Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে শিল্পী নাজনীন (পর্ব - ৩২)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে শিল্পী নাজনীন (পর্ব - ৩২)

বেনু মশলাঘর

রিফাতের কণ্ঠটা কানে বাজল অনেকক্ষণ। রাতে ঠিক মতো ঘুম হয়নি কাল। ঘুম থেকে উঠতে তাই দেরি হয়েছিল আজ। কোনোমতে নাকে-মুখে নাস্তাটা চালান করে তৈরি হচ্ছিল কণা। ইন্টার্নির সময়টাতে ভীষণ চাপ পড়েছে, দম ফেলানোর ফুরসত মিলছে না একদম। পড়াশোনার চাপ আর ওয়ার্ড ডিউটি সামলে নিজের জন্য সময় বের করাই মুশকিল এখন। রিফাতের ফোনে খানিকটা অবাকই হল কণা। আজ ক্লাস নেই রিফাতের। ক্লাস না থাকলে এত তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠে না সে। আর রাতেই কথা হয়েছে কণার সঙ্গে। কণার ক্লাস আছে সকালে, জানে রিফাত। ফোন রিসিভ করতেই রিফাতের আহ্লাদি কণ্ঠ, শোনো না! বলো! -নাস্তা মুখে রেখেই বলল কণা। আজ ক্লাস ট্লাস বাদ দাও। চলো কোথাও ঘুরে আসি। সারাদিন ঘুরব। সন্ধ্যায় ফিরব! পাগল! ক্লাস না করলে চলবে? পাস করব কী করে তাহলে? ওসব জানি না। পাস করতে হবে না তোমার। ম‍্যানেজ করো, প্লিজ! কিন্তু কেন বলো তো! রাতেও তো মাথা ঠিকঠাক ছিল। হঠাৎ কী হল এই সাতসকালে? জানি না। কিছু ভালো লাগছে না। তোমাকে ভীষণ দেখতে ইচ্ছে করছে। সময় বের করো তুমি, প্লিজ! কী যে পাগলামি করো! আচ্ছা দেখছি কী করা যায়! দেখছি না, তুমি সময় বের করো। সারাদিন একসঙ্গে থাকব আজ, আর কিছু জানি না। তুমি পাগল! হু। তোমার জন্য! আলতো করে কথাটা বলেই ফোন রেখে দিল কণা। ভালোলাগার পলকা বাতাসে সকালটা ভরে উঠল হঠাৎ। উড়িয়ে নিল কণার নির্ঘুম রাতের সবটুকু অবসাদ। রিফাতের শেষ কথার মিষ্টি সুরের রেশটুকু কানে অনেকক্ষণ বাজল টুংটাং। ক্লাসে বসেও মন বসাতে পারল না কিছুতেই। স‍্যারের লেকচার দুর্বোধ‍্য ভাষা হয়ে উড়ল হাওয়ায়, চারপাশে। হাসপাতালের ডিউটি কেয়ার সঙ্গে পাল্টে নিল ক্লাসে বসেই। হায়দার স‍্যারের ক্লাসে এমনিতেও তার মন বসে না তেমন। আজ একেবারেই মনোযোগ দিতে পারল নে সে। কেয়া আর তাসনূভার সঙ্গে ফিসফাস করে কাটাল পুরো সময়টা। ক্লাস শেষে প্রায় উড়ে এলো সে হোস্টেলে। রিফাতকে ফোন করে বের হতে বলে নিজেও তৈরি হয়ে নিল ঝটপট। গুনগুন করে গানের সুর ভাঁজতে ভাঁজতে আয়নায় দেখল নিজেকে। কাজল পরল চোখে। বড় একটা টিপ দিল কপালে। হালকা লিপস্টিক লাগাল ঠোঁটে। আরেকবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আয়নায় দেখল নিজেকে। হাসল মুখ টিপে। ধীরগলায় নিজেকে বলল, তুমি মোটেই সুন্দরী নও কণা! মোটামুটি। চলনসই। তবে তোমার চোখদুটোয় খুব মায়া! আয়নায় তাকিয়ে হঠাৎই ভাবনাটা মাথায় এলো কণার। দেখতে সে সাদামাটা। আহামরি সুন্দর নয়। গায়ের রঙও চাপা। আদর করে আপনজনেরা বলে শ‍্যাম। আসলে কালো। তার নিজের ভেতর সেটা নিয়ে কোনো