কবিতায় সূর্য্য
শিমুল কাঠের দরজা
একটা বিরাট শিমুল।
বহুবছর হলো দাঁড়িয়ে।
গায়ে শ্যাওলা ধরে এসেছে, পুরুট জমাট প্রায়।
শ্যাওলার সবুজ আস্তরণ অনেকের আশ্রয়।
কেন্নো, পিঁপড়ে, রঙ্গিন সাদাকালো, শতপদী, সহস্রপদী, ডানাওয়ালা, ডানা বিহীন.. কতো।
আবার গাছের ডালে ডালে বিচিত্র সব পাখিদের ঘর। কারোটা কুঁড়ে, কারোওটা অট্টালিকা, কারোটা আবার নিতান্তই সাদামাটা।
ওরা রোজ গাছটার সঙ্গে কথা বলে।
ওদের কেউ কেউ গাছটার আশেপাশেই সারাদিন কাটিয়ে দেয়, কেউ কেউ আবার ভোর হলে 'চলোরে' হাঁক পেড়ে বহুবহু দূর চলে যায়।
ঠিক পশ্চিম আকাশে রং খেলতে শুরু করলে তারা ফিরে আসে তাদের প্রীয় ঠিকানায়।
গাছটা এরম দূর দূরান্তে গমনকারী পাখিদের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকে, কেননা এই পাখিরা ওর ফল খায়, তারপর অনেক অনেক দূরে ওদের বীজগুলো ছড়িয়ে দিয়ে আসে।
ওর অনেক সন্তান এখন এই জঙ্গলে।
গাছটা এই পাখিদের কাছেই শোনে ওদের সন্তানদের কথা, সন্তানেরাও মায়ের খোঁজ নেয় এদের থেকেই।
এইতো সেদিন, টিয়ে দম্পতি কয়েক সপ্তাহের জন্য ঘুরতে গেছিলো নয়াচরার জঙ্গলে। এখান থেকে প্রায় আশি নব্বই মাইল হবে।
সেখানে গিয়ে তরতাজা কিশোর কিশোরী শিমুল গাছেদের সঙ্গে আলাপ।
গল্পে গল্পে জানতে পারলো, এরা ওই শিমুলেরই নাতি নাতনী সব।
জানতে পেরে ওদের কী উৎসাহ।
ওরা তো তক্ষুনি শেকর টেকর গুটিয়ে রওনা দেবে ঠাম্মির সঙ্গে দেখা করবে বলে।
টিয়ে দম্পতি অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে ওদের শান্ত করলো।
বুড়ি শিমুলের সে কথা শুনে কী হাসি!
'বয়স কমতো! এখনও অভিজ্ঞতা হয়নি। ওরা জানেনা, গাছেদের চলাফেরা বারণ।'
গাছটা দাঁড়িয়ে একটা বিরাট হৃদের ধারে। মাঝে মাঝে হাতির দল, হরিণের দল, একলা বাঘ অথবা রাগি গৌর জল খেতে আসে হৃদে।
তারপর হাত পা ছড়িয়ে গাছের গোড়ায় বসে, দেশবিদেশের গল্প করে।
এরপর একদিন কোথা থেকে একদল মানুষ এলো।
শিমুলের গায়ে চকখড়ি দিয়ে কী সব লিখলো টিকলো।
তারপর তারা চলে গেল।
খড়ির দাগ দেখে শুরু হলো জল্পনা। কেননা এই বিষয়ে ওদের অভিজ্ঞতা আছে।
এরপরও বেশ অনেকদিন কাটলো।
আর তারপর-
আজ দেখে কে বলবে এখানে ছিলো একটা ভরা সংসার!
বয়স্ক শিমুল এখন বিশিষ্ট কিছু মানুষদের বাড়ির শোভা বাড়াচ্ছে।
প্রায় নিঃশেষ হয়ে যাওয়া স্মৃতিতে এখনো মাঝে মাঝে ভেসে আসে বনের শব্দ।
0 Comments.