Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সাতে পাঁচে কবিতায় তনিমা হাজরা

maro news
সাতে পাঁচে কবিতায় তনিমা হাজরা

নাম

জন্মের সময় তার শীর্ণ ও অপুষ্ট শরীর দেখে, যারা আহ্লাদ করে বাচ্চা দেখতে ভিড় করে এসেছিল তারা নাক সিঁটকে কেউ নাম দিলো ইঁদুরছা,কেউ বল্ল হাড়গিলে, কেউ বল্ল টুনটুনি। মা কপালে চুমু খেয়ে অশক্ত ঠোঁটের উপরে তুলোয় করে ফোঁটা ফোঁটা দুধ খাওয়াতে খাওয়াতে নাম দিলেন "পাখি"। সীমান্তে পোষ্টেড বাবা ইস্কুলে ভর্তির আগে বড়ো আবেগ ভরে নীলরঙা ইনল্যান্ড লেটারে লিখে পাঠালেন, মেয়ের নাম রেখো " মৈত্রী "। ভুলোমন জ্যাঠামশাই গেছিলেন ইস্কুলে দাখিলাৎ করাতে, ফর্মে নাম ভরার সময় তাঁর সে নাম পেটেও এলো না, মুখেও এলো না, দূরের মাঠে একটি মেয়ে খেলা করছিল, তাঁকে হাতছানি দিয়ে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার নাম কি গো মা? সে বল্ল, আয়মন। সেটাই তিনি পেরেকঠোকা করে তার কপালে দিলেন ঠুকে। সেই থেকে সে ইস্কুলের রেজিস্ট্রারে আয়মন বসু। বিয়ের পরে বদলায় গোত্র ও পদবি বসু হয়ে যায় দেবরায়। ওবাড়িতে আবার নতুন বৌয়ের নামকরণের নিয়ম, তারা নাম দেয় বসুধা, স্বামীও তাকে ডাকেন সেই নামেই, বড়রা বলেন সেজবৌমা, ছোটরা বলে সেজবৌদি, সেজকাকি, সেজমামী। এঁরা এমনিতে মানুষ মন্দ নন, কিন্তু বাপেরবড়ি যাওয়া আসাটা পছন্দ করেন না তেমন, এই যা। সন্তানলাভ দুই বছরের মাথায়, পাড়ায় তখন থেকে সে, টুবাইয়ের মা। কালেভদ্রে "স্নেহের পাখি "লেখা পোষ্টকার্ড চিঠি আসে মা বাবার, এছাড়া আয়মন কিংবা পাখিকে ডাকে না কেউ আর, পাখি মূক হয়ে গেছে কবে কে জানে, আয়মন ঘুমিয়ে থাকে সার্টিফিকেটের পাতায়। কে নিয়েছে কার নাম, কে উড়েছে কার নাম নিয়ে, কার কথা লেখা হতে পারতো, কি কথা হচ্ছে লেখা কোন নাম দিয়ে। এরপরে পাঁচ বছরের মাথায় বৈধব্য। স্বামীর সেনাঅফিসে চাকরি প্রাপ্তি কমপেনসেশন খাতে, সেই থেকে তিনি পাকাপোক্ত মিসেস দেবরায়। দিন যায়, দিন যায়, দিন যায়, দিন যায়, ঘরে বসুধা, সেজবৌমা, বসুধাবৌদি কিংবা টুবাইয়ের মা সে পাড়ায়, আর অফিসে মিসেস দেবরায়। এভাবেইশীতের পিঠে চড়ে বসন্তেরা হাওয়া হয়ে যায়। বসুধার ঋতুচক্র চুপিচুপি ডাষ্টবিনগ্রস্ত হতে থাকে প্রতিমাসে,যৌনতা শুকিয়ে থাকে লজ্জায়। চাকরির টাকা খামে করে ঘরে আসে, প্রতি মাসে, প্রতি মাসে, প্রতি মাসে..... মেয়েটি কি চায় তাতে কার কী আসে বা যায়, মাইনাস পাওয়ার ধাপে ধাপে খাদের কিনারায় আলাপ জমায়, দৃষ্টিতে চশমায়, টুবাইও কাকা জ্যাঠা ঠাকুর্দা ঠাকুমার সংসারে পিতৃহীনতাসুবাদে যেন একটু বেশিই আদরে আস্কারায় বড় হয়ে যায়। ইতিমধ্যে জাপ্টে ধরে রাখা শুদ্ধ সতীপনা মেনোপজের অট্টহাসি হেসে প্রৌঢ়ত্ব ঘোষণা করে যায়। ধীরে ধীরে মায়া ত্যাগ করে চলে যান মা বাবা, শ্বশুর শ্বাশুড়ি, যৌথ পরিবারও ধীরে সুস্থে ভেঙে যায়, ছেলে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ মেখে বিদেশে সপরিবারে পাড়ি জমায়, চাকরিতে রিটায়ার করেন মিসেস দেবরায়। হঠাৎ একদিন কাউকে কিছু না বলে বাড়িটিকে বন্ধ করে চাবি ও তালায় মৈত্রী বসু সব কাঁটাতার কেটে নিজস্ব বাঁচাতে চাওয়ার আকাশে ডানা মেলে পাখি হয়ে উড়ে যায়। নীচে পড়ে থাকে পরিত্যক্ত পালকের মতো ইঁদুরছা, হাড়গিলে, টুনটুনি,আয়মন, বসুধা, সেজবৌমা, সেজবৌদি, সেজমামী, মিসেস দেবরায় আর টুবাইয়ের মা।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register