হীনমন্যতা নেই। আহামরি সুন্দর হওয়ার খায়েশও নেই। তাহলে রিফাতের সঙ্গে দেখা করার সময় কেন সে আলগা সুন্দরী সাজার চেষ্টা করতে যাবে? ভাবতেই বেসিনে গিয়ে মুখ ধুয়ে নিল কণা। ডলে ডলে লিপস্টিক আর কাজল ধুয়ে ফেলল। টিপ ফেলে দিল। ঝটপট তৈরি হয়ে বেরিয়ে পড়ল আবার। রিফাত ততক্ষণে গেটে এসে গেছে। ফোন দিচ্ছে বারবার। কী ব‍্যাপার বলো তো? এমন পাগলামি শুরু করলে কেন আজ হঠাৎ? মাঝে মাঝে পাগলামি করতে হয়। জীবনটা তো শুধু তোমার মেডিকেলের ক্লাস আর রোগ-শোক নয়! জীবনে হাসি আছে, কান্না আছে, প্রেম আছে, বিরহ আছে, অবসাদ আছে, আলস‍্য আছে। জীবনকে জীবনের মতো করে উপভোগ করতে হয়, উদযাপন করতে হয়। নইলে তা আর জীবন কিসে! তোমার মতো সারাক্ষণ ডাক্তার ভাব ধরে থাকলে জীবন তো হয়ে যাবে হাসপাতালের বেডে শোওয়া ক‍্যান্সার রোগী! এই! আমি ডাক্তার ভাব ধরে থাকি সারাক্ষণ? -চোখ পাকিয়ে বলল কণা। কণ্ঠে কৃত্রিম উষ্মা। দু হাত ওপরে তুলে আত্মসমর্পণের ভঙ্গি করল রিফাত। মুখে বলল, শান্তি! শান্তি! ওঁমম শান্তি। ঝগড়া বন্ধ! হেসে ফেলল কণা। কোথায় যাবে বলো। -বলল সে। যেদিকে দুচোখ যায় যাব। আজ সারাদিনের জন্য হারিয়ে যাব দুজন। কোনো সমস্যা? কোনো সমস্যা নাই। সমস্যা কিসের আবার! সেই তো! কিসের সমস্যা! -বলেই ইশারায় সামনে থাকা রিকশাটাকে ডাকল রিফাত। রিকশাঅলা রিকশা নিয়ে কাছে এসে দাঁড়াতেই লাফ দিয়ে উঠে বসল। হাত বাড়িয়ে কণার হাত ধরে টেনে তুলল তাকেও। রিক্সাঅলাকে বলল, মামা, একঘণ্টায় যতদূর যেতে পারেন যান। আমরা ঠিক একঘণ্টা পর নামব। বুঝেছেন? ঘাড় নাড়িয়ে বুঝেছে উত্তর দিল রিকশাঅলা। প‍্যাডেল ঘোরাল দ্রুত। এই বয়সের ছেলে-মেয়েদের পাগলামির সঙ্গে পরিচয় আছে তার। তাই কথা বাড়াল না অকারণ। লিপস্টিক আর কাজল পরে আবার মুছেছ, না? -আলতো হাতে কণার হাত ধরে মৃদুস্বরে বলল রিফাত। চমকে তাকাল কণা। মানে? -অবাক গলায় প্রশ্ন করল সে। লিপস্টিক দিয়েছিলে ঠোঁটে, চোখে কাজল। আবার মুছে ফেলেছ কেন তাহলে? তোমাকে কে বলল এসব? কেউ বলেনি। দেখেই বুঝেছি। কেন মুছেছ? মুছবে যদি তাহলে পরলে কেন? এমনিই। তোমার কাছে আসার সময় এসব কৃত্রিমতায় নিজেকে সাজাতে লজ্জা লাগছিল। মৃদু হাসল রিফাত। তার এই হাসিটা খুব প্রিয় কণার। শব্দ করে খুব কম হাসে রিফাত। হাসলে তাকে অদ্ভুত সুন্দর দেখায়। শিশুর মতো। মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকল কণা। তার হাতটা নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে রিফাত বলল, কখনোই কৃত্রিমতায় সাজার প্রয়োজন নাই তোমার। তুমি স্বাভাবিকতায়ই অনন্য। গলা ছেড়ে হো হো হাসল কণা। হাসতে হাসতে বলল, থাক থাক! আর বলো না, বদহজম হবে! আবার হাসল রিফাত। গান ধরল গলা ছেড়ে, আজ মন চেয়েছে আমি হারিয়ে যাব...
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register