Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাসম্পাতে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব - ২২)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাসম্পাতে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব - ২২)

আমার কথা 

৮৫ যে শোষণের যাঁতাকল থেকে মুক্তি চাইবে, লড়াইয়ের পথে তাকে আসতেই হবে। লড়াই পাশ কাটিয়ে শ্রমজীবীর মুক্তি নেই। সেই সংগ্রামী চেতনার সর্বনাশ ঘটায় মদ। বিচার বোধকে গুলিয়ে দেয় মদ। তাই যথার্থ শ্রমিক নেতারা মজুরি বৃদ্ধির লড়াইকে মোক্ষ ভাবতে লজ্জা পায়। নাকের বদলে নরুণ পেয়ে সে টাক ডুমা ডুম করে না। ৮৬ সীতার সোনার হরিণের দাবি ছিল। কিন্তু রামচন্দ্র নিজেও কি খুব পরিষ্কার ভাবে উপলব্ধি করতেন যে সোনার হরিণ বলে কিছু হয় না, হতে পারে না? যদি সোনার হরিণ প্রসঙ্গে রামচন্দ্রের ধারণা পরিষ্কার থাকত, তা হলে নেহাত মিথ্যে একটা জিনিস তিনি ধরতেই বা গেলেন কেন? সীতার সাথে রামের দাম্পত্য সম্পর্কের আসল চরিত্র নিয়ে আমার প্রশ্ন উঠে যায়। ৮৭ সেই কবিতাটি ভারি মনে পড়ছে। ছোটো ছোটো দুটি ছেলে। গরিব মা বাপের সন্তান। ভালো নয়, একেবারেই ধান হয় নি। তবু কোনো মতে তাদের বাবা দুখানি ছিটের জামা কিনে এনেছেন। মধু ছোট। বিধু সামান্য বড়। কিন্তু দুজনেই তো আসলে ছোটো।আসন্ন শারদোৎসবে ওরা আনন্দের স্বপ্ন দেখছে। মায়ের কাছে বাচ্চারা আবদার করল বাবা কি পোশাক কিনে এনেছে, তা দেখাতে। সামান্য দুটি ছিটের জামা মা দেখালে মধু খেপে উঠল। কেঁদে বললো রায়বাবুদের গুপি, পেয়েছে জরির টুপি, ফুলকাটা সাটিনের জামা। রাগ করে ঘোষণা করলো ওই জিনিস তারও চাই। মা বললেন - গরিব যে তোমাদের বাপ। এবার হয় নি ধান, কত গেছে লোকসান, পেয়েছেন কত মনস্তাপ। মধু বুঝল না। বুঝতে চাইল না। গিয়ে দাঁড়াল রায়বাবুদের দোরে। নিজেকে রায়বাবুদের দয়ার ভিখারি প্রতিপন্ন করতে শিশুটির আত্মসম্মানে বাধল না। কিন্তু রায় বাবু কি করলেন? নিজের বাড়ির বাচ্চাকে নির্দেশ দিলেন মূল্যবান পোশাক দরিদ্রের সন্তানকে দান করতে। বাচ্চা গুরুজনের নির্দেশ পালন করল। মধু নিজের বাপ মায়ের সম্মান ধুলোয় লুটিয়ে তা অম্লানবদনে গ্রহণ করল। এরপর আরো সাংঘাতিক। মধু সবাইকে নিজের ভিক্ষালব্ধ জমকালো পোশাক দেখিয়ে নিজের সহোদর দাদা বিধুর অতি সাধারণ পোশাককে হেয় করে বেড়াতে লাগল। মধুকে পোশাক ভিক্ষা দিয়ে যে রায়বাবু প্রকৃত ভাল কাজ করেন নি, এমন একটা বোধ আমার মধ্যে চারিয়ে দেন কবি। বাচ্চা ছেলেকে ভিক্ষা দেব, না, কি করব, এ নিয়ে সংবেদনশীল মানুষের মনে ঝড় তোলেন কবি। রায়বাবু মোটেও ঠিক কাজ করেন নি। মধুকে তিনি নষ্ট হয়ে যেতে দিলেন। সেই বোধের কথা স্মরণ করান কবি, যে বোধ বলে সম্মানবোধ আর মর্যাদাবোধই হল মানুষের সেরা সম্পদ। ৮৮ আমার বাড়ির কাছেই থাকতেন তুষার রায়। কবি তুষার । আমার মাস্টার মশায় কানাই কর্মকার তাঁকে চিনতেন। আমার পিতৃ বন্ধু এই মাস্টার মশায় বলেছিলেন তুষার বেলা করে উঠতেন আর একেবারে কবি জীবন যাপন করতেন । নেশা করার জন্যে বয়সে অনুজ আমার মাস্টার মশায়ের কাছে পয়সা চেয়েছিলেন একদা। অত্যন্ত ভদ্র ভাবে চেয়েছিলেন তুষার । ততদিনে বাংলা কবিতার সিরিয়াস পাঠকের কাছে তুষার পরিচিত নাম। মাস্টার মশায় "কবিজীবন" বলতে এলোমেলো ছন্নছাড়া জীবনের কথা বলতে চেয়েছেন । আর কবির নেশার কথা । কবি হলে অনেকেই নেশা করেন। তাদের সকলেই মাইকেল মধুসূদন দত্ত বা শক্তি চট্টোপাধ্যায় নন। তুষার রায় রীতি মতো নেশা করতেন। কিন্তু কবিতার হাতটি ছিল তাঁর বেশ। অনেকে মদ গেলেন, কিন্তু কবিতা তেমন লেখেন না। যাঁরা বেড়ে লেখেন , ভালো লেখেন, তাঁদের মদ গেলা নিয়ে আমার কোন বক্তব্য নাই।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register