Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে কুণাল রায় (পর্ব - ৪০)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে কুণাল রায় (পর্ব - ৪০)

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা :

অষ্টাদশ অধ্যায়ঃ : মোক্ষ যোগ : প্রথম পর্ব :  অর্জুন ভগবানের নিকট সন্ন্যাস ও ত্যাগের বিষয় জানতে চাইলেন। ভগবান বললেন পন্ডিতগণ কর্মসমূহের ত্যাগকে সন্ন্যাস বলেন এবং বিচক্ষণ ব্যক্তিগণ সকল কর্মফল ত্যাগকে ত্যাগ বলে থাকেন। কিছু জনের জন্য কর্ম দোষযুক্ত, সেই কারণে পরিত্যজ্য। অন্যদিকে যজ্ঞ, দান ও তপস্যা প্রভৃতিকে অত্যাজ্য বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। শাস্ত্রে ত্যাগও তিন প্রকার। তিনি বলেন সকল কর্ম আসক্তি ও ফলের আশা পরিত্যাগ করে কর্তব্যকে শিখরে রাখা উচিত।
     নিত্যকর্ম ত্যাগ করা উচিত নয়। মোহবশত ত্যাগকে তামসিক ত্যাগ বলা হয়। দৈহিক ক্লেশের ভয় যে নিত্যকর্ম ত্যাগ করা হয়, তাকে রাজসিক ত্যাগ বলে। এবং সকল প্রকার অনুরাগ ও আসক্তি ত্যাগ করে যে নিত্যকর্ম অনুষ্ঠান করা হয়, তাকে সাত্ত্বিক ত্যাগ বলা হয়। প্রকৃত গুণে আবৃত মানুষ কোনো কর্মে বিদ্বেষ করেন না বা আকৃষ্ট হন না। দেহধারী জীবের পক্ষে সকল প্রকার কর্ম পরিত্যাগ করা সম্ভব নয়। তাই যিনি সকল কর্মফল ত্যাগ করতে সক্ষম, তিনিই প্রকৃত ত্যাগী বলে অভিহিত হন। এবং যাঁরা ত্যাগ করেননি তাঁদের পরলোকে অনিষ্ট, ইষ্ট ও মিশ্র কর্মফল ভোগ করতে হয়। কিন্তু সন্ন্যাসীদের কখনো ফলভোগ করতে হয় না।
  বেদান্ত ও শাস্ত্রের সিদ্ধান্তে সকল কর্মের সিদ্ধির অভিপ্রায় পাঁচটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। দেহ, কর্তা, ইন্দ্রিয়সমূহ, বিভিন্ন প্রচেষ্টা ও পরমাত্মা। শরীর, মন ও বাক্যের দ্বারা যে কর্মই আরম্ভ হোক, এই পাঁচটি তাঁর কারণ। তাই এরা সদা বিচার্য। যাঁর কোনো অহংকার নেই, বুদ্ধি কর্মফলে আবদ্ধ হয় না, তিনি হত্যা করেও তার কর্মফলে আবদ্ধ হন না। অন্যদিকে জ্ঞান ও পরিজ্ঞাতা - কর্মের প্রেরণা। প্রকৃতির তিন গুণ অনুসারে জ্ঞান, কর্ম ও কর্তা তিন প্রকার বলে কথিত আছে। যেই জ্ঞানের দ্বারা সকল প্রকার জীবকে অবিভক্ত রূপে দর্শন করা হয়, তা সাত্ত্বিক, ভিন্নরূপে দর্শন করলে রাজসিক ও অনুরাগকে অবলম্বন করে দর্শন করলে তামসিক। একইভাবে কামনাশূন্য কর্মকে সাত্ত্বিক কর্ম বলা হয়। আকাঙ্খা ও অহংকারযুক্ত কর্মকে রাজসিক কর্ম বলা হয় ও ক্ষয়, হিংসা ও অবিবেচিত কর্মকে তামসিক কর্ম বলে অভিহিত করা হয়। আসক্তিহীন ও নিরহঙ্কারকে সাত্ত্বিক কর্তা বলা হয়। লোভী, হিংসাপ্রিয়, অশুচি হর্ষ ও শোকযুক্ত কর্তাকে রাজসিক কর্তা বলা হয়। এবং পরিশেষে অলস, বিষাদযুক্ত ও দীর্ঘসূত্রী কর্তাকে তামসিক কর্তা বলা হয়।
 জড়া প্রকৃতির ত্রিগুণ অনুসারে বুদ্ধির ত্রিবিধ ভেদ আছে। যে বুদ্ধির দ্বারা সকল প্রকার পার্থক্য জানতে পারা যায়, সেই বুদ্ধি সাত্ত্বিক। যে বুদ্ধির দ্বারা ধর্ম ও অধর্ম, কার্য ও আকার্যের মধ্যে পার্থক্য জানতে পারা যায়, সেই বুদ্ধি রাজসিক। এবং যে বুদ্ধি সকল বস্তুকে বিপরীত বলে মনে করে, সেই বুদ্ধি তামসিক। ভগবান বললেন যে ধৈর্য ও মনবল মন, প্রাণ ও ইন্দ্রিয়কে ধারণ করে সঠিক অনুশীলনের মাধ্যমে, তা সাত্ত্বিক বলে গৃহীত। ধর্ম, অর্থ ও কামকে যে ধারণ করে, তা রাজসিক রূপে গৃহীত। এবং স্বপ্ন, ভয়, শোক, বিষাদ ,ক্লেশ  ও মদ আদিকে যে ত্যাগ করে না, তা তামসিক রূপে গৃহীত।
  শাস্ত্র অনুযায়ী সুখও তিন প্রকার। এই সুখের দ্বারা সকল প্রকার দুঃখের অবসান হয়ে থাকে। যে সুখ প্রথমে বিষের মত কিন্তু পরিশেষে অমৃত সম, সেই সুখ সাত্ত্বিক। বিষয় ও ইন্দ্রিয়ের স্পর্শে যে সুখ প্রথমে অমৃতুল্য কিন্তু পরিশেষে গরলের সম, সেই সুখ রাজসিক। এবং যে সুখ মোহ, নিদ্রা, আলস্য ও প্রমোদকে উৎপন্ন করে, তা তামসিক সুখ বলে কথিত হয়।
ক্রমশ
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register