ধারাবাহিক প্রবন্ধে তপশ্রী পাল (পর্ব – ৩২)

আলাপ


আলাপের পাতায় পাতায় এতোদিন তুলে ধরেছি বিভিন্ন ঘরানার কথা, শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের নানা খুঁটিনাটি এবং বিভিন্ন ঘরানার বিখ্যাত শিল্পীদের কথা। সঙ্গে ছিলো সঙ্গীত শ্রবণ ও দর্শনের মধ্য দিয়ে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত জগতকে আমি যে ভাবে অনুভব করেছি, অভিজ্ঞতা লাভ করেছি, সঙ্গীত শিক্ষা পেয়েছি সে সব কথাও। আজ সেনিয়া বাঙ্গাশ ঘরানার বিখ্যাততম শিল্পী উস্তাদ আমজাদ আলি খানের কথা বলতে গিয়ে এ কথা না বলে পারছি না যে, সঙ্গীত জগতে তিনিই ছিলেন আমার প্রথম ও একমাত্র ক্রাশ, যে মুগ্ধতা আজও সমানভাবে বিদ্যমান। আমজাদ আলি খানের গল্প প্রথম শুনি আমার ছোটপিসির কাছে, যাকে আমি লালমণি ডাকতাম। লালমণি কলকাতায় লেডিস হোস্টেলে থাকতেন। পেশায় ছিলেন শিক্ষিকা। বিবাহ করেননি তখনো। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রতি অসীম ভালোবাসা থেকে মধ্যবয়সে শখে সেতার শিখতে শুরু করেন গুরু শ্যাম গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে। শ্যাম গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রায় গোটা পরিবার যন্ত্রসঙ্গীতের ও শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। হিরু গাঙ্গুলী, শ্যাম গাঙ্গুলি এবং তাঁর কন্যা শ্রী গাঙ্গুলী সবাই কলকাতা সঙ্গীত মহলে অতি পরিচিত শিল্পী ছিলেন। তাঁদের শ্যামবাজারের বাড়িতে প্রায়ই বসতো সঙ্গীতের আসর। সত্তরের দশকের শুরুতে তেমনই এক আসরে পিসি প্রথম দেখেন আমজাদ আলি খানকে। তখন তাঁর বয়স মাত্র একুশ! সেবার আসানসোলে গিয়ে পিসি সব ভুলে শুধু আমজাদের গল্প করেছিলেন আর আমি শৈশব থেকেই বড়োদের গল্প গিলতে ওস্তাদ। তাই হাঁ করে বসে সেই সব গল্প শুনতাম।
পিসি বলেছিলেন “সাদা ধবধবে চুড়িদার পাঞ্জাবী পরণে ছেলেটির! একমাথা এলোমেলো চুল শুধু কপালে এসে পড়ছে। একহাতে অবাধ্য চুল সরিয়ে মিষ্টি হেসে নিজের পরিচয় দিয়ে অত্যন্ত বিনীত ভাবে সবাইকে সম্বোধন করে হাতের সরোদটি সযত্নে তুলে বাজনা শুরু করে ছেলেটি। আমরা তার আগে কোনদিন দেখিনি ছেলেটিকে। শুনলাম দিল্লী থেকে এসেছে! ওর পরে শ্রী গাঙ্গুলী বাজাবেন, তারপর মাস্টারমশাই। তাই আমরা অধৈর্য হয়ে ভাবছি কতক্ষণে ওর বাজনা শেষ হয়! কিন্তু ইমনের প্রথম নিষাদ লাগতেই আমরা চমকে উঠলাম! কী ওজন সে আওয়াজে! তারপর প্রায় একঘন্টা সবাই মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনে গেলাম আর অবাক হয়ে ভাবছি এই বাচ্চা ছেলেটা বাজাচ্ছে এই বাজনা! কী তৈয়ারী! কী অসাধারণ রাগ বিস্তার! রাগদারী! অসাধারণ তানকারী, লয়কারী এবং অতি দ্রুত ঝালা যেন সুরের ঝড় বইয়ে দিলো! বাজনা শেষে গোটা হল, মানে সেই ঘরোয়া আসরের সব শ্রোতা উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দিতে শুরু করলো! সে হাততালি আর থামে না! আমি এগিয়ে গিয়ে বললাম ‘অসাধারণ বাজালেন, আপনার নাম?’ বললো ‘আমজাদ। ম্যায় কলকত্তা আতা রহতা হুঁ, ফির মুলাকাত হোগী! আপ গাঙ্গুলী সাব কী শাগির্দ হ্যায়?’ বলেই আমাকে ধপ করে প্রনাম করলো! আমি তো লজ্জায় মরে যাই! কী কী বিনয়!”
