সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে উজ্জ্বল কুমার মল্লিক (পর্ব – ২২)

শহরতলির ইতিকথা

        রাজীবের বন্ধুরা আগ্রহ  প্রকাশ  করায়,কনের  সম্পর্কীয় মামা,সবাইকে
 সিগারেট  দিয়ে বললো,  “চলো,নদীর  ধার  দিয়ে বেড়াতে,বেড়াতে সব বলবো; এখানে,বয়স্করা রয়েছেন;বেড়ানোও হবে,আবার  পুরোনো কথাও সবিস্তারে বলা হবে।বিয়ে তো প্রায় শেষের মুখে,আর খাওয়া-দাওয়াও তোমরা তো একটু পড়ে করবে, কারণ,এই মাত্র  টিফিন খেয়েছো।এখন কনে যাত্রীদের  পাত পড়েছে। তোমার  জামাই-দা,আগে কনে যাত্রীদের  খাইয়ে দেবার  কথা বলেছে;তোমরা পড়ে খাবে।ঐ মেজ-মেয়ের  বরযাত্রীরা হলে,তো হুল-স্থুল বাধিয়ে দিত,কী!অতথি,বরযাত্রী সম্মানীয়,তাদের না খাইয়ে,কনে যাত্রীদের  আগে ভোজন! যেমন বামুনেরা শ্রাদ্ধ  বাড়ি, অনুষ্ঠান  বাড়িতে  আগে ভোজনের দাবিদার  আর কী;যাকগে,এখন চল।”
      বাজারের পথ ধরে,ওরা সবাই  কুন্তী নদীর ধারে নেমে এসেছে; সামনে রয়েছে বাঁধানো ঘাট;ঐ ঘাটে বসে,কনের মামা,সিগারেটে সুখটান দিয়ে,এবার বলতে আরম্ভ  করলো——
    ” বর্দ্ধমানের বরযাত্রীদের  দল তো সন্ধের  আগেই  এসে গেছে;এই  রকমই  বৈশাখ  মাস ,ফুরফুরে হাওয়া বইছে;ওরা সবাই  টিফিন তো গো-গ্রাসে খেলই,আবার   মিষ্টি,সিঙারা ও ফল,বেশ  কিছু নষ্ট  করলো।ওদের বাস রাখা আছে, ঐ হেলথ্-সেন্টারের মাঠে।
জামাই-দার ,মানে কনের বাবার  ছোট ভাই’র  তো চালের ব্যবসা; এই  যে গো-ডাউনে,বরাসন  করা হয়েছে,ঐ গো-ডাউনে,ওদেরও বসার ব্যবস্থা হয়েছিল, আর বিয়ের অনুষ্ঠানও ঐ আজকের মতই  হয়েছিল।”
     “জামাই -দা,একই রকম ডান পা ছড়িয়ে  বামুনের কথামত ঐ সব অং, বং বলে চলেছে। বামুন ঠাকুর, বরকে মণ্ডপে আনবার  কথা বললে,মেজ-দা, মানে রাজীবের বাবার  সহকর্মী,বরাসনে গিয়ে বরকর্তাকে ,বর নিয়ে যাবার  অনুমতি চাইলে,সবাই  বলে,’আমরাও  যাবো;’ মেজদা তো বললো,’নিশ্চয় আসবেন,অনুমতি নেওয়ার অর্থ তো আপনাদের  সম্মতি চাওয়া;’ বর তো সদল-বলে বিয়ের মণ্ডবে এসে বিয়ের পিঁড়িতে বসলো।  চারপাশে রয়েছে  বদ্-যাত্রীর দল;জামাই-দা,যেই বামুনের কথামত, বরের  ডান পায়ের মালাই-চাকিতে আঙুল  দিয়ে বামুনের  কথামত  অং বং বলতে শুরু করেছে, আর অমনি  চারপাশের  বরযাত্রীদের  মধ্যে  কেউ,কেউ জামাই-দাকে চিমটি কাটতে আরম্ভ  করে;জামাই-দা অনেকক্ষণ সহ্য করার  পর,মেজদাকে ডেকে সব বলতেই, মেজদা,  বর- কর্তাকে সাবধান  করে দেন;এরকম অসভ্যতা কিন্ত  এখানকার  মানুষ সহ্য করবে না,আপনি ওদের বারণ করুন। জানিনা, বর-কর্তা কী বলেছিলেন ,বেশ  থমথমে ভাব,ওদের মধ্যে।  বিয়ের সিঁদুর দান,সপ্তপদী হয়ে গেল। মেজ-ভাগনি ও নতুন জামাইকে ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।জামাই, তার বন্ধুদের  ঐ সব নোংরামি বন্ধ  করার  কথা বলেছে, তবু,
