- 25
- 0
বাঁশঝার থেকে ঝিঁ ঝিঁ পোকা বিরামহীন ডেকে চলেছে। সারাদিনের শেষে সন্ধ্যায় একটু বৃষ্টি ধরে আসে। আশঙ্কা তবুও কাটে নাই । এসময় নদীর ভরা যৌবন। নদীরা বছরে অন্তত একবার পোয়াতি হয়। তবে নদীর এই ডাকের গরজ দেখে মনে হচ্ছে ওই মাটি চাপা দেয়া বাঁধ আজ রাতে ভারী বৃষ্টি হলে টেকা দায়। খগেন এসে বড়ো বাড়িতে খবর দিয়ে যায়, বাবু লদির গতিক ভালো লয়। বাঁধ ভাঙিলে হামারগুলাক মাটির ঘর সব ভাসিয়ে লিয়ে যাবেক। ঘুণ পোকায় খাইয়ে লিয়েছে বটে বাঁশের খুটিটো। দমকা দিলেই সব নদীর জলে ভাসান হয়ে যাবে। খগেন তু হামার জমিন দেখভাল করিস। তুহার বউ বেটিক হামার ঘরে লিয়ে আয়। হামি আছি, তু চিন্তা লা করবে। নদীর মতোই ওর বউ এর ভরা যৌবন। কালো শুধু ওর গায়ের রঙ। গতরের নিটোল সুঠাম গড়ন যে নারী মাংস লোলুপ পঞ্চাশোর্ধ বাবুর শরীরে বহুবার জ্বালা ধরিয়েছে এ কথা খগেন কখনো কল্পনাও করতে পারে না। বাবুর আশ্বাসে আহ্লাদে আটখানা হয়ে লাচিতে লাচিতে খগেন ঘরে যায়। বেটিকে কোলে লিয়ে বউকে তাড়া দেয়, এ ফুলু ঘরের জামা কাপড় আওর দু চার টাকা যা আছে ওসব বোঁচকা বাঁধি লে। বাবু হামার বহুত ভালো মানসি আছে। ওয়ার ঘরের বাইরে একঠো পাকা ঘরে হামার থাকার ব্যবস্থাটু হইছে। কথা শুনে ফুলু মুখ ফ্যাকাশে হয়ে যায়। সে বহুবার ওই মনিবের কুনজর লক্ষ্য করেছে। বাবুর চোখ গিলান যেনো ওয়ার শরীরটো গিলিয়া খাবার চায়। ফুলু কিছুতেই রাজি হয় না। খগেন অনেক বলেও রাজি করাতে না পেরে ফুলুকে রেখেই বেটিকে নিয়ে মনিবের বাড়ি চলে যায়। আর ভাবে, ফুলু একটুবাদেই চলে আসবে। খগেন এলেই বাবু কাজের মাসিকে বলে খগেনের বেটিকে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিতে বলে। এ খগেন, তুহার ফুলু আসেক লাই। আর বলিস লা বাবু ওতো এইসান কহিছে, কী ও অসিবেক লাই। হাতের পানপাত্রটা খগেনের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে, তু চিন্তা লা করিস, একটু গোঁসা থামিলেই চলিয়া আসিবেক। লে ইয়ে ফরেন মদিরা পি লে। বাবু, হামার তুহার সামনে পিনে সে বহুত সরম লাগে। ছোর ইয়ে সরম, হাম তুহার ঘরে কিতনে বার হাড়িয়া পিঁয়া, তু ভি পিঁ তব। পিঁ লে মু ফিরকে। খগেন গলার গামছাটা দিয়ে আড়াল করে ঝটপট গলায় ঢেলে দেয়। আহা! বড্ড তেজী আছে বাবু, কারেন্ট লাগ গায়া। অওর থোরাসা... হা হা এ পুরা বোতল তু পিঁ লে হামি দুসরা মাঙাবে। খগেন বোতলটা হামলে নিয়ে ঘাটাঘট জল না মিশিয়ে খেতে শুরু করে। এ থোরা তো সামালকে পিঁ। পানি তো মিলা লে। লা বাবুয়া, এ তেজী আছে। থোরা দিমাক লা ঘুরাইলে পিঁ কে মজা নেহি আবে। পুরো বোতল শেষ করে একসময় বেহুশ হয়ে মেঝের উপরই ঘুমিয়ে পড়ে সে। ঘড়িতে তখন এগারোটা বেজে গেছে। বাইরে জোর বৃষ্টি। প্ল্যান উৎরে গেছে। বাবু খুশিতে ডগমগ হয়ে ধুতির কাঁচা তুলে ছাতা নিয়ে কাদা জল পেরিয়েই খগেনের বাড়ির দিকে রওনা দেয়। দরজায় এসে টোকা দেয়। ফুলু ঘর থেকেই বলে ওঠে - হামি জানে তু হামার ঘরে ফিরি আসিবি ও বাবুর লজরটু ভালো লয়, এ কথাটু তু বুঝিস লা ক্যানে। দরজাটু খোলা আছে, আ কে বেটিক খাটিয়া পে শুলা দে। অর তু জমিন পে মেরে পাস আকে শো যা। বাবু ঘরে ঢুকে দরজা এঁটে, মাটির পাতা মাদুরে ধীরে ধীরে শুয়ে পড়ে। ফুলুও আজ রাগে একটু বেশি হাড়িয়া খেয়ে নিয়েছিল। কিন্তু বাবু তার গতরে স্পর্শ করতেই সে লাফিয়ে ওঠে বুকের কাপড় সামলে নেয়। তু, তো হামার মরদ লয়। এদিকে বৃষ্টি আরো ঝুমঝুমিয়ে শুরু হয়। বৃষ্টির এমন অঝোর শব্দে কেউ ফুলুর ডাক শুনতে পায়না। এক রাখুসে ক্ষুধার কাছে ফুলু কিছুতেই হার মানে না। ঘরের হাঁসুয়াটা নিয়েই সজোরে এক কোপে বাবুর মাথাটা ফালা করে দেয়। রক্ত ফিনকি দিয়ে বেরিয়ে আসে। দু বার একটু শরীরটা কেঁপে ওঠেই বাবুর নিথর দেহ মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে। ফুলু পাথর হয়ে যায়। হাঁসুয়াটা হাতে নিয়েই মেঝেতে বসে থাকে। একটু বাদে বৃষ্টি ধরে এলে মেঘের আড়াল থেকে ভরা পূর্ণিমার চাঁদ ভাঙা বেড়ার ফাঁক দিয়ে ফুলুর নিটোল বুক আলো করে তোলে।
0 Comments.