Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

ভ্রমণে রোমাঞ্চ ধারাবাহিকে সমীরণ সরকার (পর্ব - ২৩)

maro news
ভ্রমণে রোমাঞ্চ ধারাবাহিকে সমীরণ সরকার (পর্ব - ২৩)

তীর্থভূমি বীরভূম , ভ্রমণ তীর্থ বীরভূম

বাঙালির উৎসব পার্বণ পুজো ইত্যাদির যেসব চিত্র শিল্পীরা পোড়ামাটির ফলকে ফুটিয়ে তুলেছিলেন, তার মধ্যে পূজারিণী কর্তৃক শিবলিঙ্গের মাথায় জল ঢালার ভাস্কর্য অনেক মন্দিরে দেখা যায়। বীরভূমের ইলামবাজারের লক্ষ্মী জনার্দন মন্দিরে বাঙালির দুর্গোৎসবকে চিত্রের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ওই সুন্দর ভাস্কর্য টিতে দুর্গা মূর্তির কাছে ঢাকি ও অন্যান্য বাদ্যকরদের‌ দেখা যায়। চড়কগাছে ঝুলন্ত সন্ন্যাসীর ঘুরপাক খাওয়ার দৃশ্য দেখা যায় মেদিনীপুর জেলার দাসপুর থানার একটি মন্দিরে। বাঙালির জীবনে উৎসব অনুষ্ঠানের অন্যতম হলো বিয়ের অনুষ্ঠান। মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা থানার একটি মন্দিরে বিবাহ অনুষ্ঠানের দৃশ্যকে এত সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে যে দেখে বিস্মিত হতে হয়। বীরভূম জেলার নানুর থানায় উচকরণ গ্রামে সরখেল পরিবারের এক মন্দিরে একটি ফলকে চিত্রায়িত হয়েছে টোপর পরা বর ও বধূ কড়ি খেলায় ব্যস্ত। সেকালের খেলাধুলা ও বিভিন্ন রকম আমোদ প্রমোদের দৃশ্য দেখা যায় টেরাকোটা ফলকে। খেলাধুলার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক কসরত প্রদর্শন, বাঁশ বাজির খেলা ইত্যাদিও টেরাকোটা শিল্পীদের বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে। মন্দিরের দেয়ালে নিবদ্ধ পোড়ামাটির ফলকে বাঙালির গান বাজনা চর্চার যে উদাহরণ চিত্রায়িত হয়েছে তার তালিকা ও নেহাত কম নয়। মধ্যযুগের মঙ্গলকাব্য গুলিতে যে সমস্ত বাদ্যযন্ত্রের উল্লেখ আছে সেগুলি রূপায়িত হয়েছে টেরাকোটা শিল্পে। বিপ্র দাসের মনসামঙ্গল, রায়গুণাকর ভারতচন্দ্রের অন্নদা মঙ্গল ইত্যাদি কাব্যে যে সপ্তস্বরা বাদ্যযন্ত্রের উল্লেখ পাওয়া যায়, সেই রকম সাতটি তার যুক্ত একটি বাদ্যযন্ত্র পোড়ামাটির ভাস্কর্য বিভিন্ন মন্দির গাত্রে জায়গা করে নিয়েছে। ডুগি-তবলা বাদ্যটি বাঁকুড়া জেলার অন্তর্গত বিষ্ণুপুরের অনেক মন্দিরে টেরাকোটার ফলকে দেখা যায়। টেরাকোটার ফলকে স্থান করে নেওয়া বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের রূপ দেখে যেমন সেকালে ব্যবহৃত বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র সম্পর্কে ধারণা করা যায়, তেমনই শিল্পীদের হাতে রচিত বিভিন্ন মূর্তির মধ্য দিয়ে সেকালের বেশভূষা অলংকার ইত্যাদির পরিচয় পাওয়া যায়। অলংকার বিষয়ক আলোচনায় দেখা যায়, অধিকাংশ মন্দির এর ফলকে পুরুষের কেমন কোন অলংকার দেখানো হয়নি। তবে মহিলাদের ক্ষেত্রে অলংকারের যথেষ্ট প্রাচুর্য। অলংকারের নিদর্শন যে সব মন্দিরে উল্লেখযোগ্য ভাবে দেখা গিয়েছে তার মধ্যে বীরভূম জেলার সুরুলের লক্ষ্মী জনার্দন মন্দির, বাঁকুড়ার সোনামুখী গ্রামের শ্রীধর মন্দির, বর্ধমান জেলার মানকর এর শিব মন্দির,কালনার প্রতাপেশ্বর মন্দির প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।। বেশ কিছু মন্দিরে আবার পাশে বা পিছনের দেয়ালে উৎকীর্ণ আছে রতিক্রিয়ারত নর-নারীর মূর্তিফলক। কোথাও আবার নিবদ্ধ হয়েছে আলিঙ্গনাবদ্ধ নর-নারীর ফলক। এগুলি আমরা দেখতে পাই বীরভূম জেলার ঘুড়িষার লক্ষ্মী জনার্দনন্দির, বর্ধমান জেলার কালিকাপুরের জোড়া শিব মন্দির, হুগলি জেলার আরামবাগ থানার সালেপুর গ্রামের মন্দির ও আরো কয়েকটি মন্দিরে। পঙ্খসজ্জা:-- পশ্চিমবাংলার প্রাচীন মন্দির গুলি তে পোড়ামাটির ফলকসজ্জা ছাড়াও পঙ্খ পলেস্তারা দিয়ে নির্মিত ভাস্কর্যের অলংকরণ অনেক মন্দিরে দেখা যায়। খ্রিস্টীয় উনিশ শতকে পোড়ামাটির ভাস্কর্য ফলক সৃষ্টিতে ব্যয়বহুল্যের কারণে পঙ্খসজ্জার কাজ জনপ্রিয় হয়েছিল। মন্দিরের দেওয়ালে উৎকীর্ণ বিভিন্ন দেবদেবীর মূর্তি, ফুল লতাপাতা ইত্যাদি অলংকরণ গুলি বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। কিছু কিছু মন্দিরে আবার মন্দিরের বাইরের দেয়ালে পোড়ামাটির কাজ থাকলেও মন্দিরের ভেতরের দেয়ালে পঙ্খ পলেস্তরার কাজ উৎকীর্ণ করা হয়েছে। বীরভূম জেলার সিউড়ির কাছে মহুলি গ্রামের শিব মন্দিরে এই কাজ দেখা যায়। তাছাড়া মুর্শিদাবাদ জেলার বড়নগর এর চারবাংলা মন্দির ও অন্যান্য কয়েকটি মন্দিরে এই কাজ দেখা যায়। চলবে
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register