখনও নদীর অন্তহীন পার ? জলাশয় যেখানে তোলপাড়, মুষলধার কলমির সুগন্ধে -- অতি বর্ষণের প্লাবনে । ফেসবুক থেকে মুখ সরিয়ে নিও না , কাজল-কালো টিপ পরিও না বৃত্তের ভেতরে বারবার ফিরে ফিরে আসুক সেই ঠোঁট চিবুক সেই আলোভর্তি এলোমেলো চুলেরবিন্যাস । একপক্ষ চাঁদ কে হয়তো-বা হাতের তালু দিয়ে চেপে রাখতে পারো ! চাঁদের ষোলোকলা কে কোন্ অজুহাতে ঢাকবে ?  

এই শহরের পদাবলি

আরও কত আসবে ঝড় শহর মুড়ে আরও কত ভাঙবে ঘর ব্যস্ত শহর জুড়ে। আরও কত ভাঙবে আগল এই ব্যস্ত তিলোত্তমার নীরবে নির্ভৃতে। আরও কত ঝরবে পাতা হাড়হিম শীত-কামড় ফুটপাথের কাঁথা। আবারও শহরে বসন্তের আনাগোনা কচি পাতা কার্নিশ বেয়ে নিত্য জাল-বোনা। চৈত্র শেষে চড়ক মেলা পদাবলি কীর্তন তপ্ত দুপুরে -- সুরের নূপুরে গড়ের মাঠে পা-ফেলা।

ঘুম নেই চোখে

ঘুম নেই চোখে রাত বারান্দায় এপাশ ওপাশ করি ঘুমের ব্ড় প্রয়োজন ছাড়পত্র নেই কোথায় গেলে মিলবে তবে ঘুমের দেশের ঠিকানা ? ঠিকানা বিহীন ক্যুরিয়ার-পার্সেল পথ হাতড়ে মরে পিয়নের বস্তায় - দমবন্ধ মুখ বাঁধা বস্তা কি বুঝবে কালো দমবন্ধ রাত্রির-যন্ত্রণা ! চিঠি পড়ে থাকে না প্রেরকের ঠিকানায় কোনো এক অপরাহ্ণ বেলায় ; চিঠি ফিরে আসে, বারবার -- ফিরে ফিরে আসে নৈঃশব্দ্য কে সাথি করে নৈর্ব্যক্তিক ভাবনায়। ঘুম নেই দু'চোখের পাতায় মুঘ নেই মনে ঘুমের খোঁজে ঘুম কিনতে ঘুমের দেশে চলো যাই।

পূর্বরাগ

কমলালেবুর মত ঠোঁট দুটো এঁকেছিলাম পরিবর্তে দিলে বৈষ্ণব পদাবলি আর নগর সংকীর্তন। এতটা বেলাগাম ছুটতে দেখেনি কখনও - চিনির বদলে লবণ, চা-পাতার বদলে কালো জিরে- পরিমিতিবোধের চূড়ান্ত ছেলেখেলায় রান্না-রান্না খেলায় অনির্দেশ ভেলা। ব্রাত্যর তালিকায় নাম নথিভুক্ত হয়েছে নাগরদোলার দু'পাক ঘোরার আগেই, কাচের ফুলদানিতে এখন আর ঘর সাজাতে ভালো লাগে না। কী যেন এক অনিশ্চিত আশংকায় মনে হয় -- এই বুঝি পতনে ঘটবে বিপর্জয়। ঢাকি চলে গেছে শেষ রাতেই - রেখে গেছে বছরান্তের সুপ্ত সুরের মায়া জাল, উৎসবের উন্মাদনায় পলিমাটির আস্তরণ, এবার উঠতে হবে, এবার চিন্তার গুঁড়িতে ধোঁয়া দিয়ে মগডালে বাঁধবো লাল নিশান, অনিয়মের ডাকবাক্সে চিঠি না পাঠিয়ে ইনবক্সের সঙ্গে ভাব-আড়ি খেলা ... খেলার ছলে চেয়ে নেব অন্য কোনো পূর্বরাগ।  

সমর্পিত

মেয়েটির নাভিমূলে আছে চৈতন্য প্রবাহের জন্মদাগ, জড়ুল। আবহমান বয়ে বেড়াচ্ছে প্রজন্মের যুগধ্বজা, বয়ঃসন্ধির শুভক্ষণে একটা হিমেল হাওয়া শরীরের এনেছিল দিগন্ত বিস্তৃত সবুজের দমকা স্রোত। সময়ের ফসল সময়ে তোলবার তুমুল প্রয়াস। বৈধব্য আসবে আসবে করেও থমকে ছিল ময়নামতির ডালে - ফুল পাখি নদী নিয়ে কাটছিল ছেঁড়া তারের লঘু সংগীত। দুর্গ রক্ষা আর হলো না -- এখন উদাসী চোখে তাকিয়ে থাকে নদীর চরে, যেখানে এখনও একটি পালতোলা নৌকা অন্তবিহীন অপেক্ষায় মেয়েটির কপালে পরিয়ে দেবে সিঁদুরের রক্ত চিহ্ন।  

অখণ্ডিত উপন্যাসের পৃষ্ঠা

কথা ছিল হেঁটে যাব সারাদিন - সারাপথ কথা ছিল মুঠোবন্দি ফোন ছেড়ে মুখোমুখি বসে দু'জনে - দু'জনার সমান্তরাল খুলবো কথার অনর্গল। কথা ছিল জীবন নদীতে ভাসিয়ে মান্দাস অনন্ত ঢেউ গুনবো চার'চোখের পাতায় কথা ছিল নৌকার গলুই এ বসে ভাববো না নৌকাডুবির নৌকা-ডুবির খেলা কথা ছিল মুক্তছন্দে ভরিয়ে নোটপ্যাডের স্ক্রিন একটা নয়, দুটো নয়- হাজার-হাজার কবিতার ডালি কথা ছিল পাহাড়ি নদীর ধারে,নামহীন অসংখ্য রং বাহারি নাম না- জানা ফুলের-থালি কথা ছিল, কথা ছিল - প্রজন্মের হাতে তুলে দেবো প্রত্যাশিত সাফল্যের ব্যাটন কথা হয়নি শেষ, তবু রয়ে গেল রেশ অসমাপ্ত এই উপন্যাসের ভগ্নাবেশ।  
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register