- 3
- 0
নবম অধ্যায় : রাজবিদ্যা রাজ গুহ্য যোগ : প্রথম পর্ব
ভগবান তাঁর সখা অর্জুনকে বিজ্ঞান সম্পর্কিত সবচেয়ে গোপনীয় জ্ঞান উপদেশ দিলেন। এই জ্ঞান প্রাপ্ত হল পার্থিব সকল দুঃখ, ক্লেশ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। এই জ্ঞান সকল বিদ্যার রাজার, সকল গুহ্যতত্ত্ব থেকেও গুহ্যতর, অতি পবিত্র এবং প্রত্যক্ষ অনুভূতির দ্বারা এক আত্ম উপলব্ধি প্রদান করে বলে প্রকৃত ধর্ম। এই জ্ঞান অব্যয় ও সুখসাধ্য। তিনি আরো বললেন যে এক ভগবত ভক্তিতে যে বা যাঁদের শ্রদ্ধা উদিত হয়নি, তাঁরা তাঁকে লাভ করতে পারে না। সুতরাং তাঁরা এই জড় সমৃদ্ধ জগতে পুনরায় ফিরে আসেন। এক অব্যক্ত রূপে ভগবান সকল জীবের মাঝে উপস্থিত। কিন্তু তাঁর মাঝে কেউ নেই। তিনি এই সকল সৃষ্টির উৎস। তবু এই জড় সৃষ্টির অন্তর্গত নন। তিনি সর্বব্যাপ্ত। তিনি সর্বধারক। তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ। তবুও সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। বায়ু যে রূপে সর্বত্র বিচরণ করেও মহাকাশে অবস্থান করে। সেই রূপ এই বসুন্ধরার সকল জীব তাঁর মাঝে অবস্থান করে। কালের সমাপ্তিতে এই বিপুল সৃষ্টি তাঁরই মাঝে বিলীন হয়ে যায় এবং কালের প্রারম্ভে এক নব সৃষ্টি সূচিত হয়। তাই এই জগৎ তাঁরই প্রকৃতির অধীন। তাঁরই ইচ্ছায় সৃষ্টি ও বিনাশের এই লীলা অসীম ও অনন্ত। ভগবান পার্থকে উদ্দেশ্য করে বলেন যে এই 'সকল' কর্ম তাঁকে আবদ্ধ করতে পারে না। তিনি সদা ও সর্বদা অনাসক্ত ও উদাসীন। প্রাকৃতিক নিয়মেই সৃষ্টি, পালন ও ধ্বংস হয়ে থাকে। তিনি মনুষ্য রূপে এই পৃথিবীতে অবতীর্ণ হলে, সকল জীব তাঁকে অবজ্ঞা করেন। তাঁরা তাঁর পরম ভাব সম্পর্কে অবগত নন। তাঁরা তাঁকে সর্বভূতের মহেশ্বর বলে জানেন না। সুতরাং তাঁরা বারংবার রাক্ষস ও অসুরী যোনিতে জন্ম নেন। তাঁদের মুক্তি লাভের সকল পথ, প্রচেষ্টা ও অভিলাষ ব্যর্থ হয়। অন্যদিকে যে সকল ব্যক্তিবর্গ দৃঢ়ব্রত ও যত্নশীল হয়ে তাঁর সকল মহিমা নিত্য কীর্তন করেন, তাঁকে স্মরণ ও প্রণাম করেন, তাঁরা তাঁর অনন্ত কৃপা ধারা প্রাপ্ত করে থাকেন। তাঁরা ভিন্ন ভিন্ন রূপে তাঁর উপাসনা করে এক অপার্থিব তৃপ্তি লাভ করে থাকেন।
ক্রমশ...
0 Comments.