কয়লার  তো কালো রং যায় না।”
    “বরযাত্রীদের  খাবার  ব্যবস্থা হয়েছে;আগে,বরযাত্রীদের  খাওয়ার  ব্যবস্থা,তারপর হবে কনে-যাত্রীদের, কারণ,অতিথিদের  সেবা আগে হবে,তা হোক;কনে পক্ষ মোটেই  চিন্তিত  নয়,দায় তো কনে-পক্ষের।
ঐ পাশের গো-ডাউনে,খাওয়ার  ব্যবস্থা;প্রথমে ভালোই  চলছিলো,ওরা খাবার  কেবল নষ্টই করে চলেছে,জানলা দিয়ে রসগোল্লা ,চমচম ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলে পাহাড় সমান করে তুলেছে। বর-কর্তাও  নীরব দর্শকের  ভূমিকায়; পরিবেশনকারিরা সিদ্ধান্ত  নিল ,সবাই  চুপ থাকো;ব্যবস্থা নিতেই  হবে।যাক্ বদ্-যাত্রীদের খাওয়ানো শেষ হয়েছে।কনে যাত্রীদের, খাওয়ার  পর;বদ্-যাত্রীদের অন্য যায়গায় শোয়ার ব্যবস্থা হয়েছে; ভোরের দিকে বাস ছাড়বে। বর-কনের ঘর, বার থেকে বন্ধ  করে দেওয়া হয়েছ।  বরকর্তাও বরের ঘনিষ্ট  কয়েকজনের  জন্য আলাদা শোয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। বিয়ে বাড়ির  সবার  খাওয়া হয়ে যাবার  পর, আলো নিভিয়ে, অন্ধকারে বরযাত্রীদের  ঘরে চললো বেদম লাঠির মার,মার তো মার—চালের গো-ডাউনে কাজ করা মুটেদের  হাতের  এলোপাতাড়ি চর,ঘুসি। বাবা-গো,মা-গো বলে,কয়েকজন  ছুটে পালাতে গিয়ে, দিয়েছে নদীতে ঝাঁপ, কেউ ,কেউ আবার  ছুটেছে  জিটিরোড  ধরে,ধরা পড়েছে গ্রাম-রক্ষীবাহিনীর হাতে,সেখানেও খেয়েছে মার।  সে এক অবিস্মরণীয় দৃশ্য–আজও লোকের  মুখে মুখে  ফেরে, সেদিনের  ঘটনা।
পরের  দিন, বর-কনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে,সঙ্গে বাড়ির  কাজের লোক গেছে। বৌভাতের  দিন, আমাদের  এখান থেকে কেউই  যায়নি।”
   সময় কোথা থেকে চলে গেছে কেউ  জানে না। রাজীবদের বরযাত্রীদের  প্রশংসায় সবাই  পঞ্চমুখ;যথারীতি খাওয়া-দাওয়ার পর রাজীবের  দল নিজেদের  বাড়ি ফিরেছে;আসবার  সময়,কনে-পক্ষের  লোকজনকে আমন্ত্রণ  জানাতে ভোলেনি।কেবল রাজীবের  নতুন বৌদির বরের দেখা মেলেনি;তিনি ,পারতপক্ষে এ অঞ্চলে পদার্পণ করেন না।
(চলবে)
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *