Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাসম্পাতে সিদ্ধার্থ সিংহ (পর্ব - ৪)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাসম্পাতে সিদ্ধার্থ সিংহ (পর্ব - ৪)

কেমিক্যাল বিভ্রাট 

তিন-চারটে কেমো থেরাপি হয়ে গেছে বাবার। কতটা ইমপ্রুভ হয়েছে আজ ডাক্তারবাবু সেই রিপোর্ট দেবেন। ডাক্তারবাবুদের কাছে ইমপ্রুভ মানে যে কী, জবালা তা ভাল করেই জানেন। ওঁদের কাছে ইমপ্রুভ মানে তিন মাসের জায়গায় খুব বেশি হলে সাড়ে তিন মাস আয়ু। এই তো...
তাই বাবা খুব আম খেতে ভালবাসেন বলে ঠাকুরপুকুর ক্যানসার রিসার্চ সেন্টারে বাবাকে দেখতে যাবার আগে জবালা ঠিক করলেন, যত বাজার ঘুরতে হয়, হোক। তিনি ঘুরবেন। দরকার হলে নিউ মার্কেট, এমনকী, কোথাও পাওয়া না-গেলেও, যেখানে সমস্ত রকম ফলই পাওয়া যায়, সেই চাঁদনি চক মার্কেটেও ঢু মারবেন।
আর তো মাত্র কয়েকটা মাস। যে-কোনও সময় একটা খারাপ খবর এসে পৌঁছতে পারে, সেই খবর শোনার জন্য নিজেকে ভেতরে ভেতরে তৈরি করে নিয়েছেন তিনি। এই সময়েও যে ফল তাঁর বাবার সব চেয়ে বেশি প্রিয়, সেই ফল যদি তিনি তাঁর বাবাকে খাওয়াতে না-পারেন, এর চেয়ে বড় দুঃখের আর কী হতে পারে! তাই হাতে প্রচুর সময় নিয়ে তিনি বেরিয়েছেন।
আগেই ঠিক করে রেখেছিলেন, প্রথমেই যাবেন গড়িয়াহাটায়। ওখানকার ফলের বাজারটা খুব ভাল। সেই মতো অটো থেকে যে-ই গড়িয়াহাট মোড়ে নেমেছেন, অমনি মুখোমুখি দেখা পয়মন্তর সঙ্গে।
পয়মন্ত তাঁর খুব ছোটবেলাকার বন্ধু। বিয়ে হওয়ার পরেও যে ক’জন বন্ধুর সঙ্গে তাঁর এখনও নিয়মিত যোগাযোগ আছে, তার মধ্যে পয়মন্ত একজন।
ওর বিয়ে হয়েছে তাঁর বিয়ের অনেক পরে। বাচ্চা হয়েছে আরও কয়েক বছর পরে। মাস কয়েক আগে কথায় কথায় জবালাকে ও বলেছিল, ওর বাচ্চাকে কলকাতার সব চেয়ে সেরা স্কুলে ও ভর্তি করাতে চায়। আর যেহেতু ও জানে, জবালার সঙ্গে ওই স্কুলের সেক্রেটারির খুব ভাল সম্পর্ক, তাই ও তাঁকে ধরেছিল, ওর বাচ্চার ভর্তির ব্যাপারে তিনি যদি ওই সেক্রেটারিকে একটু বলে দেন।
জবালা সঙ্গে সঙ্গে ওর সামনেই ফোন করেছিলেন। শুধু বলেনইনি, রীতিমত অনুরোধও করেছিলেন। শেষে আবদারের গলায় বলেছিলেন, আমি কিছু জানি না। আপনাকে এটা করে দিতেই হবে।
মুখে এ কথা বললেও জবালা জানতেন, ওই স্কুলে ভর্তি করানোটা খুব শক্ত ব্যাপার। বাচ্চাদের পরীক্ষা তো নেওয়া হয়ই, বাচ্চাদের বাবা-মায়েদেরও পরীক্ষা নেওয়া হয়। দেখা হয় তাঁরা কী করেন। তাঁদের রোজগারপাতি কেমন। সামাজিক স্ট্যাটাস কী রকম। কত টাকা ডোনেশন দিতে পারেন, ইত্যাদি ইত্যাদি। এ সবের পরেও চলে অন্য খেলা। নেতা-মন্ত্রী থেকে উপর তলার লোকজনদের নানান রেকমেনডেশন। অথচ সেই আদ্যিকাল থেকেই প্লে-গ্রুপে সিট মাত্র ষাটখানা। সুতরাং হাজার মেরিট থাকলেও, সব কিছুতে উতরে গেলেও, যতক্ষণ না অফিসিয়ালি কোনও বাচ্চা ভর্তি হচ্ছে, ততক্ষণ বলা যায় না, ওই স্কুলে ও ভর্তি হয়েছে।
সেই যে পয়মন্ত এসেছিল তার পর ওকে এই প্রথম দেখলেন জবালা। উনি জানতেন, ওই স্কুলের সেক্রেটারি মুখে যতই মিষ্টি মিষ্টি কথা বলুন না কেন, কাজের সময় যা করার উনি তা-ই করেন। অবশ্য ওঁকে দোষ দেওয়া যায় না। উপর মহল থেকে এত চাপ থাকে যে, ইচ্ছে থাকলেও উনি অনেক সময়ই অনেক কিছু করে উঠতে পারেন না।
পয়মন্তদের যা অবস্থা, তাতে ওর ছেলে যে ওখানে ভর্তি হতে পারবে না জবালা তা জানতেন। উনি ভেবেছিলেন, সেক্রেটারির সঙ্গে কথা বলার পরে পয়মন্ত নিশ্চয়ই সেটা বুঝতে পেরেছে। আর সে জন্যই বুঝি, যে প্রত্যেক সপ্তাহে অন্তত দু’বার করে তাঁকে ফোন করত, অকারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বকবক করে যেত, তাঁকে প্রায় কথাই বলতে দিত না, সে নিজে থেকেই গত দু’-তিন মাস ধরে একেবারে চুপচাপ হয়ে গেছে। কোনও সাড়াশব্দ করছে না। তাঁর বাড়ি এসে আড্ডা দেওয়া তো দূরের কথা!
পয়মন্ত কি তা হলে তাঁকে ও রকম ভেবেছে! আসলে কোন লোক যে কেমন বোঝা মুশকিল। জবালার বেশ মনে আছে, উনি যে স্কুলে পড়ান, সেই স্কুলেরই কী একটা ব্যাপারে এক মন্ত্রীর শরণাপন্ন হয়েছিলেন তিনি। ওই মন্ত্রী শুধু জবালার প্রতিবেশীই নন, দীর্ঘ দিন ধরে তাঁর সঙ্গে ওঁদের পরিবারের খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। মন্ত্রী হওয়ার পরেও যখন যেখানে দেখা হয়েছে, নিজে থেকেই উপযাজক হয়ে উনি তাঁদের কুশল সংবাদ নিয়েছেন। বাবার শরীর কেমন আছে, তা জানতে চেয়েছেন।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register