Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব - ৫)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব - ৫)

বাউল রাজা

তৃতীয় খন্ড (পঞ্চম পর্ব) আলোর উৎসটাকে যতোটা দূরের ভেবেছিলাম ওটা ততোটা দূরে ছিলো না। একটা রিক্সার বাতি, কিছু পা এগোতেই অন্ধকারে রিক্সার শরীরটা প্রকট হলো। কাছে আসতে বুঝলাম রিক্সাটাতে কোনোও সওয়ারি নেই। এই রিক্সাচালকভাইটাও আমার পরিচিত, গণি। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কোনো কথা না বলেই এগিয়ে গেলো। -- " ও টিক দেকেচে গো ঠাকুর। " -- " ধুস, এতো অন্ধকারে কিছু ঠাহর করা যায় নাকি? --- " যায় গো যায়, তুমি আসলে অন্দকারে পত চলো নাতো তাই জানোনা। " বলেই ফের ওর বাহুদিয়ে আমার বাহুকে আঁকড়ে ধরলো বাউলনি। --" দরো রাতের বেলা আকাশে ঘন করে মেগ জমেচে। তুমি জানালা বন্দ করতে ভুলে গেচো। এমন সুময় কড়কড় করে বিদ্যুৎ চমকালো। তুমি ঘরের বেতরকার বিচানা আলমারি আরও সবকিচু পরিষ্কার করে দেকতে পাবে কি না বলো দেকি? " আমি যেন পরিষ্কার করে দৃশ্যটা চোখের সামনে দেখতে পেলাম। কতো সুন্দর করেই না এই গ্রাম্য বাউল মহিলা কঠিন কথাটাকে সোজা করে আমার সামনে রাখলেন। এই দৃশ্যকল্প নিয়ে কী রবিঠাকুর কোনো গান বেঁধেছেন? আমার মনে পড়ছে না। অথচ আমি পরিষ্কার দেখতে পেলাম, আকাশের বুকে চমকে ওঠা বিদ্যুতলেখা যেন আমার শোবার ঘরের জানালা দিয়ে এসে ঘরে ঢুকলো। আর মুহূর্তে আমার ঘরের সমস্ত আসবাব আলোকিত হয়ে উঠলো। ---" আলো আর আঁদার, এই দুয়ের লড়াইয়ে আলো চিরটাকাল জিতে এয়েচে গো। নইলে জনম আঁদারে বাস করা মানুষ আমার গোঁসাই কীবাবে অন্তরের আলোয় সবকিচু পরিষ্কার করে দেকতে পান বলো দেকি! তুমি যারে অনেকদূরের আলো বলে ভাবচো সে আসলে নিজের গতিতেই দূরকে কাচে এগিয়ে নে আসে। তুমি ভাবচো এই রিক্সাওয়ালা আমাদের দেকে ফেললো কিনা, কিন্তু গোঁসাই যে সেই কতোটা দূরে বসে আমাদের নজরে রেকেচেন সেটা ভাবতে পারো? " --" মানুষ তবু অন্ধকারকেই বেশী ভালোবাসে গো বাউলদিদি। সভ্য মানুষ যখন অসভ্য হতে চায় তখন সে বুঝি অন্ধকারকেই আঁকড়ে ধরে।" কথাটা বলার সাথে সাথেই বাউলনি আমার হাত ছেড়ে ছিটকে দূরে সরে গেলো। এই গভীর অন্ধকারেও ওর জ্বলে ওঠা চোখ জ্বলজ্বল করে উঠলো। কিন্তু সেটা তিলেক মুহূর্তমাত্র। ফের কাছে এসে যেন আগের থেকেও বেশী নিবিড় করে জড়িয়ে ধরলো আমায়। --" কতাটা ঠিক। কতাটা শুনে পথমটা আমার খুব রাগ হয়েচিলো জানো, কিন্তু সাতেসাতেই বুজতে পারলাম এ কতাটা তুমি আমায় বলোনি। তোমার সাতে যে আমার প্রাণের খেলা গো ঠাকুর, এ খেলায় তো কোনোও অসব্যতা নেই। এ খেলা তো শুদুমাত্র দুটো শরীরের লয় গো, এ খেলা যে --" কথাটুকু বলে কৃষ্ণভামা ওর দুচোখের আঁখিপাতা বন্ধ করলো। পথের ভেতরেই দাঁড়িয়ে পড়লো সেই নারী। আমার কন্ঠলগ্না হলো। দুহাত দিয়ে বেড়ি দিয়ে ধরলো আমার গণ্ডদেশ। তারপর সেই আঁধার ফুঁড়ে খুব চিকন একটা কন্ঠস্বর যেন আলোর মতো ছড়িয়ে পড়লো আমার সমস্ত সত্ত্বা জুড়ে... আহা তোমার সাথে প্রাণের খেলা প্রিয় আমার ওগো প্রিয় বড়ো উতলা আজ পরাণ আমার খেলাতে হার মানবে কি ও! কেবল তুমিই কি গো এমনি ভাবে রাঙিয়ে মোরে পালিয়ে যাবে তুমি সাধ করে নাথ, ধরা দিয়ে আমারও রঙ বক্ষে নিও। আমার হৃৎকমলের রাঙা রেণু রাঙাবে ওই উত্তরীয়... এই মুহূর্তে এই রবীন্দ্রসংগীতের প্রয়োগ যিনি অবলীলায় করতে পারেন তিনি আর যাই হোন সাধারণ একজন প্রেমিক নন। একজন প্রেমসাধক। ধীরেধীরে সেই কন্ঠলগ্না নারী আমার শরীরকে আশ্রয় করে বসতে শুরু করলেন। তাঁর দুচোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়া অশ্রুধারা আপন করকমলে ধারণ করে আমার পায়ের পাতা মুছিয়ে দিলেন। ক্রমশ
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register