আমজাদ আলি তখন সবে কলকাতার সঙ্গীতমহলে পরিচিতি লাভ করছেন। তখন এ কথা প্রচলিত ছিলো যে যতই সাধনা করো, যতোই ভালো সঙ্গীত পরিবেশন করো, কলকাতার শ্রোতাকে যতক্ষণ খুশী না করতে পারবে ততক্ষণ সিদ্ধিলাভ হবে না। এমন সঙ্গীত বোদ্ধা শ্রোতা গোটা ভারতে নেই! তাই সব বিখ্যাত শিল্পীই চাইতেন কলকাতায় অন্তত একবার সঙ্গীত পরিবেশন করতে। বিখ্যাত সঙ্গীত সম্মেলনগুলি তখন অনুষ্ঠিত হতো কলকাতায় শীতকালে ডোভার লেন, উত্তরপাড়া, অল বেঙ্গল মিউসিক কনফারেন্স আর তা ভরে থাকতো বিখ্যাত শিল্পীদের গান বাজনায়।
এবার বলে নেওয়া যাক প্রদীপ জ্বালানোর আগে সলতে পাকানোর ইতিহাস। ১৯৪৫ সালে আমজাদের জন্ম হয়। পিতা সেনিয়া বাঙ্গাশ ঘরানার সরোদিয়া উস্তাদ হাফিজ আলি খান তখন গোয়ালিয়রের সভাবাদক এবং গোয়ালিয়রনিবাসী। যে কথা আগেই বলেছি, এই সেনিয়া বাঙ্গাশ ঘরানার আদি পুরুষ গুলাম বন্দেগী খান আফগানিস্থান থেকে রবাব নিয়ে আসেন এ দেশে এবং তাঁর পুত্র গুলাম আলি খান রবাব থেকে সরোদের জন্ম দেন বলে কথিত আছে। এই বংশেরই অধস্তন পঞ্চম পুরুষ উস্তাদ হাফিজ আলি খান। ওস্তাদ হাফিজ আলি সরোদে এক বিশিষ্টতা নিয়ে এসেছেন তাঁর  স্বরসংযোগ এবং বিশুদ্ধ কিন্তু অত্যন্ত মনোগ্রাহী রাগদারীর জন্য। গোয়ালিয়র ছাড়িয়ে তাঁর বাজনার নাম ছড়িয়ে পড়ে দিল্লীতে এবং এক ভক্তের ডাকে তিনি দিল্লীতে এসে বসবাস শুরু করেন। তিনিই তাঁর ভরণপোষণের দায়িত্ব নেন। হাফিজ আলি খান বহুবার কলকাতার গুণীমহলে সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন। রাইচাঁদ বড়াল ও মন্মথ ঘোষ ছিলেন তাঁর সঙ্গীতের বিশেষ ভক্ত। তাঁর ‘স্টেজ প্রেসেন্স’ ছিলো অসাধারণ। ওস্তাদ হাফিজ আলি খানের একেবারে শেষ বয়সের সন্তান ছিলেন উস্তাদ আমজাদ আলি খান।
১৯৬০ সালে হাফিজ আলি পদ্মভূষণ পান। উপাধি গ্রহণ করতে তিনি যখন রাষ্ট্রপতি ভবনে যান, তখন সঙ্গে যান ছোট্ট আমজাদ। সেখানে তাঁদের সঙ্গে দেখা হয় জওহরলাল নেহেরু এবং ডক্টর রাজেন্দ্রপ্রসাদের। আমজাদ আলি স্মরণ করেছেন, সেখানে নাকি হাফিজ আলি তাঁদের বলেন “আমার একটা কঠিন নালিশ আছে!” তাঁরা ব্যস্ত হয়ে জানতে চান সেটি কী? তখন হাফিজ আলি গম্ভীরভাবে বলেন ‘রাগ-রাগিনীগুলি আজকাল যে নয় সে পরিবেশন করছে। রাগের বিশুদ্ধতা এসে বিশেষভাবে ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। আপনারা এ ব্যাপারে কিছু করুন!’ নেহেরু এবং রাজেন্দ্রপ্রসাদ নাকি হতভম্ব হয়ে গেছিলেন। এমন নালিশ তো তাঁরা কোনদিন পাননি!
