Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় (পর্ব - ৮১)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় (পর্ব - ৮১)

সোনা ধানের সিঁড়ি

১১৭

অনেকগুলো বছর হয়ে গেল, তা প্রায় চল্লিশ বছর। আমি তখন ক্লাস সেভেনের ছাত্র। মনে পড়ে মামুদ স্যারের কথা। ছোট্টখাট্টো চেহারা। ধুতি পাঞ্জাবী পরতেন। খুবই পুরানো এবং ময়লা ধুতি। পাঞ্জাবীর অবস্থাও ওই একইরকমের। সারাবছর পায়ে পরতেন সস্তার প্লাস্টিকের বর্ষার জুতো। খুব সম্ভবত সপ্তাহের ছ'টা দিনই এই একই পোশাক। রবিবার এগুলোকে কেচে নিয়ে আবার সোমবার থেকে তাঁর নতুন দিন শুরু হতো। আমি স্যারের পাড়ার ছেলে নয় যে তাঁকে দু'বেলা লক্ষ্য করছি কিন্তু তবুও স্যারের সম্পর্কে এসব বলতে পারতাম একটাই কারণে তাঁকে আমি খুব গভীরভাবে লক্ষ্য করতাম। আমি জীবনে এই প্রথম কোনো শিক্ষককে দেখলাম যিনি জলের মতো সহজ। স্কুলের জন্যে যাঁর আলাদা কোনো সাজ নেই। তাঁকে দেখেই শিখেছি, সত্যিই তো মানুষ গড়ার কারিগরের গায়ে কেন ধুলো থাকবে না? কেন তাঁর সাজ অতো পরিপাটি হবে। মামুদ স্যারের ছবিটা আজকের সময়ে রেখে ভাবি ------- তিনি কোনো স্কুলের গেট দিয়ে ঢোকার প্রবেশাধিকার পেতেন কিনা আমার ঘোর সন্দেহ আছে। আজকের ছেলেমেয়েরাও হয়তো তাঁর পোশাকের জন্যে তাঁকে খেপিয়ে মারতো। মামুদ স্যার আমাদের ভূগোল পড়াতেন। পড়া ধরতেন এবং না পারলে বকতেন। কোনো কোনো সময় তাঁকে মারতেও দেখেছি। তবে সে এমন কিছু নয়। একদিন তাঁকে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে দেখলাম। যার মূলে ছিলাম আমি। তিনি ভূগোল পড়াচ্ছেন আর আমি জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ( আমার তো এই একটাই বিরাট দোষ)। ওনার নজরে পড়ে গেলাম। আমাকে দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, তিনি কি পড়াচ্ছেন। যথারীতি বলতে পারলাম না। তারপর শুরু হলো মার। আমার শরীর তখন মারের উপযুক্ত ছিল না কিন্তু তবুও স্যারের দয়া হয় নি। ভূগোল ক্লাসের পরেই ছিল টিফিন। টিফিনের সময়ে আমার কাজ ছিল মামুদ স্যারের জানলার সামনে ( অফিস ঘরে যেখানে বসতেন) গিয়ে দাঁড়ানো। উনি মুড়ি গুড় নিয়ে আসতেন। কখনও ছাতু। জল দিয়ে মেখে খেয়ে নিতেন। সেদিন আমাকে দেখেই অফিস ঘর থেকে বেরিয়ে এসে সামনে দাঁড়ালেন। বুঝতে পেরেছিলাম, আমাকে মেরে উনিও ভালো নেই। দুহাত আমার সামনে ছড়িয়ে হাতের তালু দুটোকে দেখিয়ে বললেন, মনে রাখিস লাঙল চষা হাত। খুব লেগেছে না রে? বলেই আমাকে জড়িয়ে ধরে স্যারের সে কি কান্না। আমিও স্যারের সঙ্গে খুব কাঁদছি। সেদিন জীবন দিয়ে বুঝতে পেরেছিলাম, শিক্ষক আমাদের পিতাও।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register