Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাসম্পাতে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব - ২৬)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাসম্পাতে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব - ২৬)

আমার কথা

১০১ মানুষ জন্মের একটা বড়ো আশীর্বাদ হল স্বপ্ন দেখতে পারা। যদিও বিজ্ঞানীরা বলেন - ঘুম গভীর হলে আর স্বপ্ন দেখি না ; তবু সেই স্বপ্ন দেখার আগ্রহে কতো লোক ঘুমাতে যায় । আর দিবা স্বপ্নও দেখে কেউ কেউ । কিন্তু রীতি মতো জেগে জেগে স্বপ্ন দেখতে গেলে কবি হতে হয়। কবি মানে ক্রান্তদর্শী । ক্রান্তি মানে বিপ্লব। কবি বিপ্লবের গান গায় । মানুষ খুনের বিপ্লব সে কবির নয়। মানুষকে জাগানোর বিপ্লব। দলতন্ত্র, দলদাসত্ব, গোষ্ঠীদাসত্ব থেকে বেরিয়ে কবির হাজার বছর ধরে পথ হাঁটা। পথ হাঁটা আর জীবনের সফেন সমুদ্র জলে কবির অবগাহন স্নান। আর চোখ বুজে দারুচিনি দ্বীপটিকে মনে মনে নিশ্চিত করে দেখা। কবিতা তার সেই মায়াকাজল । আজকের সমস্ত নিপীড়ন উপেক্ষা করে একটি চমৎকার ভোরের জন্যে অপেক্ষা করে একটি দৃষ্টিহীন বৃদ্ধ। জানে ভোর দেখা তার হবে না। দৃষ্টি বঞ্চিত সে। তবু ভোর হলে কেউ তো দেখবে । সেই বিশ্বাসে প্রার্থনায় থাকা। ১০২ বধিরকে শোনানোর জন্যে উচ্চকণ্ঠের প্রয়োজন আমার ক্ষেত্রে সেই কণ্ঠ যেন যুক্তিশাণিত হয় কারো মানবিক সম্ভ্রম লঙ্ঘন না করি‌। কথা আর আচরণে যেন বিজ্ঞানবোধ অটুট থাকে ১০৩ যেন বলছেন " কি, কেমন দিলাম?" সাম্প্রদায়িকতা ব্রিটিশ আমলেও ছিল। খুব বেশি করে ছিল। ইউরোপীয় অধ্যাপকদের থেকে দেশি অধ্যাপকেরা কম বেতন পাবেন - এমন উদ্ভট একটা ভাবনা ভাবতে পেরেছিলেন ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ । জগদীশ চন্দ্র প্রতিবাদ করেছিলেন। তাঁর গুণ বা গ্রহণযোগ্যতা তো কার চাইতে কম ছিল না। তাঁর সেই নৈতিক লড়াইতে সাথ দিয়ে গেছেন এক অবলা । যারা সৌভাগ্যবান, তাঁরা জীবনে এ ধরণের অবলাদের পেয়ে থাকেন। জগদীশ পেয়েছিলেন। আরো এক মহিলার প্রীতি স্নেহে নন্দিত ছিলেন তিনি। আইরিশ দুহিতা তিনি । জগদীশ ফিজিক্সের লোক। বেতার নিয়ে গবেষণা করেন । কিন্ত রেডিও সেট এর চাইতে অনেক ব্যাপক জিনিস নিয়ে ভাবনাক্ষেত্র ছিল তাঁর । নিজের অরিজিনালিটির উপর পুরোমাত্রায় বিশ্বাস ছিল বলেই বেতার নিয়ে স্বীকৃতি না পেয়েও দমেন নি এই মহাভাগ। ক্রেসকোগ্রাফ যন্ত্রের সাহায্যে উদ্ভিদের সংবেদনার কথা জানালেন। বাঙালি কবিটি তাঁকে চিনতে ভোলেন নি। বললেন - আমাদের এই নবীন সাধনা শব সাধনার বাড়া। এখন 5G সূত্রে আবার জগদীশচন্দ্রের নামটি উঠে আসছে। জিনিয়াসরা বেঁচে থাকেন পুরস্কারের দ্বারা নয়, সরকারি সম্মান মাল্যে নয়, স্তাবকের চাটুকারিতায় নয় । জিনিয়াসরা বেঁচে থাকেন স্বকীয় মহত্বে। অন্যের দয়ায় নয়। সেই কবিতাটা খুব মনে পড়ে : "তপের প্রভাবে বাঙালি সাধক জড়ের পেয়েছে সাড়া ..." জগদীশচন্দ্র বসুর বিজ্ঞান গবেষণা আধুনিকতম মোবাইল প্রযুক্তিকে দিশা দেখাচ্ছে, ভাবতে ভালো লাগছে। কবিরা বিজ্ঞানীকে চেনে, বিজ্ঞানী কবিকে। তাঁর লেখা একটি গদ্যের সাথে পরিচয় হয়েছিল প্রাক কৈশোরেই । "অব্যক্ত" বইটি আমরা পরে বাড়িতে সংগ্রহ করতে পেরেছি। নদী তুমি কোথা হইতে আসিয়াছ? মহাদেবের জটার শিখর হইতে ..." আমায় আজো দোলা দেয়। তত্ত্বীয় বিজ্ঞান আর কবিতা কোথাও অভিন্ন অদ্বয় হয়ে দেখা দেয় । ১০৪ বিশু পাগলের কথা খুব মনে পড়ছে । বিশুকে গান গাইতে শুনি রক্তকরবী নাটকে । সে বিস্তর পড়াশুনা করে প্রশাসনের গোয়েন্দা বিভাগে বড়ো পোস্টে যোগ দিয়েছিল। কিন্তু তার ভেতরের কবি সত্বা তাকে সেই আরামের চাকরিতে টিকতে দেয় নি। কবির কাছে আরামের মানে অন্য রকম। কবি বলবেন - তোমার কাছে আরাম পেয়ে পেলেম শুধু লজ্জা ...। তাই বিশুকে সর্দারি ব্যবস্থাটার বিরুদ্ধে লড়াইতে নামতে হয় । কবিরা সর্দারি ব্যবস্থার উচ্ছিষ্টভোজী হয়ে আরাম পায় না। সেটা তার কাছে সাংঘাতিক অবমাননাকর। কবির হাতে যে চিরকালের অভয়শঙ্খ ।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register