মাত্র ছ বছর বয়সে পিতার সঙ্গে মঞ্চে সঙ্গীত পরিবেশন করতে শুরু করেন আমজাদ। ছোটবেলা থেকেই তাঁর শিক্ষা পিতার কাছে। তাঁর সঙ্গীতপ্রতিভা খুব অল্পবয়সেই বিকশিত হয় এবং তিনি নিজের বাজনায় এক বিশিষ্টতা নিয়ে আসেন। সরোদ নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং যন্ত্রটিতে আরো তার সংযোগ
করে সরোদের আওয়াজের নানা পরিবর্তন এবং তাকে আরো মনোগ্রাহী করা, নতুন রাগের উদ্ভাবন ইত্যাদি নানা কীর্তি স্থাপন করেন আমজাদ আলি খান।
আশির দশকের শুরু। পিতা হাফিজ আলির স্বাস্থ্য একেবারে ভেঙ্গে পড়েছে! আজকাল আর স্টেজে বাজাতে পারেন না তেমন। একদিন ভোরে শুনছেন আমজাদের রেওয়াজ! মন গর্বে ভরে উঠছে বংশের ষষ্ঠ পুরুষের অসাধারণ বাজনা শুনে। এমন সময় হঠাত দেখেন বাজনা থেমে গিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন আমজাদ! এ কী হলো! বেগম রাহত জাহান, আমজাদের মা কাছাকাছিই ছিলেন। তাঁকে ডাকলেন উস্তাদ! বললেন “বেটা কাঁদছে কেন বল তো! আমার মনটা বড়ো ব্যস্ত হয়ে উঠেছে!” মা আমজাদের খুব কাছের। তাঁর কাছে সব খুলে বলে সে। বেগম চোখের জল মুছে বললেন “বাজনা তো প্রেমের ব্যাথা ভোলাতে পারে না ঊস্তাদ! ও যে মোহে পড়ে গেছে এক লড়কীর!” হাফিজ আলি জিজ্ঞাসা করলেন “কে সে!” বেগম বললেন “উয়ো শাদীশুদা হ্যায়, তালাক হো গয়ী। বহোত বড়ি হ্যায় উসসে উমর মে! উসকী আপনি লড়কী ভি হ্যায়! লেকিন উয়ো আপনে বেটে পর ক্যা জাদু ডালা পতা নহি! কই সাল সে উসকে লিয়ে জান দেনে কে লিয়ে তৈয়ার হ্যায়, মগর উয়ো আমজাদ সে শাদী করনে সে ভী ইনকার করতেঁ হ্যায়! ম্যায় উসে ইয়ে জাল সে ক্যায়সে নিকালুঁ পতা নহি চলতা! বহোত দুখী হ্যায় আমজাদ!” হাফিজ আলি এরপর আমজাদকে ডেকে বললেন “দেখো বেটা ম্যায় আভি জ্যাদা দিন জিয়ুঙ্গা নহী! মরণে সে পহলে তুমহে শাদিশুদা দেখনা চাহতা হুঁ। হমলোগ তুমহারে লিয়ে লড়কী দেখি হ্যায়। তুমহে শাদী করনা হোগা।“ বাবার বৃদ্ধ বয়সের সেই অনুরোধ ফেলতে পারেননি আমজাদ। তাঁর বিয়ে হয়ে গেলো। একটি কন্যাসন্তানও হলো। কিন্তু নিজের প্রথম স্ত্রীকে কোনদিনই ভালোবাসতে পারেননি। সেই বিবাহিত মহিলার সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ রয়েই গেছিলো। তাঁর স্ত্রী তা সহ্য করতে না পারায় তাঁদের তালাক হয়ে যায়। ব্যক্তিগত জীবনে এইসময় প্রবল টানাপোড়েন। সেই বিবাহিত মহিলার সঙ্গেও যোগাযোগ বিছিন্ন করেছেন পিতার অনুরোধে! মনে কোন শান্তি পাচ্ছেন না। কিন্তু ব্যক্তিগত এই দুঃখ তাঁর বাজনায় যেন আরো গভীরতা, পূর্ণতা নিয়ে আসছিলো। কীভাবে কাঁদে দরবারীর রেখাব, কীভাবে মোচড় লাগে মিয়াঁমল্লারের দুটি নিষাদে তা যেন ফুটে বেরোত তাঁর বাজনায়। বাজনা শুনে মুগ্ধ হচ্ছেন সবাই, অথচ মনে এক অসীম শূন্যতা।   
তাঁর পিতার সঙ্গীত শিক্ষার ক্লাসে আমজাদ বাজনার সঙ্গে সঙ্গে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতও শেখানো হতো। সেখানে একদিন আমজাদ দেখলেন একটি ফুটফুটে মেয়েকে। জিজ্ঞাসা করে জানলেন ক্লাসে শিখতে আসা একটি ছেলের বোন মেয়েটি! প্রথম দর্শনেই আমজাদের ভালো লেগে গেলো ফুলের মতো মেয়েটিকে। যেন এই মেয়েটির জন্যই অপেক্ষা করছেন বহুকাল! কিন্তু কীভাবে আলাপ করবেন? মেয়েটি কি তাঁকে পছন্দ করবে? তিনি তো ইতিমধ্যেই বিবাহিত এবং এক সন্তানের পিতা! আমজাদ জানতে পারলেন মেয়েটির নাম শুভলক্ষ্মী বরুয়া। অসমীয়া হিন্দু! মেয়েটি ভারতনাট্যম নাচে! আমজাদ নিজেও তো এ নাচের ভক্ত! মেয়েটির প্রতিটি অনুষ্ঠানে ভারতের নানা প্রান্তে যেতে লাগলেন আমজাদ! অবশেষে কলকাতার এক মঞ্চে সরাসরি কথা হলো মেয়েটির সঙ্গে। তিনিও লক্ষ্য করছিলেন প্রায় প্রতিটি অনুষ্ঠানে সামনের সিটে বসে থাকে ছেলেটি। উস্তাদ হাফিজ আলির ছেলে শুনে মেয়েটি এবার বিশেষ ভাবে দেখলো ছেলেটিকে। অপূর্ব সুন্দর যুবক, অথচ চোখে এক আশ্চর্য বিষণ্ণতা! তাঁর দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে! গালদুটি লাল হয়ে উঠলো শুভলক্ষ্মীর! তাড়াতাড়ি ড্রেসিং রুমে ঢুকে গেলেন তিনি। কিন্তু ছেলেটির কথা ভুলতে পারলেন না। কেমন এক টান অনুভব করলেন ওঁর প্রতি – যেন কতোদিনের চেনা!
এরপর ছেলেটিকে দেখলেন শুভলক্ষ্মী তাঁর গুরু রুক্মিনী দেবী অরুন্ডেলের কলাক্ষেত্র নৃত্যশিক্ষার স্কুলে! সেখানেই তিনি থাকেন তখন। গুরুশিষ্য পরম্পরায় নাচ শেখেন সেখানে। ছেলেটি গুরুমার সঙ্গে কী এতো কথা বলছে? অবাক হয়ে যান শুভলক্ষ্মী! গুরুমা সেদিন তাঁকে কাছে ডেকে বললেন “তুমি কি জানো ছেলেটি কে? অসাধারণ সরোদ বাজায় ও! গোটা ভারতে আমজাদ আলি খানের নাম ছড়িয়ে পড়েছে! কিন্তু ও তোমার জন্য পাগল! খুব দুঃখী ছেলেটি। প্রথম বিয়ে ভেঙ্গে গেছে!” শুভলক্ষ্মী জানেন বাড়িতে বললে কেউ রাজী হবে না মুসলিম ছেলের সঙ্গে তাঁর বিয়ে দিতে! তিনি ভয়ে ভয়ে বললেন গুরুমাকে। অবশেষে সমাধান করলেন রুক্মিনী দেবীই। তিনি তাঁর কলাক্ষেত্রের বিখ্যাত বটগাছের নীচে সংস্কৃত শ্লোক উচ্চারণের মধ্য দিয়ে বিশেষ মতে বিয়ে দিলেন দুজনের! তিনি আমজাদকে বললেন যে এরপর তিনি অ্যারাবিক মতে শ্লোকপাঠ করতে পারেন। কিন্তু আমজাদ বললেন যে তিনি ইতিমধ্যেই রুক্মিনী দেবীর আশীর্বাদ পেয়েছেন। আর কোন মন্ত্রের প্রয়োজন নেই। ১৯৮৫ সালে শুভলক্ষ্মী শেষবারের জন্য মঞ্চে নাচেন। এরপর শুরু হয়ে তাঁদের আজীবনের সুখী দাম্পত্য এবং তারই ফসল সেনিয়া বাঙ্গাশ ঘরানার সপ্তম বংশধর আমান ও আয়ান আলি বাঙ্গাশ যারা দুজনেই পিতার শিক্ষায় অসাধারণ সরোদিয়া এবং এগিয়ে নিয়ে চলেছেন এই ঘরানাকে।   
বহুবার ওস্তাদ আমজাদ আলি খানের বাজনা শোনার সৌভাগ্য হয়েছে ডোভার লেনের মঞ্চে। আসলে একসময় ডোভার লেনের লাইফ মেম্বার ছিলাম আমি এবং যতোবার রাত্রীব্যাপী অনুষ্ঠানে যেতাম, অন্তত শেষ দিনটি মিস করতাম না, কারণ সেদিন সবশেষে মঞ্চ আলো করতেন আমজাদ আলি খান! স্টেজে রঙের কোন পাঞ্জাবীর সঙ্গে দারুণ কাশ্মীরি কাজ করা শাল, মাথায় কাঁচা পাকা চুলের রাশি কপালে এসে পড়েছে, সরোদ বাজাতে বাজাতে স্বপ্নালু দুটি চোখ তুলে তাকাতেন ওস্তাদ! মনে হতো যেন সঙ্গীতকে অন্তর থেকে উপলব্ধি না করলে অমন মগ্নতা, অমন দৃষ্টি আসে না! জাগতিক তুচ্ছতা থেকে অনেক ওপরে সেই সেই দৃষ্টি! আহা ভোলা যায় না, রাগ মালকোশ, রাগ দরবাবী, রাগ দুর্গা আর সেই সব মেডলি – যদি রাগমালার সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া রবীন্দ্রসঙ্গীত যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে – আমজাদ আলি খানের বাজ এক অন্য মিষ্টত্ব নিয়ে আসে। আলি আকবর খানও এক অসাধারণ সরোদিয়া। কিন্তু তাঁর হাতের কঠিন ঝঙ্কারের একেবারে বীপরীতে যেন আমজাদের গম্ভীর নিটোল সুমধুর আওয়াজ! স্টাইল তাঁর একেবারে নিজস্ব, যা স্বকীয়তা দিয়েছে তাঁর ঘরানাকে।   

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।