গল্পের জোনাকি-তে উজ্জ্বল দাস পর্ব – ২

ঊন পঞ্চান্ন

হু হু হু হু করে ধুনোর ধোঁয়া বেড়ে চলেছে। চার দিকে মুহুর মুহু উলুধ্বনি দিচ্ছে সকলে। চ্যাংকা গুলো সজোরে কাঁপা বুড়িকে বাতাস করে যাচ্ছে। একজন একটা বাজখাঁই আওয়াজের কাঁসর দমাদ্দম পিটিয়ে চলেছে প্রাণপণে। আর বুড়ি ততক্ষণে ভরে পড়েছে। সঙ্গে গোঙানি। সে কি নাকের আর গলার আওয়াজ। নাসিকা গর্জন যেন কামানের গোলার মতো বেরোচ্ছে। হুর র র র র র……ফুর র র র র দুনিয়া কাঁপানো চিরবিরোনি আওয়াজ। পুরোনো কড়ি বড়গার বাড়ি। নিচু নিচু খড়খড়ির জানালা। কেঁপে কেঁপে উঠছে সব, বাপরে। সব কটাই আলতো করে ফাঁক করা আছে। যাতে কেউ ধোঁয়ায় কষ্ট পেলে জানলা দিয়েই তাকে তৎক্ষণাৎ সটাং বাইরে ফেলে দেওয়া যায়।

হেঁ হেঁ এ যে সে বুড়ি নয় স্বয়ং কাঁপা বুড়ি বলে কথা।

অবিনাশ সিনহা তো আনন্দে আত্মহারা। মনে মনে ভাবে লে হালুয়া এতো টাও তো ভাবেনি। এ যেন পুরো চেঙ্গিজ খাঁ। আপিসের বিকাশ বাবু ভালো একটা পাত্তা দিয়েছে বটে। এবার একে একে সবাই তাদের সমস্যা বলবে, আর কাঁপা বুড়িও মন্ত্রপুত মাদুলি, মন্ত্রপুত টোটকা দিয়ে সব সমাধান করবে। আর যদি কাউকে কিছু নিয়ে আসতে বলে থাকে তো সেগুলো দিলেই বুড়িমা মন্ত্র পড়ে দেবে। সেগুলো যেভাবে কাজে লাগাতে বলা হবে সে ভাবে ব্যবহার করলেই ব্যাস, কেল্লাফতে।

“ও টুনির মা তোমার টুনি কথা শোনে না
যার তার লগে ডেটিং করে আমায় চেনে না”

ওমা একিরে বাবা। ধর্মের স্থানে এসব আবার কি। অবিনাশ বাবু তাকিয়ে দেখে এক ছোঁড়ার মোবাইলে বেজে উঠেছে হঠাৎ। আর বুড়িমা চোখ বড় বড় করে যেই তাকিয়েছে ছোঁড়া তো ভয়েই মরে। তবে কথা গুলো সবই শোনা গেল সেই মোবাইলের স্পিকারে।

–হ, হল ল।

–বলতাসি আপনেগো কবে আইবেন।

–কেডা কয় কেডা।

–বেহালা থিকা হালায় দুকানদার কইতাসি। ওই ধুপ, ধুনা আর মিষ্টির লোইঘা কিসু বাকি আসিল।

–অস্যা। অহন সেম্বারে আসি। কাল বেহালায় সেম্বার আসে। যহন জামু, কথা কইমু।

বলে ফোন টাকে কেটে দিলো। আবার বাজখাঁই কাঁসর টা নিয়ে উন্মাদের মতো পেটাতে শুরু করলো। অবিনাশ বাবু বুঝলো এই চ্যাংকা ছোঁড়াটা হলো আসলে বিকাশ বাবুর মতো পারচেজ ম্যানেজার। উফ্ফ! কি ডেডিকেশান। তাই এর সঙ্গে বিকাশ বাবুর আলাপ। তবেই না বিকাশ বাবু এখানকার পাতা দিতে পারেন।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *