Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

T3 || ঘুড়ি || সংখ্যায় শ্বেতা ব্যানার্জী

maro news
T3 || ঘুড়ি || সংখ্যায় শ্বেতা ব্যানার্জী

স্মৃতি চারণা,

খুঁজে ফিরি সেই পুরনো দিন, আকাশে আজ রঙের খেলা মনে মেঘের ভেলা "---- হ্যাঁ আমি যে বয়সের কথা বলছি,তখন রঙের খেলা দেখার সময় হলেও মনে ভেলা ভাসানোর কথা ভাবার সময় হইনি। তখন ঝেড়ে কেটে ৪/৫ বছর বয়স আমার। তবুও স্মৃতিতে থেকে যাওয়া কিছু ক্ষণ ঝালাই হয় দাদা,দিদিদের আলোচনায়। আমরা থাকতাম বি,কে,পাল অ্যাভিনিউ ,সেখানে কত মজার দিন সিন্দুকে রেখে এসেছি তা গুণে শেষ করা যাবেনা, তারমধ্যে একটা হলো এই বিশ্বকর্মা পুজোর দিন, ১০/ ১৫ দিন আগে থেকে দাদাদের ঘুড়ির সুতোয় মাঞ্জা দেওয়া যেহেতু একান্নবর্তী পরিবারের বাসিন্দা ছিলাম তাই আনন্দ অনেক ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল,শুধু লাটাইয়ের সুতোর মতন গোটাতে পারলেই হলো। হ্যাঁ, যেটা বলছিলাম দাদাদের মাঞ্জা দেওয়ার ব্যাপারে আমরা ছোটরা ছিলাম সাহায্যকারি,সুতো এগিয়ে দেওয়া, কাঁচের গুঁড়োর গামলা সাবধানে তিন চারজন মিলে টেনে দেওয়া, রঙ গোলার পাত্রে জল ঢালা,এইসব টুকিটাকি কাজেও আমাদের আনন্দের সীমা ছিলনা। তারপর এলো সেই প্রতীক্ষিত দিন, সকাল থেকে হইহই, সাড়া পাড়া জুড়ে মাইকে গান, যদিও আমাদের বাড়িতে মাইকের ব্যবহার নিষিদ্ধ ছিল তবুও গান এসে কানে গুঁজে দিত সুরেলা মুহুর্ত। ভোঁ...কাট্টা একাট্টা হয়ে ঘুড়িতে ঘুড়িতে লড়াই। সারা আকাশ জুড়ে পেটকাটি, চাঁদিয়াল, লেজ বাহাদুর কত নামের বাহারী ঘুড়ি,আর বাহারী নক্সাদার রঙের জমকালো উপস্থিতি। আকাশের গায়ে যেন কেউ আদর মাখিয়ে জামা পরিয়ে দিয়েছে, আমারা ছোটরা বায়না ধরতাম লাটাই ধরবো বলে, দাদারা দিত না,তাই নিয়ে মায়ের কাছে নালিশ, দাদাদের থেকে কানমলা খেয়ে দাঁত দিয়ে সুতো কেটে দিতাম। ওরা বুঝতে পারতো না সুতো ছিঁড়ল কি করে! কারুর ঘুড়ি কেটে আমাদের ছাদে বা বারান্দায় পড়লে আমাদের কাজ ছিল কুড়িয়ে আনার,কারণ আমাদের তিনটে ছাদ ছিল ছোট -বড় মিলিয়ে আর বারান্দা দুটো। তিনতলা, একতলা দৌড়ে দৌড়ে ঘুড়ি কুড়িয়ে আনার মজাই ছিল আলাদা, যে বেশী কুড়িয়ে আনতে পারবে সে একবার লাটাই ধরার সুযোগ পাবে। আর তাই আমাদের ছোটদের প্রতিযোগিতাও ছিল চরম। আমার মনে হতো আকাশের দিকে তাকিয়ে কে যেন মেঘেদের লাল,নীল,সবুজের জামা পরিয়ে পার্কে বেড়াতে নিয়ে যাবার জন্য তৈরী করে দিয়েছে। একবার দেখেছিলাম অন্য ছাদে দাদাদের হুলুস্থুল কান্ড কারণ এখনকার মিঠুন চক্রবর্তী, তখন ছিলেন গৌরাঙ্গ। তার মামাতো ভাইদের নিয়ে কাঁচকামিনী মন্দিরে উঠে ঘুড়ি উড়াচ্ছেন, যদিও আমাদের বোঝার বয়স হয়নি। তবুও আমাদের পাড়ার দাদাদের কি উল্লাস,ভাবতাম ইনি কে! যাঁকে নিয়ে এতো হইচই, তখন উনি সবে মৃগয়া সিনেমা করেছেন। কিন্তু কোনো অহং ছিলনা, ছিল ছেলেমানুষী বদমাইশি ঘুড়ি কাটার ওস্তাদি। ওনার দান- ধ্যান অনেক পূণ্য কাজের কথা শুনতাম বাড়িতে দাদাদের মুখে। যাইহোক ফিরে যাই সেই ফেলে আসা দিনে --- রাতের বেলায় আমাদের বাড়িতে গানের আসর বসত,ছোটরা যে যার মতো আবৃত্তি, নাচ করতো। সবশেষে সেই অমৃত ক্ষণ ডেচকি তে পাঁঠার মাংস আর গরম গরম ধোঁয়া ওঠা ভাত, দাদাদের বন্ধুরাও আসতো নিমন্ত্রিত হয়ে, সকালে যাদের ঘুড়ি কেটে ঝগড়া- ঝামেলা, রাতেই তাদের সাথে মশগুল গল্প। আগামী বছরে দেখে নেবার প্রতিজ্ঞা। সত্যি কথা বলতে এখন আকাশে রঙিন ঘুড়ি ওড়লেই সেই আনন্দ, সেই আবেগ,ভালোবাসা অনেকটা ই বেরঙিন। আজও ফিরে পেতে ইচ্ছে করে পুরনো ছাদ, পুরনো আকাশ, আর ফেলে আসা দিন। তবু আজ জীবনের মধ্যগগনে এসে বড় দার্শনিক ভাবনা ভাবিয়ে তোলে, ভাবি,জীবনের উড়ানের প্রস্তুতি বুঝি এইভাবেই শুরু হয়। আবার জীবনের ভোঁ- কাট্টা সময় কখন এসে প্যাঁচ খেলে যায় তা শুধু ঈশ্বর ই জানেন।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register