Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

T3 || ঘুড়ি || সংখ্যায় দীপক বেরা

maro news
T3 || ঘুড়ি || সংখ্যায় দীপক বেরা

ঘুড়ি ও রূপকথার দেশ

এ বছর আগামী ১৮ই সেপ্টেম্বর বিশ্বকর্মা পুজো। আর বিশ্বকর্মা পুজো এলেই মনটা ঘুড়ি হয়ে আকাশে উড়ে যায়। নিজের ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যায়। দু-তিন দিন আগে থেকেই পাড়ার ফটিক-কে সঙ্গে নিয়ে সুতোয় মাঞ্জা দিয়ে রোদে শুকিয়ে লাটাইয়ে গুটিয়ে রেডি করে রাখতাম। তারপর হারান কাকার দোকানে গিয়ে লাল, নীল, সবুজ, হলুদ নানান রঙিন কাগজের পাখনাওয়ালা ঘুড়ি কিনে আনতাম। দুপুরে ইলিশ মাছের ভাজা দিয়ে খিচুড়ি খেয়ে আকাশে উড়িয়ে দিতাম ঘুড়ি, —মনে হত সে যেন আমারই ইচ্ছে-ঘুড়ি, আমার মনের আকাশে পত্ পত্ করে উড়ছে নিঃসীম শূন্যে! খুব মনে পড়ে আমার সাথে পেটকাটি বাদলের লড়াই হতো। তারপর— ভো.. কাট্টা,.. ভো.. কাট্টা..! কখনও আমি জিততাম, কখনও বাদল। আজ সবই ম্রিয়মান, সবই কেমন বিবর্ণ ধূসর অতীত! আজ যখন ফ্ল্যাটের ব্যালকনিতে বসে শুনতে পাই,.. কাটা কাটা, ডান দিকে, একটু বাঁদিকে.. যাঃ গেল গেল..! মনটা ভীষণ নস্টালজিক হয়ে যায়, ফিরে যাই ছোটবেলার সেই হারানো দিনগুলোতে। এক্ষুনি পেটকাটিতে মিলন হয় তো, পরক্ষণেই চাঁদিয়ালে বিচ্ছেদ। তারপর পাশের পাড়ার কোনও গাছের ডালে লটকে গিয়ে হাওয়ায় দোল খাওয়া। কখনও হার স্বীকার করে নিয়ে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া, অথবা যেন বিশ্ব-বিজয়ের উল্লাসে ভোকাট্টার নির্ভেজাল আনন্দ! হ্যাঁ, এই ঘুড়ি কাটাকাটির খেলা পৃথিবীর গুটিকয়েক খেলার মধ্যে অন্যতম, যাতে কোনও লিঙ্গগত বিভাজন নেই। এই যে বিশ্বকর্মা পুজো আসছে, ওইদিনটা ঘুড়ি ওড়ানোর জন্য বরাদ্দ। একেবারে আদর্শ সময়। তাপমাত্রা অনুকূল না হলেও হাওয়া ঠিকই অনুকূল থাকে। গ্রামে তো এসব খেলা ছিলই। কখনও কখনও উত্তর কোলকাতায় জ্যেঠুমণির বাড়িতে গিয়ে এই ঘুড়ি কাটাকাটির মজা উপভোগ করেছি খুব। ওখানে বাড়িগুলো পাশাপাশি গায়ে গায়ে লাগানো। ছাদে উঠে পরপর বাড়িগুলো লাফ দিয়ে চলে যাওয়া যায়। এই ভাদ্র মাসে প্রায় সব বাড়ির ছাদেই কলাই ডালের বড়ি, পাপড়, বিভিন্ন স্বাদের মসলাদার টক-ঝাল-মিষ্টি আমের আচারের বয়াম, কাসুন্দির শিশি রোদে দেওয়া থাকত। রাঙা দাদার সাথে ঘুড়ি ওড়ানোর আনন্দের মধ্যে বিভিন্ন বাড়ির এইসব আমের আচার চুরি করে খাওয়ার মজাও ছিল অপরিসীম। তারপর একটু বড় হয়ে কিশোর বয়সে দেখেছি, লাল ঘুড়ির সাথে ইনভিজিবল মার্কার দিয়ে প্রেমপত্র আটকে দিয়ে অন্য বাড়ির ছাদে প্রেমিকার হাতে পৌঁছে দেওয়া। এমনই দুঃসাহসিক রোমান্টিক কতকিছু যে ব্যাপার স্যাপার, আজকাল আর দেখি না। তখনকার যুগে তো মোবাইল ফোন ছিল না। তাই ঘুড়ির ওপর লিখে দেওয়া হতো হৃদয়ের কথা। একটা বড় করে হৃদয় চিহ্ন এঁকে তাতে একটা বড় তির এফোঁড় ওফোঁড় করে পাঠিয়ে দেওয়া হতো প্রাণসখীর বাড়ির ছাদে। মিনি টর্চের আলোয় জ্বলজ্বল করে উঠত ভালোবাসার ছবি। তারপর উত্তরের অপেক্ষায় থাকার কী যে রোমান্স তা কেবল আমরাই অনুভব করেছি তখন। আকাশের সেই রঙিন ঘুড়িদের সঙ্গে আজকালকার নগরবাসী কিশোর-কিশোরীদের যেন চির জীবনের আড়ি হয়ে গেল একরকম। আসলে আমার মনে হয় ঘুড়ি যেন শৈশবের প্রতীক। ছেলেবেলা থেকে কৈশোর অবধি এই যাত্রাপথের এক একটা রঙিন ফলক। যাইহোক, আনন্দের কথা হলো গ্রামে এবং কিছু কিছু মফস্বল শহরের বিভিন্ন এলাকায় এখনও ঘুড়ি ওড়ানোর চল আছে। বিশ্বকর্মা পুজো কিংবা চৈত্র সংক্রান্তিতে ঘুড়ি ওড়ানোর প্রস্তুতি চলে জোর কদমে। জাপানে খুব বড় ঘুড়ি উৎসব হয়। আমাদের প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশেও সাকরাইন নামে ঘুড়ি উৎসব হয়। আমি চাই গ্রামের মতো শহর নগরের শিশুরাও বিশ্বকর্মা পুজোয় গৃহবন্দি না থেকে উড়ে যাক ঘুড়িদের সাথে রঙিন পাখনা নিয়ে আকাশে রূপকথার দেশে।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register