|| আগমনী সংখ্যায় || ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত
আগমনী
যখন প্রলয়-সমুদ্রে বিষ্ণু অনন্ত-শয্যায়
বসেন অনন্তনাগের উপর যোগ-নিদ্রায়।
ব্রহ্মা নাভিমূল থেকে
মধু-কৈটভ কর্ণ থেকে-
জন্মনিয়েই ব্রহ্মাকে যখন উদ্যত হত্যায়
বিষ্ণু যোগনিদ্রারূপী মহামায়ার বন্দনা গায়।
এবার মা আসছেন কার্ত্তিকের হেমন্তপ্রাতে
বেজেছে আলোক মঞ্জীর; ঘন কুয়াশাতে।
বহিরাকাশে মেঘমালা;
অন্তরাকাশে দীপজ্বালা
সেজেছে বরণডালা - নবপ্রভাতে
এসো মা শারদলক্ষ্ণী, শিউলি বিছানো পথে।
তুমি মহামায়া শক্তিরূপা দেবী সনাতনী,
একই দেহে তুমি দেবী গিরি-নন্দিনী।
তুমি ব্রহ্মাণী মহেশ্বেরী
নির্মলা কৌমারী
তুমি ঐন্দ্রী, ঈশ্বরী, দেবী নারায়ণী।
আজ আকাশে বাতাসে বাজে তোমার আগমনী।
তুমি ত্রিগুণাত্মিকা মহামায়া দেবী ভগবতী
তুমিই কন্যাকুমারী মাগো শিবের পার্বতী।
তুমি ব্রহ্মার গৃহিণী
তুমি সতী দাক্ষায়ণী
তুমি কন্যা কাত্যায়নী, হে অমৃতজ্যোতি
তোমার আবির্ভাবে ঘোচাও মারী দুর্গতি।
আগমনী
মৃন্ময়ী রূপে আসিস না মা, মন্দিরে কিবা পূজাপ্যান্ডেলে-
চিন্ময়ী রূপে আয় মা উমা দেশটা গেছে রসাতলে।
শ্মশান-কবরে চাঁই চাঁই শব। এক নম্বরে ভারতবর্ষ।
অতিমারীতে মরছে মানুষ। শোকগ্রস্ত গোটা বিশ্ব।
রাজনীতিটা ভালোই বুঝিস দেরিতে আসার করলি রফা-
মল মাসের ভয় দেখিয়ে - জন-বিস্ফোরণ করলি সাফা।
স্বর্গরাজ্যে ওই এক দোষ, নাস্তিকের হার বাড়লে দেখি-
অতিমারীতে বিনাশ করে - পৃথিবীর ভার কমাবি নাকি।
কোম্পানিরাও তাই করছে মা, জোর-জবরদস্তি অবসর।
আজ তবে আর বলব কাকে - রক্ষা করো হে ঈশ্বর।
দশ অস্ত্রে তুই দশভুজা মা-তোর গল্প-গাঁথা আমরা জানি,
শুম্ভ-নিশুম্ভ-মহিষাসুর, কত-না খেয়েছে নাকানি চোবানি।
স্বামী-সন্তান আনিস না মা। স্বর্গেই হোক শিবের গাজন।
লক্ষ্মী-সরস্বতী কার্তিক-গণেশ-স্বর্গে বসেই করুক ভজন।
তুই একা আয় করোনা রুখতে, রণরঙ্গিণী মূর্তি ধরে-
প্লেগ-দেবীর মত ঝন-রন-রন, রণ-ডঙ্কার শব্দ করে।
অনেক হয়েছে আর নয় এবার, শান্তি দে মা গিরিরানী-
সন্তান সব কাঁদছে ত্রাসে শুনতে পাসনা মা জগজ্জননী?
0 Comments.